AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

নতুন প্রজন্মের কাছে উজ্জ্বল কেরিয়ারের হাতছানি দিচ্ছে সাইবার সিকিউরিটি! কী ভাবে জানেন?

Cyber Security: আইটি ও ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার্থীদের জন্য সাইবার সিকিউরিটি এখন আর একটি বিকল্প নয়। এটি একটি ক্রমবর্ধমান ক্ষেত্র, যেখানে রয়েছে সুযোগ, উদ্দেশ্যের স্বীকৃতি এবং বৈশ্বিক প্রাসঙ্গিকতার এক সুস্পষ্ট পথ।

নতুন প্রজন্মের কাছে উজ্জ্বল কেরিয়ারের হাতছানি দিচ্ছে সাইবার সিকিউরিটি! কী ভাবে জানেন?
| Updated on: Apr 30, 2025 | 11:55 PM
Share

আজকের দিনে, সাইবারস্পেস আর কেবল একটি দূরবর্তী বাস্তবতা নয়—এটি এখন ব্যবসা, সরকার এবং ব্যক্তিদের দৈনন্দিন কাজের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এই বাস্তবতা থেকে সৃষ্টি হয়েছে একটি প্রাণবন্ত ও দ্রুত সম্প্রসারিত পেশাগত ক্ষেত্র—সেই ক্ষেত্র যারা ডিজিটাল জগতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো রক্ষা করে থাকে।

আইটি ও ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার্থীদের জন্য সাইবার সিকিউরিটি এখন আর একটি বিকল্প নয়। এটি একটি ক্রমবর্ধমান ক্ষেত্র, যেখানে রয়েছে সুযোগ, উদ্দেশ্যের স্বীকৃতি এবং বৈশ্বিক প্রাসঙ্গিকতার এক সুস্পষ্ট পথ। ডেটা ব্রিচ ও র‍্যানসমওয়্যার আক্রমণ যত বেশি জটিল ও সূক্ষ্ম হচ্ছে, ততই সাইবার সিকিউরিটি এমন একটি পেশা হয়ে উঠছে যেখানে সমস্যা সমাধান ও প্রভাব একত্রে মিশে আছে। এই বিষয়ে গভীর অন্তর্দৃষ্টি দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞ প্রফেসর (ড.‌) কৈলাশ চন্দ্র বন্দ্যু, অধ্যাপক, কম্পিউটার সায়েন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ।

সাইবার সিকিউরিটি এখন কেবল ব্যাকএন্ড আইটি ফাংশন নয়, এটি ব্যবসার অগ্রভাগের একটি বিষয়। ২০২৪ সালে সাইবার অপরাধজনিত বৈশ্বিক ক্ষতি যেখানে ৯.২২ ট্রিলিয়ন ডলারে দাঁড়াবে বলে অনুমান, ২০২৮ সালের মধ্যে তা বেড়ে ১৩.৮২ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে। স্বাস্থ্য, অর্থনীতি, খুচরা ব্যবসা কিংবা উৎপাদন—প্রতিটি খাতই এখন তাদের ডিজিটাল সম্পদ রক্ষায় বিনিয়োগ করছে।

ভারতে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা এবং ডিজিটাল সেবার দ্রুত বৃদ্ধির ফলে সাইবার সিকিউরিটি পেশাদারদের চাহিদা বেড়েছে অভাবনীয়ভাবে। এখন আর কেবল কোডার নয়, বরং ইথিক্যাল হ্যাকার, রিস্ক অ্যানালিস্ট, ফরেনসিক ইনভেস্টিগেটর এবং সাইবার নীতিনির্ধারকদের প্রয়োজন রয়েছে যারা ডিজিটাল ট্রাস্ট নিশ্চিত করতে পারেন। এই প্রবণতা প্রযুক্তি গ্র্যাজুয়েটদের জন্য এক লাভজনক ক্যারিয়ার ইকোসিস্টেম তৈরি করছে।

শিক্ষার্থীদের জন্য একাডেমিক প্রস্তুতির ধাপ

কম্পিউটার সায়েন্স, আইটি, ইলেকট্রনিকস ও ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য সাইবার সিকিউরিটি হলো এক স্বাভাবিক অগ্রগতি। প্রোগ্রামিং, নেটওয়ার্কিং ও ডেটাবেস ম্যানেজমেন্টের মতো বিষয় যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনই নিরাপত্তা সরঞ্জাম ও ফ্রেমওয়ার্কের প্রশিক্ষণ শিক্ষার্থীদের চাকরির জন্য তৈরি করে। বহু বিশ্ববিদ্যালয় ও অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ইথিক্যাল হ্যাকিং, নেটওয়ার্ক সিকিউরিটি, ক্লাউড সিকিউরিটি ও থ্রেট ইন্টেলিজেন্স প্রোগ্রাম সরবরাহ করছে, যাতে শিক্ষার্থীরা শুরুর দিকেই হাতে-কলমে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারে।

