” অশ্বিনের শারদ প্রাতে
টাকাকড়ি সব ইডির হাতে “- সমকালীন ঘটনাই এবার টি-শার্টের ক্যাচলাইন। কৌতুকভরা এমন সব বাক্যই ট্রেন্ডিং পুজোর টি-শার্টে। গত দু’মাসে রাজ্য-রাজনীতি নিয়ে সড়গরম নেটপাড়া। সোশ্যাল মিডিয়া জুড়েও মিমের বন্যা। সেই আঁচ যে এবার পুজোর ফ্যাশনেও এসে পড়বে তা বোধহয় টের পাননি নেটাগরিকরা। আর এমন ভাবনার কারিগর হলেন নদিয়ার মৃন্ময় দাস। ” তোমার আলতো নরম কাঁধে/আমার 2BHK বাসা “, ” আমাকে এখনও শেখানো বাকি, তোমাকে এখনও দেখানো বাকি’- এসবও লাইনও বংটিস মৃন্ময়ের মস্তিষ্কপ্রসূত। গত চার বছর ধরে বাংলায় টি-শার্ট বানান মৃন্ময় দাস। বাদকুল্লার বাসিন্দা মৃন্ময় কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতকোত্তর। লিখতে ভালবাসতেন। পড়াশোনা শেষ করে তাই পছন্দের কাজকেই বেছে নিয়েছেন পেশা হিসেবে। বঙ্গের সমকালীন ঘটনা, যা বাঙালিকে ভাবায়- এমন সব উক্তিই মজার ছলে মানুষের মনে পৌঁচ্ছে দেন তিনি।
ইডি তলবে গত দু’মাস ধরে তোলপাড় রাজ্য। পুজোর আগে নগদ টাকা সব ইডির হাতেই। আর তাই নিছকই মজার ছলে এমন দু’লাইন লিখে ফেলেছেন তিনি। ‘এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও রকম যোগ নেই। পুজোর আগে সব বাঙালিই দাবি করে পকেট খালি। সকলেই তখন খোঁজ করেন গৌরী সেনের। সেই পরিপ্রেক্ষিত আর বর্তমান পরিস্থিতির মিশেলে উঠে এসেছে এমন লাইন’- বললেন মৃন্ময়। সোশ্যাল মিডিয়া মারফত প্রচুর মানুষের কাছে পৌঁছে গিয়েছে তাঁর কাজ। আর তাই পুজোর আগে এমন টি-শার্টের অর্ডারও আসছে প্রচুর।
পুজো স্পেশ্যাল এবার তিনি প্রায় ৫০ টি ডিজাইন তৈরি করেছেন। সেই তালিকায় যেমন কৌতুকভরা লাইন রয়েছে তেমনই দুর্গা দুর্গতি নাশিনী, দুগ্গা দুগ্গা, জাগো শক্তি জাগো স্বপ্ন এমন পুজো স্পেশ্যাল আগমনী টি-শার্টও রয়েছে। এবছর তাঁরা বাচ্চাদের জন্যেও টি-শার্ট বানাচ্ছেন। সপরিবারে একই টি-শার্টে পুজো দেখতে যেতে চান, এমন মর্মে অনুরোধও এসেছে। সেই অনুরোধ মেনে বানিয়ে দিয়েছেন ফ্যামিলি প্যাক। কোনও ক্লাব বা কোনও গ্রুপ যদি অনুরোধ করেন তাঁদের জন্যেও টি-শার্ট বানিয়ে দেন মৃন্ময় অ্যান্ড কোং।
কেন বাংলাতেই টি-শার্ট বানানো শুরু করলেন?
বাংলা সাহিত্যের ছাত্র, তাই বাংলা ভাষা নিয়ে কাজ করার একটা ঝোঁক ছিল মৃন্ময়ের। ‘যে ভাষায় বাঙালি দিনরাত চর্চা করে, আলোচনা করে সেই বিষয়ই টি-শার্টে তুলে আনার চেষ্টা করি। বাউল, নবারুণ থেকে শুরু করে বাংলা টাং টুইস্টার এসব ব্যবহার করেই তৈরি হয় কোটেশন। বাঙালি খেতে ভালবাসে তাই ‘গান্ডে পিন্ডে গিলতে পারি’, বাঙালি আড্ডা দিতে ভালবাসে, বাঙালি ঘুরতে যেতে ভালবাসে- এসব মাথায় রেখেই ‘একচালার আড্ডা উঠুক জমে’, ‘আমি বাংলায় দেখি স্বপ্ন’, ‘চলো পাহাড়ে যাই’ এসব লাইন কোট করা হয় টি-শার্টে’।
‘ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামের মাধ্যমেই আমাদের কাজ পৌঁচ্ছে যায় মানুষের কাছে। এখনও অর্ডার আসে সেই ভাবেই। নিজেদের একটি ওয়েবসাইট লঞ্চ করার পরিকল্পনা আছে। তাই পুজোর পরই বাজারে আসবে বংটিস-এর নিজস্ব ওয়েবসাইট’- মৃন্ময়।
নদিয়ার বাদকুল্লার ছেলে মৃন্ময়। কথা প্রসঙ্গে জানালেন, কলকাতার মত বড় শহরে থেকে কাজ করলে পরিচিতি পাওয়ার সম্ভাবনা তুলনায় সহজ। কারণ সেখানে মানুষের সঙ্গে সহজে সম্পর্ক স্থাপন করা যায়। মানুষকে অনেক সহজে বোঝানো যায়। কিন্তু গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় থেকে বাংলা টি-শার্ট নিয়ে এই লড়াই চালিয়ে যাওয়াটা অনেকটাই কঠিন। ‘কেন বাংলায় টি-শার্ট নিয়ে আমি এত মাতামাতি করি,এ প্রসঙ্গে অনেকে আমাকে বলেছেন আমি নাকি বড্ড সংকীর্ণ বিষয় নিয়ে কাজ করি। কেন ইংরেজিতে টি-শার্ট পরি না কিংবা বানাই না- সে বিষয়েও একাধিক প্রশ্ন ওঠে’। তবুও ‘লড়াইটা কিন্তু চালিয়ে যেতে হবে বন্ধু’…