Lakshmi Puja 2021: অনেক বেলা করে ঘুমানোর অভ্যাস, লক্ষ্মীর আরাধনা করলেও ঘর হবে সেই লক্ষ্মী-ছাড়া!
প্রপঞ্চসার তন্ত্রে লক্ষ্মী দেবীর যে নয়টি শক্তির পরিচয় পাওয়া যায়, তা হল- বিভূতি, উন্নতি, কামিত্ম, হৃষ্টি, কীর্তি, সন্নতি, ব্যুষ্টি, উৎকৃষ্টি ও ঋদ্ধি।
বিষ্ণু পুরাণ, ভাগবত, মহাভারত প্রভৃতি গ্রন্থ অনুসারে লক্ষ্মী দেবীর উৎপত্তি হয়েছে সমুদ্র থেকে। দুর্বাসা মুনির শাপে স্বর্গ একদা শ্রীহীন বা লক্ষ্মী-ছাড়া হয়ে যায়। তখন বিষ্ণুর পরামর্শে স্বর্গের ঐশ্বর্য ফিরে পাবার জন্য দেবগণ অসুরদের সাথে নিয়ে সমুদ্র-মন্থন শুরু করেন। সেই ক্ষীর-সমুদ্র মন্থনের ফলে উঠে আসল নানা রত্ন, মণি-মাণিক্য, অমৃতসুধা আরও কত কি। এসব ছাড়াও সমুদ্র-মন্থনের ফলে উঠে আসলেন লক্ষ্মী লক্ষ্মী দেবী এবং ঠাই পেলেন বিষ্ণুর বক্ষে। সমুদ্র থেকে দেবীর উদ্ভব বলে দেবীকে বলা হয় সমুদ্রোদ্ভবা।
সমুদ্র হল অশেষ ধন-রত্নের আধার। ধনরত্নে পরিপূর্ণ বলে সমুদ্রকে রত্নাকরও বলা হয়। যেহেতু লক্ষ্মী দেবী হলেন ধন-সম্পদের দেবী সেহেতু সমুদ্র থেকে দেবী লক্ষ্মীর উৎপত্তির কাহিনী কল্পিত হওয়া বিচিত্র কিছু নয়। বিষ্ণু হলেন জগতের প্রতিপালক। প্রজাদের লালন-পালন করতে ধন-রত্নের প্রয়োজন রয়েছে আর সেজন্যই বিষ্ণু ধন-ঐশ্বর্যের লক্ষ্মী দেবীকে বুকে স্থান দিলেন।
দেবীর রূপ
ডানদিকের উপরের হস্তে পদ্ম ও নিচের হস্তে বরমুদ্রা এবং বামদিকের উপরের হস্তে পদ্ম ও নিচের হস্তে অভয়মুদ্রা ধারণ করেছেন। তাঁর মস্তকে রত্নমুকুট, পরিধানে পট্টবস্ত্র এবং তিনি পদ্মে উপবিষ্টা আছেন।চণ্ডীতে যে মহালক্ষ্মীর উল্লেখ আছে- তিনি অষ্টাদশ ভূজা। তিনি অষ্টাদশ হস্তে অক্ষমালা, পরশু, গদা, বাণ, বজ্র, পদ্ম, ধনু, কমণ্ডলু, দণ্ড, শক্তি, অসি, ঢাল, ঘণ্টা, শঙ্খ, সুরাপাত্র, শূল, পাশ ও সুদর্শন চক্র ধরে আছেন।
লক্ষ্মী দেবীর অবতার
