করোনার পর স্ট্রিট ফুড নাকি বাড়ির টিফিন, এগিয়ে কোন মেনু?

হকারপিছু অর্থসাহায্য়ের কথাও ঘোষণা করা হয়েছিল প্রশাসনের তরফে। কিন্তু বাস্তবের সঙ্গে সেই প্রতিশ্রুতির ফারাক বিস্তর।

করোনার পর স্ট্রিট ফুড নাকি বাড়ির টিফিন, এগিয়ে কোন মেনু?
আপনি কোনটা বেছে নেবেন?
Follow Us:
| Updated on: Dec 13, 2020 | 4:47 PM

“ভাত (food) হবে, রুটি হবে, পরোটা হবে, ম্যাগি হবে, মোমো হবে…। স্যানিটাইজ, স্যানিটাইজ..।”

না! মেনুতে স্যানিটাইজার নেই অবশ্যই। তবে দোকান স্যানিটাইজ করা হচ্ছে নিয়মিত। অথবা খাওয়ার আগে ক্রেতাদের হাত স্যানিটাইজ করার ব্যবস্থা রয়েছে। সেটা বোঝাতেই মেনু আওড়ানোর সঙ্গে-সঙ্গে ‘স্যানিটাইজ, স্যানিটাইজ’ ঘোষণাও সেরে ফেললেন সেক্টর ফাইভে ১২ বছরের দোকানি রঞ্জিত বিশ্বাস।

প্রি-কোভিড (covid 19) পরিস্থিতিতে গমগম করত সেক্টর ফাইভের অফিসপাড়া। এখন সেই চেনা ভিড়ের ছবি নেই। তবে নিউ নর্ম্য়ালে ওয়ার্ক ফ্রম হোমের অপশন কিছু পেশাদার পেয়েছেন বটে। আবার একটা অংশ নিয়মিত ওয়ার্ক ফ্রম অফিস। আর তাতেই প্রায় পাঁচ মাস পরে কিছুটা লক্ষ্মী ধরা দিয়েছে রঞ্জিতের মতো আরও অনেক স্ট্রিট ফুড ব্যবসায়ীর ঘরে।

আরও পড়ুন, শীতে সুস্থ থাকতে মেনুতে এই সব খাবার রাখতেই হবে

কোভিড আমাদের সকলের জীবনের রুট ম্যাপটাই বদলে দিয়েছে অনেকটা। মাস্ক, স্যানিটাইজার এখন দৈনন্দিনের অঙ্গ। নিতান্ত রোজগারের তাগিদে যাঁরা বেরোচ্ছেন, এতদিন হয়তো লাঞ্চে স্ট্রিট ফুডই ভরসা ছিল। কিন্তু রাস্তায় দাঁড়িয়ে বা কেঠো বেঞ্চে বসে হাতে নিয়ে খাওয়ার রেওয়াজ কি বজায় রাখা সম্ভব হয়েছে এই নিউ নর্ম্য়ালে? নাকি স্ট্রিট ফুডের বদলে বাড়ি থেকে নিয়ে আসা টিফিনেই ভরসা রাখছে অফিসপাড়া?

উত্তরটা জানতে সরেজমিনে পৌঁছনোর পর প্রথমেই চমকে দিল রঞ্জিতের প্রোমোশনাল স্ট্র্যাটেজি। “আগে হলে আমার দোকানের সামনে দুপুর একটার সময় দাঁড়াতে পারতেন না। এত ভিড় হত। সাড়ে তিনটের পর আর থাকতাও না বিশেষ কিছু। এখন লোকের ভয় আছে। অনেক চেনা কাস্টমার এসে দেখা করে গিয়েছেন। কিন্তু খাবার খাননি। বলছেন, এখন টিফিন বাড়ি থেকেই আনছি। একদল আবার আসা শুরু করেছেন। তাই বিক্রিও হচ্ছে,” বললেন রঞ্জিত। সেই সঙ্গে তাঁর সংযোজন, “আগে ম্যাগি, মোমো রাখতাম না। এখন রাখছি। দেখলাম, চামচে করে খেয়ে নিচ্ছেন, কিন্তু হাত দিয়ে খেতে চাইছেন না। আমি কিন্তু স্যানিটাইজার রাখছি, সেটা বলে দিচ্ছি কাস্টমারদের।”

home food

এখন অনেকের পছন্দ শুধুমাত্র বাড়ির খাবার।

রঞ্জিতের কথায় সায় দিলেন বছর তিরিশের অনুপম চন্দ্র। বারাসত থেকে সেক্টর ফাইভে আসতে হয় চাকরি সূত্রে। তিনি বললেন, “ভয় লাগছে বাইরে খেতে। অথচ না-খেয়েও উপায় নেই। রোজ লাঞ্চ আনতে পারব না। হাত স্যানিটাইজ করছি খাবার আগে। তবে সত্যি বললে, সব সময় যে মনে থাকছে, তা-ও নয়। এখনও পর্যন্ত কিছু হয়নি। তবে রিস্ক থাকেই।”