ভবিষ্যত গড়ার বিভিন্ন পেশা

সাইবার সিকিউরিটি এমন এক শিল্পক্ষেত্র, যেখানে রয়েছে নানান রকমের ভূমিকা এবং বিভিন্ন ধরনের দক্ষতার চাহিদা।

সিকিউরিটি অ্যানালিস্ট: নেটওয়ার্ক দুর্বলতার প্রথম প্রতিক্রিয়াদাতা, বেতন শুরু হয় ₹৪–৯ লাখ বার্ষিক।

ইথিক্যাল হ্যাকার: সিস্টেমে দুর্বলতা খুঁজে বের করে আগে থেকেই রক্ষা করে, বেতন ₹৬–১২ লাখ বার্ষিক।

সিকিউরিটি আর্কিটেক্ট: সুরক্ষিত অবকাঠামো তৈরি করেন, অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বেতন ₹১৫–৩৫ লাখ বার্ষিক।

ডিজিটাল ফরেনসিক অ্যানালিস্ট: সাইবার আক্রমণের পর তদন্ত করেন ও প্রমাণ সংগ্রহ করেন, বেতন ₹২.২–৮ লাখ বার্ষিক।

রিস্ক অ্যান্ড কমপ্লায়েন্স ম্যানেজার / সাইবারসিকিউরিটি অডিটর: নিরাপত্তা নীতিমালা মেনে চলছে কিনা তা নিশ্চিত করেন, বিশেষ করে ব্যাংকিং ও হেলথকেয়ার খাতে।

কেন সাইবার সিকিউরিটি একটি ব্যতিক্রমী ক্যারিয়ার? এই পেশার সবচেয়ে বড় শক্তি হলো এর বৈশ্বিক প্রাসঙ্গিকতা। সাইবার অপরাধ কোনও সীমান্ত মানে না, তাই সঠিক দক্ষতাসম্পন্ন ভারতীয় পেশাজীবীরা বিশ্বব্যাপী, যেমন—যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও জার্মানিতে অত্যন্ত চাহিদাসম্পন্ন। রিমোট ওয়ার্কিং সুবিধার কারণে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গেও কাজ করার সুযোগ তৈরি হয়েছে।

সাইবার সিকিউরিটি এমন এক ক্ষেত্র যেখানে নিত্যনতুন হুমকি নতুন দক্ষতার জন্ম দেয়। যারা পরিবর্তনকে উপভোগ করেন এবং বুদ্ধিবৃত্তিক চ্যালেঞ্জ ভালোবাসেন, তাঁদের জন্য এটি একটি আদর্শ ক্ষেত্র। সঠিক সার্টিফিকেশন, অভিজ্ঞতা ও ডিজিটাল উপস্থিতি থাকলে দ্রুত নেতৃত্বের পর্যায়ে পৌঁছনো সম্ভব।

ক্যাম্পাস থেকে ক্যারিয়ারের দিকে পথচলা এই যাত্রা শুরু হয় স্নাতক হওয়ার আগেই— কোডিং প্রতিযোগিতা, টেক হ্যাকাথন, স্টার্টআপে ইন্টার্নশিপ বা সাইবারসিকিউরিটি ক্লাবে যোগদান এই পথ সুগম করে। বাস্তবভিত্তিক সমস্যা সমাধান ও প্রজেক্টে কাজ করা ভবিষ্যৎ নিয়োগদাতাদের আকৃষ্ট করে। এছাড়া মেন্টর খোঁজা, প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ ও সেমিনারে যোগ দেওয়াও জ্ঞান ও আত্মবিশ্বাস বাড়ায়।

সাইবার সিকিউরিটি শুধু একটি চাকরি নয়—এটি এক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। আইটি ও ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য এটি একটি ভবিষ্যতমুখী, নিরবচ্ছিন্ন বিকাশমান ক্যারিয়ার, যার রয়েছে একটি স্পষ্ট উদ্দেশ্য। প্রোগ্রামিং, নীতিমালা, অ্যানালিটিক্স বা কৌশল—আপনার দক্ষতার জন্য সঠিক জায়গা অপেক্ষা করছে এই জগতে।

আমাদের পৃথিবী যখন দ্রুত ডিজিটাল হয়ে উঠছে, তখন সাইবারস্পেসের অভিভাবকরাই আগামী দশকের প্রযুক্তিগত বিবর্তনের পথপ্রদর্শক হবে। প্রবেশের সময় এখনই, আর যাঁরা এই পথে নামবেন, তাঁদের জন্য সম্ভাবনার শেষ নেই।