কলকাতা: রিজেন্ট পার্কে বাড়ি থেকে মা, বাবা, মেয়ের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার। ল’ কলেজের ছাত্রী ছিলেন ওই মেয়েটি। রবিবারের এই ঘটনায় রিজেন্ট পার্ক (Regent Park) থানার পুলিশ দেহ উদ্ধার করেছে। প্রাথমিক অনুমান, আর্থিক সঙ্কটের জেরেই আত্মহত্যা করেছে এই পরিবার। স্থানীয় সূত্রে খবর, ব্যবসায়ী পরিবার এটি। বাড়ির কর্তার ব্যবসায় লোকসান হয়। তারপরই এই ঘটনা বলে প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে রিজেন্ট পার্ক থানার পুলিশ। রিজেন্ট পার্ক থানা এলাকার গঙ্গাপুরী প্রাইমারি স্কুলের উল্টৈাদিকে আবাসন। ১৯৬/১ আবাসনের দোতলায় ব্যবসায়ী বিজয় চট্টোপাধ্যায়ের ফ্ল্যাট। যদিও এটি ভাড়ার ফ্ল্যাট। এলাকার লোকজন জানান, মাস কয়েক আগে এখানে ভাড়া আসেন বিজয় চট্টোপাধ্য়ায়। তবে দিন দু’য়েক এই পরিবারের কাউকেই বাড়ির বাইরে দেখা যায়নি বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি। তারপরই একটা সন্দেহ দানা বাঁধতে শুরু করে। এরইমধ্যে রবিবার আবাসনের অন্যান্য আবাসিকরা সকাল থেকেই বোঁটকা গন্ধ পাচ্ছিলেন। চট্টোপাধ্য়ায় পরিবারের ঘরের দিক থেকেই গন্ধটা আসছিল।
এরপর বিজয়দের দরজায় গিয়ে ধাক্কাধাক্কি শুরু করেন প্রতিবেশীরা। দীর্ঘক্ষণ ডাকাডাকি করলেও কোনওরকম সাড়াশব্দ পাননি। আসেন বাড়ির মালিকও। এরপরই থানায় খবর দেওয়া হয়। অভিযোগ, পুলিশ এসে দরজা ভেঙে ভিতরে ঢোকে। ভিতরে ঢুকে পুলিশ দেখে সস্ত্রীক বিজয় চট্টোপাধ্যায় ও মেয়ে ঐন্দ্রিলা চট্টোপাধ্যায় ঝুলন্ত অবস্থায় রয়েছেন। দেহ উদ্ধার করা হয়।
কলকাতা পুলিশের ডিসপোজাল ভ্যান আনা হয় এলাকায়। দেহ তিনটি এই ভ্যানে করেই ময়না তদন্তের জন্য নিয়ে যাওয়া হবে। পুলিশের তরফে দাবি করা হচ্ছে, ময়না তদন্তের রিপোর্ট সামনে এলে বিষয়টি স্পষ্ট হবে। আত্মহত্যা নাকি এর পিছনে অন্য কোনও রহস্য রয়েছে, তা পরিষ্কার হবে।
তবে এলাকার লোকজন জানাচ্ছেন, বিজয় চট্টোপাধ্যায়ের বড়বাজারে ব্যবসা ছিল। সেই ব্যবসাকে কেন্দ্র বেশ কিছুদিন তিনি আর্থিক অনটনের মধ্যে ছিলেন। ব্যবসায় কোনওরকম লোকসান বা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিলেন বলেই সূত্রের খবর। কোনওরকম মানসিক অবসাদ কাজ করছিল কি না সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পুলিশের তরফে এই পরিবারের আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। মোবাইল ফোনের কললিস্ট ঘেঁটেও এগোচ্ছে তদন্ত প্রক্রিয়া।
যেই ফ্ল্যাটে বিজয় চট্টোপাধ্যায় ভাড়া থাকতেন, তার মালিক জয়ন্ত মণ্ডলের বক্তব্য, সাত আট মাস আগে ফ্ল্যাট ভাড়া নেন বিজয় চট্টোপাধ্যায়। ১১ হাজার টাকা প্রতি মাসে ভাড়া ছিল। ফ্ল্যাটের একমাসের ভাড়া বাকি ছিল। মেয়ের টিউশন ফি দিতে হবে বলে সময় চেয়েছিলেন বিজয়। পাঁচমাসের বিদ্যুতের বিলও বকেয়া। ফোনে যোগাযোগ করতে না পেরে এদিন দুপুরে বিদ্যুৎ বিলের টাকার জন্য কথা বলতে এসেছিলেন ফ্ল্যাটের মালিক। ডাকাডাকি করে উত্তর না পেয়ে থানায় গিয়ে পুলিশকে জানান। অন্যদিকে প্রতিবেশীরাও ফ্ল্যাট থেকে দুর্গন্ধ বেরোনোর কথা জানায় পুলিশকে। তারপরেই পুলিশ পৌঁছে দরজা ভেঙে দেহ উদ্ধার করে।।