আশ্বিন মাসের শেষদিন ও কার্তিক মাসের প্রথমদিন ঘিরে চট্টগ্রামে এক রকম ব্রত পালন করা হয়। যা জলবিষুব সংক্রান্তি নামে পরিচিত। প্রতি বছরই এই ১৮ অক্টোবরই পালন করা হয় বিশেষ এই তিথির। অনেক জায়গায় তা ব্রতের ভাতের পুজো নামেও পরিচিত। ইতিহাস বলে, স্বর্গের চিকিৎসক অশ্বিনী কুমারদ্বয় সূর্যদেব ও সংজ্ঞা’র পুত্র। অভিশাপগ্রস্ত সংজ্ঞা জগজ্জননী পার্বতীর কাছে নিজের দুর্দশা থেকে মুক্তি চাইলে পার্বতী এক মুষ্টি চাল দিয়ে তাকে বলেছিলেন-আশ্বিন মাসের শেষ তারিখ পূর্বরাত্রে শেষ দিবস রেখে এই চাল ভক্তিপূর্বক রন্ধন শেষে মহাদেবের অর্চনা করতে হবে এবং কার্তিক মাসের ১ম দিবসে সেই অন্ন ভক্ষণে মনস্কামনা পূর্ণ হবে। সে নিয়ম মেনে রোগ ও অভিশাপমুক্ত হয়েছিলেন দেবী সংজ্ঞা। বেদেও দুই ভাই নীসত্য ও দস্র-র উল্লেখ রয়েছে।
এই সংক্রান্তি উপলক্ষ্যে একটা প্রবাদ প্রবচলও বাংলায় প্রচলিত আছে। তা হল- আশ্বিনে রাঁধে, কার্তিকে খায়/ যেই বর মাগে, সেই বর পায়। আশ্বিনের সংত্রান্তিতে রাত জেগে এই ডাল বানিয়ে নেন বাড়ির মহিলারা। এই ডালের সঙ্গে কলাপাতায় গুড় আর নারকেল কোরা মিশিয়ে মেখে গৃহদেবতাকে নিবেদন করা হয়। তারপর ডাল আর পান্তাভাত খাওয়া হয়। কার্তিক এক সময় ছিল অভাবের মাস। সন্তানরা যাতে ভাল থাকে, তাদের যাতে পুরো বছর ভাল যায় সেই কামনা থাকে এই বিশেষ দিনে। এছাড়াও কার্তিকে বাড়ে নানা রোগের প্রকোপ। সুস্থ থাকতেও তাই এই ডাল বানিয়ে খাওয়ার কথা বলা হয়। গাড়ুর ডালে তেল, ঘি, হলুদ পড়ে না। দেখে নিন কী ভাবে বানাবেন এই ডাল।
যা যা লাগছে
মটর ডাল- ৩০০ গ্রাম
মূলো
লাউশাক
থোড়
মিষ্টিকুমড়ো
মিষ্টি আলু
বরবটি
ঝিঙে
শিম
শাপলা
শালুক
কাঁকরোল
চালতা
জলপাই
মানকচু
গাঠিকচু
বিনস
তেঁতুল
কাঁচালঙ্কা
যেভাবে বানাবেন-
আগের রাতে ডাল ভিজিয়ে রাখুন। সমস্ত সবজি ডুমো ডুমো করে কেটে নিন। শুকনো কড়াইতে গোটা ধনে, জিরে, তেজপাতা, শুকনো লঙ্কা দিয়ে নেড়ে নিয়ে গুঁড়ো করে নিন। চালতা, জলপাই, মূলো, থোড়, মিষ্টিআলু, শিম, শালুক, বরবটি এই সব প্রেসারে সামান্য জরল আর নুন দিয়ে ভাপিয়ে নিন। এবার পরিমাণ মতো জল দিয়ে প্রেসারে ডাল সিদ্ধ করতে বসান। এবার ওর মধ্যে কুমড়ো, ঝিঙে মিশিয়ে দিন। সিদ্ধ হয়ে এলে বাকি সব সবজি মিশিয়ে নিন। স্বাদমতো নুন দিন। এবার একটু কালোজিরে মিশিয়ে দিন। নামানোর আগে ভাজা মশলার গুঁড়ো পুরোটা ছড়িয়ে দেবেন।