আবহাওয়ার (Weather Update) মতিগতি বোঝা দায়! চৈত্রের শেষ আর বৈশাখের শুরুতে একেবারে ঝলসে দেওয়া গরম। তার পর ক’দিন ধরে এমন আবহাওয়া, মাসটা বৈশাখ না আষাঢ়, ঠাওর করা মুশকিল। আগামী দিনকয়েকের পূর্বাভাসও বলছে, ‘মিনি বর্ষা’ (Rain in West Bengal) সামনে। কিন্তু তার পর? মৌসম ভবনের ইঙ্গিত, আগামী ২ সপ্তাহে প্রবল গরমের আশঙ্কা নেই। বাংলা কেন, গোটা দেশেই তাপপ্রবাহের (Heat Wave) তেমন ভয় কম। তাই বলে গরম আর মাথা তুলতে পারবে না, এমন নয়। পূর্বাভাস বলছে, মে-র দ্বিতীয়ার্ধে আবার বাড়বে গরমের দাপট। ফের দক্ষিণবঙ্গে তাপপ্রবাহের আশঙ্কা। শুধু তাই নয়, রাজস্থান-দিল্লির চেয়েও বেশি তাপপ্রবাহের আশঙ্কা বাংলায়!
এ বার গ্রীষ্মে প্রবল গরমের ইঙ্গিত দিয়েছিল মৌসম ভবন। গোটা দেশে না হোক, মাঝ এপ্রিলে শুকনো গরমে ভাজাভাজা হয়েছে পূর্ব ভারত। মে মাসে কী হবে, তার একটা আভাস শুক্রবার দিয়েছেন আবহবিদরা। দেখা যাচ্ছে, দেশের উত্তর-পশ্চিম আর পূর্বে বিস্তর ফারাক। মে মাসে যে অঞ্চলগুলো তাপপ্রবাহে জ্বলতে থাকে, সেই তল্লাটে গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে কম থাকার সম্ভাবনা। এর মধ্যে রয়েছে রাজস্থান, দিল্লি, হরিয়ানা, পঞ্জাবের মতো রাজ্য। এই অঞ্চলে তাপপ্রবাহের আশঙ্কাও তেমন দেখছেন না আবহবিদরা। অথচ, পুবের তল্লাটে যেন ‘লাল সতর্কতা’! বিশেষ করে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশায়। কোথাও ২ দিন, কোথাও ৪ দিন, কোথাও ৬ দিন পর্যন্ত তাপপ্রবাহের আশঙ্কা। মোদ্দা কথা, সপ্তাহখানেক আগের বিভীষিকা ফেরার ভয়!
আপাতত যদিও মনোরম আবহাওয়ার পূর্বাভাস। নতুন পশ্চিমী ঝঞ্ঝার প্রভাবে রবিবার ও সোমবার ঝড়-বৃষ্টির কমলা সতর্কতা জারি করেছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর। উত্তরবঙ্গে আবার বিক্ষিপ্ত ভারী বৃষ্টিরও সম্ভাবনা। অন্তত ৩ মে পর্যন্ত এই ঝড়-বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকবে। তার পরও সহসা ‘বৈশাখোচিত’ গরম পড়ার সম্ভাবনা কম। ১১-১২ মে পর্যন্ত বাংলায় তাপপ্রবাহের কোনও আশঙ্কা দেখছে না মৌসম ভবন। হাওয়া ঘুরতে পারে তার পর থেকেই। হয় বৈশাখের একেবারে শেষ লগ্নে, অথবা জ্যৈষ্ঠে। মে-র তৃতীয় ও চতুর্থ, দুই সপ্তাহেই দক্ষিণবঙ্গের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার গড় স্বাভাবিকের উপরে থাকারই ইঙ্গিত। একই পরিণতি হতে পারে মালদহ, দুই দিনাজপুরেও। মৌসম ভবনের পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ”মে-র প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত গরমের বিশেষ বালাই থাকবে না। এক-দু’দিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা স্বাভাবিকের নীচেও নেমে যেতে পারে।” পুণের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ট্রপিক্যাল মেটেরোলজির জলবায়ু বিজ্ঞানী পার্থসারথি মুখোপাধ্যায় বলছেন, ”এখনও পর্যন্ত যা ইঙ্গিত তাতে মনে হচ্ছে, মে মাসের দ্বিতীয়ার্ধেই বেশি ভোগাবে গরম।”
পশ্চিমী ঝঞ্ঝার হাতযশ দেখছেন আবহবিদরা। পার্থসারথি মুখোপাধ্যায়ের ব্যাখ্যা, ”মে-র একটা বড় অংশ জুড়ে পশ্চিমী ঝঞ্ঝার প্রভাব পড়তে পারে উত্তর-পশ্চিম ভারতে। মাঝেমধ্যে বৃষ্টি হলে পারদ কখনওই লাফিয়ে লাফিয়ে উঠতে পারবে না। মে-র শুরুতে ঝঞ্ঝার আশীর্বাদ বাংলাও পাবে। কিন্তু পরের দিকে আর পাবে না বলেই মনে হচ্ছে।” সেই সুযোগেই গরম শুকনো হাওয়া লু-র দাপট বাড়তে পারে। পরিষ্কার আকাশ পেয়ে ছড়ি ঘোরাবে রোদও।
বিশ্ব উষ্ণায়নের ঠেলায় গরমের দাপটই একমাত্র ভবিতব্য হয়ে দাঁড়াচ্ছে। শুক্রবার মৌসম ভবন প্রকাশিত তথ্য বলছে, গড় তাপমাত্রার নিরিখে ২০২২ সালে ষষ্ঠ উষ্ণতম বছর কাটিয়েছে বাংলা। সর্বনিম্ন তাপমাত্রার গড় ধরলে, ১২৩ বছরে দ্বিতীয় উষ্ণতম ছিল ২০২২। অর্থাৎ, শুধু দিন নয়, রাতের গরমও অস্বস্তির কারণ। মানিয়ে নেওয়া ছাড়া কোনও গতি আছে কি?