নবদিগন্তের তরফে দেবাশিস সেন বললেন, “সেক্টর ফাইভে স্ট্রিট ফুড ব্যবসায়ী ৬০০-র বেশি। এখন বেশিরভাগই বন্ধ। কারণ ৮০ শতাংশ মানুষ বাড়ি থেকে কাজ করছেন। সরকারি নির্দেশে পুলিশ দিয়ে আমরা ভেরিফিকেশন করাচ্ছি। ঠিক কতজন এখন রয়েছেন, তার সঠিক সংখ্যা বলতে পারব না।” অর্থাৎ পরিস্থিতির চাপে এখনও দোকান খুলতেই পারেননি বেশিরভাগ ব্যবসায়ী।

আরও পড়ুন, ওজন কমাতে চান? ডিনারে এই কয়েকটা অভ্যেস তৈরি করুন

“এগ রোল, পরোটা, চাউমিন, ফ্রায়েড রাইস, চিলি চিকেন… আসুন, কী খাবেন…” দু-পা এগিয়েই ফের ডাক। সুমন এবং সুজিত দুই বন্ধুর দোকান। মুর্শিদাবাদের দুই তরুণ গত পাঁচ বছর ধরে সেক্টর ফাইভের দোকানদার। ‘করোনা’ শব্দটা উচ্চারণ করতেই ওঁদের প্রথম প্রতিক্রিয়া, “ওসব ভুলে যান ম্যাডাম, ওসব আর হবে না। আমাদের ফুটপাথের দোকান। চার মাস বসে ছিলাম। এভাবে চলে বলুন? লকডাউন হঠাৎ করেই ঘোষণা হয়েছিল, অনেক লস হয়েছে আমাদের।” সুমন- সুজিত আরও যোগ করলেন, “আগে থেকে মাল তোলা ছিল। এখন নতুন আইটেম কিছু অ্যাড করিনি। কিন্তু কাস্টমার কম তো। কম করেই বানাচ্ছি। স্যানিটাইজার রেখেছি। হাত ধুয়ে-ধুয়ে ছাল উঠে গেল আমাদের। ফালতু খরচ এসব।”

egg roll

অনেকের আবার এখনও ভরসা সেই স্ট্রিট ফুড।

চায়ের আড্ডায় আলাপ হল নবনীতা দত্তর সঙ্গে। তিন বছর ধরে সেক্টর ফাইভ তাঁর কর্মক্ষেত্র। তাঁর অকপট উত্তর, “চেষ্টা করছি, চা ছাড়া আর যেন কিছু বাইরে খেতে না হয়।”

পরিস্থিতির চাপে এখনও বেশিরভাগ ব্যবসায়ীর অবস্থাই যে ভাল নয়, তা ধরা পড়ল সমরেশ মুখোপাধ্যায়ের কথায়। দীর্ঘদিন ধরে সেক্টর ফাইভের ব্যবসায়ীদের নিয়ে বেসরকারি উদ্যোগে কাজ-করা প্রবীণ বললেন, “আগে ব্যবসায়ীর সংখ্যা ছিল ৭০৫। এখন ১৫০। এই পরিস্থিতিতে কাগজে-কলমে ওঁদের অনেক প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।”

আরও পড়ুন, রকমারি ইংলিশ ব্রেকফাস্ট, সঙ্গে মিষ্টিমুখ, খাবেন নাকি?

হকারপিছু অর্থসাহায্য়ের কথাও ঘোষণা করা হয়েছিল প্রশাসনের তরফে। কিন্তু বাস্তবের সঙ্গে সেই প্রতিশ্রুতির ফারাক বিস্তর। রঞ্জিত বিশ্বাস, সুমন-সুজিতদের চেনা ভিড়টার জন্য় আরও কতদিন অপেক্ষা করতে করতে হবে, তার উত্তর সম্ভবত এখনও নেই নিউ নর্ম্য়ালের কাছে।