গণদেবতা মহাপ্রভু জগন্নাথের রথ টানতে পারা ভাগ্যের ব্যাপার। তাই রথের রশি ছোঁয়া বা স্পর্শ করা একটি প্রচলিত রীতি রয়েছে। পুরীর রথযাত্রা বিশ্ববিখ্যাত। আমরা যাকে রশি বলি, ওড়িশায় ওড়িয়া ভাষায় ‘দৌড়ি’ বলা হয়।
দড়িকে সর্পের প্রতীক হিসেবে ধরা হয়। জগন্নাথদেবের রথের প্রতিটি অংশই অত্যন্ত পবিত্র। তাই রথ, রথের চাকা ও রশি বা যে কোনও অংশ ছোঁয়ার আকূল চেষ্টা দেখা যায় ভক্তদের মধ্যে।
শুধু তাই নয়, ভক্তদের বিশ্বাস, জগন্নাথদেবের রথের রশি টানা বা ছোঁয়া অত্যন্ত শুভ। রশি ছুঁলেই সব ধরনের পাপ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। কথিত আছে তেত্রিশ কোটি ভগবান ওই রথের বিরাজ করেন। সঙ্গে জগন্নাথ-সুভদ্রা-বলরামের অবস্থানও থাকেই।
রথের পাশাপাশি রশি ছুঁলেই তেত্রিশ কোটি দেব-দেবীকে স্পর্শ করার সামিল। তাই লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রবল আগ্রহের সঙ্গে রথ টানা ও রশিতে অনন্ত একবার স্পর্শ করতে চেষ্টা করেন। অনেকেরই মতে, পুরাণ অনুযায়ী, জগন্নাথের রথে দড়ি স্পর্শ করলে পুনর্জন্মের কষ্ট ভোগ করতে হয় না। তাই রথ দর্শন করার পরই দড়ি ধরে টান দিতে পারলে পুণ্যলাভ করেন ভক্তরা।
আসলে জগন্নাথদেব রথে বামন অবতার হিসেবে অধিষ্ঠান করেন। তাই রথের রশি ধরে টান দেওয়ার মত পবিত্র কাজ আর দ্বিতীয় নেই। অনেকের মতে, রশি স্পর্শ করলে অশ্বমেধ যজ্ঞের ফল লাভ হয়।
শুধু পুরীর বা মাহেশের রথ নয়, পাড়ার ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা যখন ছোট-বড় রথ নিয়ে বের হয়, তখন বড়রা পাশ দিয়ে গেলে বা রথ দেখে বাড়ির বাইরে বের হয়ে একবার অন্তত রথের দড়ি ধরে টানার ইচ্ছে বিফলে দিতে পারেন না।
রথের রশি স্পর্শ করার সময় ভক্তিভরে জগন্নাথদেবকে সমার্পন করলেই পূণ্যিলাভ মেলে। শ্রীপ্রভুর আশীর্বাদ পাওয়া যায় এতেই। সবকিছুর উর্ধ্বেই রয়েছে মানুষের ভক্তি। বর্ষিত হয় জগন্নাথের অপার আশীর্বাদ।
জগন্নাথ রথযাত্রায় মোট তিনটি রথ থাকে। ভগবান জগন্নাথের রথের নাম 'নন্দীঘোষ'। এই রথ লাল ও হলুদ রঙের। যেখানে দেবী সুভদ্রা কালো ও লাল রঙের 'দর্প দালান' রথে বসে আছেন। লাল-সবুজ রথে 'তালধ্বজ'-এ বসেন ভাই বলরাম।
এই তিনটি রথের মধ্যে সবচেয়ে লম্বা ও সাইজে বিশাল হল ভগবান জগন্নাথের। যার উচ্চতা ৪৫.৫ ফুট। বাকি দুটি রথের উচ্চতা এর চেয়ে দেড় ফুট কম।
ভগবান জগন্নাথ ও তাঁর ভাই-বোনের রথে কোনও পেরেক বা আধুনিক যন্ত্রের ছোঁয়া নেই। সব রথগুলি তৈরিতে কোনও ধাতুও ব্যবহার করা হয় না। এই রথগুলি শুধুমাত্র নিম কাঠ থেকে তৈরি করা হয়। এমনকি হাতুরিও বানানো হয় কাঠের।
এই বিশেষ রথ তৈরির জন্য কাঠ বাছাই শুরু হয় বসন্ত পঞ্চমীর দিন ও সমস্ত উপকরণ সংগ্রহের পর অক্ষয় তৃতীয়ার দিন শুরু হয় রথ তৈরির কাজ। প্রসঙ্গত ভগবান জগন্নাথের রথে মোট ১৬টি চাকা থাকে। এই রথটি বলরাম ও বোন সুভদ্রার রথের চেয়ে কিছুটা বড়।
আদি রীতি মেনে, রথগুলি প্রস্তুত হলে, রাজা গজপতি প্রথমে বিশেষ আচার মেনে পুজো করেন। এই সময়, রাজা সোনার ঝাড়ু দিয়ে রথের মণ্ডপ পরিষ্কার করেন। তারপর সোনার ঝাড়ু দিয়ে রথযাত্রার পথও পরিষ্কার করেন তিনি।