Bengali Sweets: ২০০ বছর পার, তবুও চাহিদা তুঙ্গে চন্দননগরের বিখ্যাত ‘জলভরা সন্দেশ’!
ঐতিহ্যবাহী সম্মানকে রক্ষা করতে এখনও এই মিষ্টির চাহিদা রয়েছে তুঙ্গে। বাংলার নানা জেলায় বিভিন্ন রকমের মিষ্টির ইতিহাস বাংলার নিজস্ব সম্মান, গর্ব।
বাঙালির খাওয়ার অভ্যেসেই মিষ্টি খাওয়ার অভ্যেস রয়েছে। কবে থেকে যে বাঙালি মিষ্টিপ্রেমী, তা হিসেবে খাতায় লেখা নেই। শেষপাতে মিষ্টিমুখ না হলে বাঙালির খাবার হজম হয় না। তা সে ব্রেকফাস্টই বলুন, বা লাঞ্চ-ডিনার। মিষ্টি দই, ডিনার রসগোল্লা বা চমচম, কিংবা অতিথি আপ্যায়নেও এক প্লেট মিষ্টি সাজিয়ে দেওয়া ভোজনরসিক বাঙালির স্বভাব। খিদে পেলে মিষ্টি, ভরপেটে মিষ্টি লাগবেই।
মিষ্টির সঙ্গে বাঙালির ইতিহাস প্রাচীন কালথেকেই। বাঙালি ঐতিহ্যকে বহন কে এখনও মিষ্টি বানিয়ে চলেছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল জলভরা সন্দেশ। ঐতিহ্যবাহী সম্মানকে রক্ষা করতে এখনও এই মিষ্টির চাহিদা রয়েছে তুঙ্গে। বাংলার নানা জেলায় বিভিন্ন রকমের মিষ্টির ইতিহাস বাংলার নিজস্ব সম্মান, গর্ব। ১৮১৮ সাল। দেশে তখন ইংরেজ সরকারের রাজত্ব। সেইসময়ে হুগলি জেলার ভদ্রেশ্বরের জমিদার বংশের পরোয়ানায় জন্ম হয় এই জলভরা সন্দেশের। হুগলি জেলায় সূর্য মোদকের হাতেই জন্ম হয় এই সন্দেশের। ২০০ বছর পার করলেও আজও এই সন্দেশের চাহিদা ও জনপ্রিয়তা তুঙ্গে।
হুগলি জেলার চন্দননগরে যেমন বিখ্যাত জগদ্ধাত্রী পুজো, তেমনই প্রসিদ্ধ জলভরা সন্দেশ। শুরুটা হয়েছিল ভদ্রেশ্বরের তেলেনিপাড়ার মোদক সুইটস-এ। যার কর্মকর্তা ছিলেন স্বয়ং সূর্য মোদক। তৎকালীন বন্দোপাধ্যায় জমিদার বাড়ির নারীমহলের দাবিতে নতুন জামাইকে ঠকানোর জন্য এক অভিনব কায়দায় এই জলভরা সন্দেশ তৈরির পরিকল্পনা করেন তিনি।
পদ্ধতি
খাঁটি গরুর দুধের ছানা আর চিনির পাক, তারপর হাতে ডলে তাকে একেবারে নরম করে নেওয়া হয়। এরপর ছাঁচে সেই পাক করা সন্দেশের কিছুটা পরিমাণ দিয়ে হাতের সাহায্যে ছোটো একটা গর্ত করে নিয়ে তাতে ঢেলে দেওয়া হয় সুগন্ধী গোলাপ জল, আর তারপর আবার সন্দেশ ভরে ছাঁচের মুখটা সিল করে দিলেই প্রস্তুত হয়ে যায় জলভরা সন্দেশ।
আজও সারা বছর গোলাপ জলের যোগান আসে কনৌজ থেকে। শীতকালে গোলাপ জলের জায়গায় আসে সুস্বাদু নলেন গুড়। বাইরে থেকে বোঝবার উপায় নেই কিন্তু ভিতরে যে গোলাপ জল কিংবা গুড়ের পুকুর লুকানো রয়েছে তা বোঝার সাধ্য কারোর নেই! ময়রার ভেল্কিতে জব্দ হয়েছিলেন জমিদারের জামাইটিও।
বর্তমানে শুধু হুগলি জেলা নয় এই জলভরা সন্দেশের জনপ্রিয়তা বাংলার প্রায় সর্বত্র। সারাবিশ্বেও। অনেকেই এই মিষ্টিকে ‘তালশাঁস’ বলেও চেনে। তালশাঁস-এর যেমন ভিতরে জল ভরা থাকে ঠিক তেমনই এই জলভরা সন্দেশ, আর তাই এই তুলনার রেশ থেকে যায়।
আরও পড়ুন: Bengali Sweet: আসছে জগদ্ধাত্রী পুজো! বাড়িতেই তৈরি করুন কৃষ্ণনগরের বিখ্যাত ও মন ভাল করা মিষ্টি