AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

Bengali Phrases: ‘ভাঁড়ে মা ভবানী’, শূন্য পকেট বোঝাতে কেন এই কথা বলা হয় জানেন?

Bengali Phrases: মা ভবানীর সঙ্গে শূন্য ভাঁড়ারের বা কী সম্পর্ক? তিনি তো দেবী তাহলে তাঁর ভাঁড়ার শূন্য হয় কী করে?

Bengali Phrases: 'ভাঁড়ে মা ভবানী', শূন্য পকেট বোঝাতে কেন এই কথা বলা হয় জানেন?
| Updated on: Sep 21, 2024 | 3:34 PM
Share

‘ভাঁড়ে মা ভবানী’ ছোটবেলা থেকেই এই কথা কম-বেশি শুনেছি আমরা সকলেই। পকেটে টাকা না থাকলে বা শূন্য ফাঁকা পকেট বোঝাতে এই বাগধারা ব্যবহার করে থাকি আমরা। আবার কেন্দ্র থেকে রাজ্য সরকারের কোষাগার ফাঁকা হয়ে গেলেও তা বোঝাতে এই শব্দ বন্ধ ব্যবহার করা হয়। কিন্তু ‘ভাঁড় মা ভবানী’ই কেন? অন্য কোনও শব্দ ব্যবহার করেও তো এই কথা বোঝান যেত। মা ভবানীর সঙ্গে শূন্য ভাঁড়ারের বা কী সম্পর্ক? তিনি তো দেবী তাহলে তাঁর ভাঁড়ার শূন্য হয় কী করে?

‘ভাঁড়ে মা ভবানী’ বাগধারা তিনটি শব্দের সমন্বয়ে গঠিত। ভাঁড় অর্থাৎ মাটি দিয়ে তৈরি কলসি জাতীয় পাত্র। মা শব্দের বিস্তার অনেক। যেমন সনাতন ধর্মীয় সমস্ত দেবীদের মা সম্বোধন করা হয় এমন কি মাতৃস্থানীয়াদেরও মা বলার রীতি। আবার মা অর্থে যিনি জন্মদাত্রী, দয়াময়ী ও মমতাময়ী বটে। আর ভবানী কথার অর্থ যিনি জগন্মাতা ও জগতের ত্রাণ কর্ত্রী। তিনি আবার দেবাদিদেব মহাদেবের ঘরণী।

তবে বাংলা বাগধারা ‘ভাঁড়ে মা ভবানী’র ভাঁড় শব্দটি এসেছে ভাঁড়ার শব্দ থেকে। ভাঁড়ার অর্থাৎ ভাণ্ডার বা যেখানে খাদ্য দ্রব্যাদি মজুত করে রাখা হয়। আবার ব্যাপক অর্থে সব রকমের মূল্যবান জিনিস গচ্ছিত করে রাখা হয় তাকে ভাঁড়ার বলা হয়।

মা ভবানীর সঙ্গে ভাঁড়ার খালির সম্পর্ক এক শাস্ত্রগত ব্যাখ্যা দেওয়া যেতে পারে। মা ভবানী হলেন ত্যাগের বা রিক্ততার প্রতীক। যাঁরা ভবানীর উপাসনা বা সাধনা করেন তাঁরা আর যাই হোক না কেন বিপুল ধন-সম্পদ বা ঐশ্চর্যের আশা রাখেন না। সেই ভাবে ভাঁড়ার শূন্য হলে তা মা ভবানীর সঙ্গে তুলনা করে বলা হয় ‘ভাঁড়ে মা ভবানী’। তবে এক্ষেত্রে কেউ কেউ বলবেন মা ভবানী হলেন জগন্মাতা। তিনি যেমন ত্যাগী তেমনি তিনি তো তিনিই আমাদের মা, তিনিই আবার লক্ষ্মী রূপেন সংস্থিতা। তাহলে তিনি রিক্ততার প্রতীক কি করে হবেন?

দ্বিতীয় যে বিষয়টি প্রচলিত তার সঙ্গে গ্রাম-বাংলার এক যোগ রয়েছে। আগে কার্ত্তিক-অগ্রহায়ণ মাসে ধান কেটে বাড়িতে নিয়ে আসার চল ছিল। তারপর গৃহস্থ বধূরা সেই ধানকে চালে পরিণত করে বড় বড় মাটির জ্বালায় বা ভাঁড়ে করে রেখে দিত। সেই চালই পরবর্তী সময়ে পরিবারের সবাই খেতো। গেরস্থ বাড়িতে ধানের থেকে চাল বানিয়ে বড় মাটির ভাঁড়ে রেখে দেওয়ার সময়ে বাড়ির কর্ত্রী সেই মাটির ভাঁড়ের নিচের দিকে মা লক্ষ্মী বা মা ভবানী একটি মূর্তি রেখে দিতো। মায়ের মূর্তিটি দেখা দিলেই বোঝা যাবে যে ভাঁড়ের চাল শেষ হয়ে এসেছে। এবার আবার করে ধান সেদ্ধ করে শুকিয়ে চাল বানাতে হবে। সবাই অবশ্য মা লক্ষ্মীর মূর্তি রাখত এমন নয়। কেউ কেউ মা কালীর মূর্তি রাখত। গ্রামাঞ্চলে মা ভবানী হলেন মা লক্ষ্মীর প্রতিরূপ। তবে চাল ফুরিয়ে এলে মা লক্ষ্মী ফুরিয়ে এসেছে বা কমে গেছে এমন কথা বলা যায় না। এখনো গৃহস্থ বাড়িতে চাল নেই বলার চল নেই। বলা হয় ঘরে চাল বাড়ন্ত। তাই মজুত চাল কমে এলে বলা হতো ‘ভাঁড়ে মা ভবানী’ দেখা দিয়েছেন অর্থাৎ মজুত চাল কমে গিয়েছে। সেই থেকেই কোষাগারের শূন্যতা বোঝাতেও এই বাগধারার প্রচলন শুরু হয়।