Bangla NewsKolkata West bengal panchayat polls panchayat case hearing in supreme court on central force issue
West Bengal Panchayat Polls 2023: হিংসাকে লাইসেন্স নয়, কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়েই ভোট, হাইকোর্টের নির্দেশেই সিলমোহর দিল শীর্ষ আদালত
West Bengal Panchayat Polls 2023: বিচারপতি নাগারত্না বলেন, মনোনয়নপত্র দাখিলের স্বাধীনতা নেই এমন লোকদের যদি হত্যা করা হয়, তাহলে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রশ্নই ওঠে না। এই ধরনের হিংসার ঘটনা পরিপ্রেক্ষিতে, অন্তত হাইকোর্টও তেমনই নির্দেশ দিয়েছে।
ফাইল ছবি
Follow Us
নয়া দিল্লি: বাহিনী মামলায় সুপ্রিম কোর্টে ধাক্কা খেল রাজ্য কমিশন। হাইকোর্টের নির্দেশকে বহাল রাখল শীর্ষ আদালত। অর্থাৎ বাংলায় পঞ্চায়েত নির্বাচন হবে কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়েই। পঞ্চায়েত নির্বাচনকে নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে শনিবার সুপ্রিম কোর্টে স্পেশ্যাল লিভ পিটিশন দাখিল করে রাজ্য ও রাজ্যের কমিশন। সোমবার রাজ্য নির্বাচন কমিশনের পক্ষে সওয়াল করেছিলেন আইনজীবী মীনাক্ষী আরোরা। তিনি জানিয়েছিলেন, হাইকোর্ট ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বুথওয়াড়ি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু বাহিনী চাওয়া কমিশনের কাজ নয়। মঙ্গলবার সকালে শুনানির শুরু থেকেই কার্যত শীর্ষ আদালতের চাপের মুখে পড়ে কমিশন ও রাজ্য। কমিশনকে পর পর প্রশ্ন করতে থাকেন বিচারপতি নাগারত্না। কিন্তু সেভাবে উত্তর দিতে রীতিমতো বেগ পেতে হয় কমিশনকে। এদিনের শুনানিতে বিচারপতির গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ, ‘ভোট মানে হিংসার লাইসেন্স নয়’। এক নজরে সুপ্রিম কোর্টের শুনানি
KEY HIGHLIGHTS
এদিনের শুনানিতে কমিশনের তরফে থেকে দুটি বিষয়ের ওপর জোর দেওয়া হয়। কমিশনের বক্তব্য, বাহিনী চাওয়ার এক্তিয়ার তাদের নেই। রাজ্য ও কমিশনের আইনজীবী একযোগে বলেছেন, অতীত ও সাম্প্রতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে রাজ্যের বেশি কিছু বুথকে স্পর্শকাতর হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আর সেই প্রক্রিয়াও সম্পূর্ণ। তাদের বক্তব্য, হাইকোর্ট এই রিপোর্টের ওপর ভরসা না রেখে কার্যত গোটা রাজ্যকেই স্পর্শকাতর হিসাবে গণ্য করার নির্দেশ দিয়েছে। হাইকোর্টের রায়ের শেষ অংশ বলা হয়েছে, প্রত্যেক জেলাতে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করতে হবে। আর সেখানেই রাজ্য ও কমিশন বিরোধিতা করে।
এখানে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতির বেশ কয়েকটি তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য রয়েছে। বিচারপতি নাগারত্না তখন রাজ্য ও কমিশনের কাছে জানতে চান, যখন বাংলার পরিস্থিতি সামলাতে অতিরিক্ত বাহিনীর প্রয়োজন রয়েছে বুঝতে পেরে, পাঁচ রাজ্য থেকে বাহিনী চাওয়া হয়, তাহলে সেই বাহিনী অন্য কোনও রাজ্য থেকে যদি না এসে কেন্দ্র থেকে আসে, তাহলে রাজ্যের আপত্তি কোথায়? অতিরিক্ত বাহিনী প্রয়োজন সেটা স্পষ্ট, তাহলে সেটা কেন্দ্রের হলে অসুবিধা কোথায়?
