‘বাঙালিরা লোভের সঙ্গে আকাঙ্খাকে গুলিয়ে ফেলে’, অতীতের স্মৃতিতে হেঁটে বাংলার ভবিষ্যতের দিশা দেখালেন MD & CEO বরুণ দাস
সাহিত্য যেমন বাংলার এক 'হেরিটেজ', তেমনই আরও একটি হেরিটেজের কথাও মনে করিয়ে দেন এমডি ও সিইও বরুণ দাস। তিনি মনে করিয়ে দেন একসময় বাংলা ছিল ভারতের 'বাণিজ্যিক রাজধানী'। তিনি উল্লেখ করেন, রামদুলাল দে সরকারের কথা। যিনি ছিলেন ভারতের প্রথম 'ইন্টার-কন্টিনেন্টাল ট্রেডার'। তিনি বস্টন, ফিলাদেলফিয়া, নিউ ইয়র্কের সঙ্গে ব্যবসা করেছেন।

কলকাতা: TV9 নেটওয়ার্কের অভিনব উদ্যোগ। বাণিজ্য সংক্রান্ত সাহিত্য নিয়েই বিশেষ সাহিত্য উৎসবের সূচনা হল কলকাতায়। সেই অনুষ্ঠানের শুরুতেই বাঙালির সাহিত্যচর্চা ও বাণিজ্যচর্চার ঐতিহ্যের কথা উল্লেখ করলেন TV9 নেটওয়ার্কের এমডি ও সিইও বরুণ দাস। রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসকে স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য শুরু করেন তিনি।
বক্তব্যের প্রথমেই একটি প্রবাদের উল্লেখ করেন বরুণ দাস। বলেন, “কেউ বলেছিলেন, আমরা সেটাই মনে রাখি, যেটা মনে রাখতে চাই। আর যেটা মনে রাখা জরুরি, সেটা ভুলে যাই।” পশ্চিমবঙ্গকে এরকমই এক উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করে বরুণ দাস বলেন, “সবাই মনে রেখেছেন যে, পশ্চিমবঙ্গ হল বহু চিন্তনশীল মানুষ, সাহিত্যিক, কবি, দার্শনিকের কর্মস্থান। এই মাটিতেই আমরা পেয়েছি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, কাজী নজরুল ইসলাম, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, আশাপূর্ণা দেবীর মতো সাহিত্যিকদের। বাংলা আজও দেশের সাহিত্যের রাজধানী হিসেবে গর্ববোধ করে।”
তিনি আরও বলেন, “আমি যখন বড় হয়েছি, সেই সময় বই শুধু জনপ্রিয় ছিল তাই নয়, যে কোনও অনুষ্ঠানে বই উপহার দেওয়া হত। স্কুলের পুরস্কার থেকে শুরু করে জন্মদিন, বিয়ে সব ক্ষেত্রেই বই উপহার দেওয়ার প্রচলন ছিল। একমাত্র বাংলায় আমি শুনেছি, কোনও কোনও বইয়ের ‘গিফট এডিশনও’ পাওয়া যায়।”
সাহিত্য যেমন বাংলার এক ‘হেরিটেজ’, তেমনই আরও একটি হেরিটেজের কথাও মনে করিয়ে দেন এমডি ও সিইও বরুণ দাস। তিনি মনে করিয়ে দেন একসময় বাংলা ছিল ভারতের ‘বাণিজ্যিক রাজধানী’। তিনি উল্লেখ করেন, রামদুলাল দে সরকারের কথা। যিনি ছিলেন ভারতের প্রথম ‘ইন্টার-কন্টিনেন্টাল ট্রেডার’। তিনি বস্টন, ফিলাদেলফিয়া, নিউ ইয়র্কের সঙ্গে ব্যবসা করেছেন। তাঁর সঙ্গে কাজ করে আমেরিকার পার্টনাররা এত খুশি ছিল যে কারা রামদুলালের নামে একটি জাহাজের নামকরণ করে ‘রামদালোল’।
বরুণ দাস আরও উল্লেখ করেন, “দ্বারকানাথ ঠাকুরকে ভারতের প্রথম শিল্পপতি বলা হত। শিপিং, কোল মাইনিং ব্যাঙ্কিং-এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি।” বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আলামোহন দাসের কথা উল্লেখ করে বরুণ দাস বলেন, “তিনি তৈরি করতেন মেশিন, ওয়াগন, জুট ও কাপড় মিলও চালাতেন তিনি। তাঁর নামে একটি শহর রয়েছে, যার নাম দাসনগর।” ১৮৯০ থেকে ১৯৫০ পর্যন্ত সময়কাল অর্থাৎ রেনেসাঁর সময় যে একাধিক বাঙালির সংস্থা তৈরি হয়, সে কথাও বলেন বরুণ দাস। বেঙ্গল কেমিক্যাল, বেঙ্গল টেনারি সহ সেই তালিকা বেশ লম্বা।
লিটারারি ফেস্টের উদ্বোধনে বরুণ দাস বলেন, “আজ আমরা দেশের আধুনিক সাহিত্যিকদের লেখা উদযাপন করব, যারা বাণিজ্য নিয়ে কথা বলছেন। আর্থিক উন্নতির কথা আগেও বলেছেন বহু সাহিত্যিক। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর স্বনির্ভর গ্রামের কথা বলেছিলেন, কো অপারেটিভ ব্যাঙ্কের কথা বলেছিলেন। গ্রিন ব্যাঙ্ক তৈরি করেছিলেন গ্রামের মানুষের জন্য। রমেশচন্দ্র দত্ত সাহিত্যিক ছিলেন। তিনি বুঝিয়েছিলেন ড্রেন অব ওয়েলথ আসেল কী। তিনি বুঝিয়েছিলেন ব্রিটেনের ট্যাক্স ব্যবস্থা কীভাবে ভারতের টাকা ব্রিটেনে নিয়ে চলে যেত। এমনকী বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় শিক্ষার গুরুত্বের পাশাপাশি মুক্ত বাণিজ্যের কথা বলতেন।”
ব্যবসা বা অর্থলাভ নিয়ে বাঙালির যে চিন্তাধারা আছে সে কথা উল্লেখ করে বরুণ দাস বলেন, “আমরা বাঙালিরা লোভের সঙ্গে আকাঙ্খাকে গুলিয়ে ফেলি। যদি পরিশ্রম না করে কোনও অভিলাশ তৈরি হয়, তাহলে সেটা লোভ। অর্থাৎ টাকা মোটেই খারাপ শব্দ নয়, যে ধারণাটা বাঙালিদের মনে রয়েছে।” বরুণ দাসের কথায়, ভারত আজ বিশ্বমঞ্চে যে জায়গা তৈরি করেছে, তার কারণ হল অর্থনৈতিক উন্নয়ন। ভারতের আর্থিক বৃদ্ধি সবথেকে দ্রুতহারে হচ্ছে। সব শেষে তিনি বলেন, “এই বিজনেস অ্যান্ড ইকনমি লিটারারি ফেস্টিভ্যাল’-এর উদ্দেশ্য় হল সাহিত্য আর বাণিজ্য যেন অনুঘটকের কাজ করে, যাতে বাংলার বাণিজ্যিক ডিএনএ জাগিয়ে তুলতে পারে। এটাই শুরু। আগামিদিনে বিশ্বের সবথেকে বড় বাণিজ্যিক সাহিত্যের উৎসব হবে এটি।”
