কলকাতা: নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগ ঘিরে সমান্তরাল তদন্ত চলছে ইডি (ED) ও সিবিআইয়ের (CBI)। গত কয়েকদিনে একের পর এক ‘এজেন্ট’-এর নাম উঠে এসেছে। চন্দন মণ্ডল, তাপস মণ্ডল থেকে শুরু করে শাহিদ ইমাম। নাম আছে আরও। এবার উঠে আসছে বিভাস অধিকারী নামে বীরভূমের নলহাটির এক ব্যক্তির নাম। গ্রাম, স্থানীয় নেতা ও তৃণমূল সূত্রে মিলছে চমকপ্রদ সব তথ্যও। নলহাটি-২ ব্লকের শীতলপুর গ্রামপঞ্চায়েতের কৃষ্ণপুর গ্রামে বাড়ি বিভাসের। বর্তমানে তিনি তৃণমূল লোহাপুর ব্লক সভাপতি বলেই সূত্রের দাবি। যদিও বিভাসের দাবি, এই মুহূর্তে তিনি প্রত্যক্ষ রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নন। সূত্রের দাবি, শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির অন্যতম কাণ্ডারী বিভাস অধিকারী। তাপস মণ্ডল, মানিক ভট্টাচার্য, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়, সুবীরেশ ভট্টাচার্য, গোপাল দলপতি, কুন্তল ঘোষদের সঙ্গে তাঁরও নাকি একই সারিতে অবস্থান।
স্থানীয় সূত্রের খবর, বিভাস ডাকলে সে ডাক ফেলতেন না বীরভূমের দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা অনুব্রত মণ্ডলও। সূত্রের দাবি, বিভাসের ডাকে সাড়া দিয়ে কখনও গ্রামে এসেছেন বীরভূমের কেষ্ট মণ্ডল, কখনও মুকুল রায়, কখনও পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সূত্র বলছে, এখানে বি.এড, ডি.এলএড মিলে চারটি কলেজ আছে। আয়ুর্বেদিক ওষুধ তৈরির কারখানাও আছে বিভাসের।
নলহাটি-২ ব্লকের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বেকার যুবক, যুবতীরা তাঁর অন্যতম টার্গেট ছিল বলে সূত্রের খবর। এছাড়া বীরভূম, মুর্শিদাবাদ,মালদহ জেলার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বেকার যুবক, যুবতীরাও বিভাস অধিকারীকে লক্ষ লক্ষ টাকা দিয়ে প্রতারণার শিকার হন বলে সূত্রের খবর। ক্ষমতার দম্ভে তাঁকে রুখতে পারত না কেউই।
সূত্রের খবর, ১৯৯১ সালে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় ইংরেজিতে ব্যাক পান বিভাস। পরে বহরমপুরে স্পোকেন ইংলিশ শেখেন। মুর্শিদাবাদের পাঁচগ্রামে একটি বাংলা ইংরেজি টাইপ স্কুল চালান। ভাগীরথী করেসপন্ডেন্স কলেজ নামে এর একটি শাখাও গড়ে তোলেন তাঁর মামার সহযোগিতায়। তখনও জেলাতেই। কলকাতায় আসেননি। এরপর উত্তর ২৪ পরগনার সোদপুর ঘোলায় বাড়ি ভাড়া নেন। সূত্রের খবর, সেখান থেকেই প্রতারণার হাত পাকানো শুরু। এর জন্য জেলেও যেতে হয়েছিল বলেই দাবি সূত্রের।
২০০০ সালের দিকে বহরমপুর থেকে একটি পত্রিকাও সম্পাদনা করেছেন। সেই সময় থেকে বেসরকারি বেসিক ট্রেনিং কলেজ গড়ে তোলার চেষ্টা চালিয়ে যান। ২০১১ সালের আগে রাজ্য সরকার অনুমোদন না দিলেও NCERT অনুমোদন লাভ করায় চুটিয়ে শিক্ষা ব্যবসা শুরু হয় বিভাসের। শিক্ষক নিয়োগে নিজের আত্মীয়স্বজনকেও চাকরি পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে এই বিভাসের নামে।
সূত্রের খবর, বিএড, ডিএলএড কলেজ সমিতির অন্যতম মুখ ছিলেন বিভাস। কলেজ অনুমোদন, রেজিস্ট্রেশনের টাকা বিভাস অধিকারীর হাত দিয়েই মানিক ভট্টাচার্য, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে জমা পড়ত বলে তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে খবর। কলকাতায় ফ্ল্যাট রয়েছে এখন। সিউড়ির কাছে কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি কেনা হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।