বাংলার পঞ্চায়েত নির্বাচনে বর্তমান পরিস্থিতি ও অভিযোগের প্রেক্ষিতে শীর্ষ আদালতের বিচারপতি নাগারত্না বলেন, হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছে ২০১৩, ২০১৮ হিংসার একটি পুরানো ইতিহাস রয়েছে। হিংসার পরিবেশে নির্বাচন হতে পারে না। নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হতে হবে।
বিচারপতি আরও জানতে চান, কমিশন যেগুলোকে স্পর্শকাতর হিসাবে চিহ্নিত করেছে, সেগুলিকে বাদ দিয়ে যদি বাকিগুলোতেও কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট করানো হয়, তাহলে আপত্তি কোথায়?
এই প্রশ্নের সদুত্তর রাজ্য ও কমিশনের তরফে দেওয়া হয়নি।
এদিনের সওয়াল জবাবের শুরুতে রাজ্য ও কমিশনের তরফ থেকে প্রস্তুতির খতিয়ান, মুখ্যসচিবকে দেওয়া চিঠি, অ্যাসেসমেন্টের চিঠি নথি হিসাবে দেওয়া হয়। কিন্তু তারপরই মামলাকারীদের আইনজীবীরা একটার পর একটা প্রমাণ দেওয়া শুরু করেন। ১৪ ও ১৬ জুন পর্যন্ত হিংসার ঘটনার বিবরণ ও হাইকোর্টে দেওয়া কমিশনের নথি পেশ করেন। কিন্তু তার প্রেক্ষিতে রিপোর্ট’ পেশ করতে পারেনি কমিশন। কমিশনের তরফ থেকে সেই রিপোর্ট তৈরিই করা হয়নি।
এরপর বিচারপতি নাগারত্না বলেন, মনোনয়নপত্র দাখিলের স্বাধীনতা নেই এমন লোকদের যদি হত্যা করা হয়, তাহলে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রশ্নই ওঠে না। এই ধরনের হিংসার ঘটনা পরিপ্রেক্ষিতে, অন্তত হাইকোর্টও তেমনই নির্দেশ দিয়েছে।
বিচারপতি নাগারত্না বলেন, “নির্বাচন পরিচালনা মানে হিংসায় লিপ্ত হওয়ার লাইসেন্স দেয় না। সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনও গণতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য। হিংসার পরিবেশে নির্বাচন করা যাবে না।” তখনও কার্যত নিশ্চুপ থাকে রাজ্য ও কমিশন।
মামলাকারীরা মূলত একটি বিষয়ের ওপরেই জোর দিয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, ১৬ জুন অর্থাৎ যখন নির্বাচনী প্রক্রিয়া তুঙ্গে, রাজ্যের একাধিক প্রান্ত থেকে অশান্তির খবর আসছে, হাইকোর্ট কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনে র নির্দেশ দিচ্ছে, তখন কমিশনের কাছে কোনও বিস্তারিত প্ল্যানিং নেই। কীভাবে পরিস্থিতি সামলাবে, তার কোনও পরিকল্পনাই ছিল না।
হাইকোর্টের রায়ের বিরোধিতা করেননি বিচারপতি। সব পক্ষের সওয়াল জবাব শোনার পর শেষ পর্যন্ত বিচারপতি জানান, ১৫ জুন হাইকোর্ট যে নির্দেশ দিয়েছিল, অর্থাৎ বাংলায় অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করতে হবে, সেই নির্দেশই বহাল থাকবে। হাইকোর্টের নির্দেশে সুপ্রিম কোর্ট হস্তক্ষেপ করবে না বলেও জানিয়ে দেন বিচারপতি নাগারত্না।