বিষ্ণুর মত লক্ষ্মী দেবীরও অবতার রয়েছে। সীতা, রুক্মিণী, রাধা প্রভৃতি দেবী লক্ষ্মীর অবতার। প্রপঞ্চসার তন্ত্রে লক্ষ্মী দেবীর যে নয়টি শক্তির পরিচয় পাওয়া যায়, তা হল- বিভূতি, উন্নতি, কামিত্ম, হৃষ্টি, কীর্তি, সন্নতি, ব্যুষ্টি, উৎকৃষ্টি ও ঋদ্ধি। মৎস্য পুরাণ মতে সরস্বতীর অষ্টশক্তির এক শক্তি হলেন লক্ষ্মী। সরস্বতীর অষ্টশক্তি হল লক্ষ্মী, মেধা, ধরা, পুষ্টি, গৌরী, তুষ্টি, প্রভা ও সতী। প্রকৃতপক্ষে দেবীর এক একটি শক্তি হল দেবীর এক একটি গুণ বা বৈশিষ্ট্য। লক্ষ্মী শুধু ধনের দেবী নয়। তিনি কৃষিসম্পদ, খনিজদ্রব্য, পশুসম্পদ, শিল্পসম্পদ ও বাণিজ্যেরও দেবী।
লক্ষ্মী দেবীর প্রিয় ও অপ্রিয়
লক্ষ্মী দেবীর কোন কোন স্থান প্রিয় আর কোন কোন স্থান অপ্রিয়, তা ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে উল্লেখ আছে।
দেবী বলেছেন- যে সকল গৃহে গুরু, ঈশ্বর, পিতামাতা, আত্মীয়, অতিথি ও পিতৃলোক রুষ্ট হন সে সকল গৃহে আমি প্রবেশ করি না। আমি সে সকল গৃহে যেতে ঘৃণা বোধ করি, যে সকল ব্যক্তি স্বভাবতঃ মিথ্যাবাদী, সর্বদা কেবল নাই-নাই বলে, যারা দুর্বলচেতা এবং দুঃশীল, যারা সত্যহীন মিথ্যা সাক্ষ্য দান করে, বিশ্বাসঘাতক ও কৃতঘ্ন, যে সকল পাপী সর্বদা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত, ভয়গ্রস্ত শত্রুগ্রস্ত, ঋণগ্রস্ত, অতি কৃপণ, দীক্ষাহীন, শোকার্ত, মন্দবুদ্ধি সম্পন্ন, স্ত্রী-বশীভূত, কুলটার পতি, দুর্বাক, কলহপরায়ণ, যারা ভগবানের পূজা ও তাঁর নাম-গুণাগুণ-কীর্তনে বিমুখ, যারা শয়নের পূর্বে পা ধোয় না, নগ্ন হয়ে শয়ন করে, বেশী ঘুমায় অথবা প্রভাতে, সায়াহ্নে বা দিনে নিদ্রা যায়, যাদের দাঁত অসংস্কৃত, পরিধেয় বস্ত্র মলিন এবং হাত বিকৃত তাদের গৃহে আমি কখনো গমন করি না।
আমি সে গৃহেই বাস করি, যে সকল গৃহে সাদা পায়রা রয়েছে, যেখানে গৃহিনী উজ্জ্বল ও সুশ্রী, যেখানে কলহ নাই, ধানের বর্ণ-স্বর্ণের মত, চাল রূপার মত এবং অন্ন-তুষহীন। যে গৃহস্থ পরিজনের মধ্যে ধন ও ভোগ্যবস্ত্ত সমান ভাগ করে ভোগ করেন, যিনি মিষ্টভাষী বৃদ্ধগণকে সেবা করেন, প্রিয়দর্শন, স্বল্পভাষী, অদীর্ঘসূত্রী অথাৎ কোন কাজে অধিক সময় ব্যয় করেন না, ধার্মিক, জিতেন্দ্রিয়, বিদ্যান, অগর্বিত, যিনি জনগণের সেবাপরায়ণ ও পরকে পীড়া দেন না, যিনি ধীরে সণান করেন, দ্রুত আহার করেন, ফুল তোলার পর গন্ধ নেন না, পরস্ত্রী দর্শন করেন না এবং সংযত সে ব্যক্তিই আমার প্রিয়।
আরও পড়ুন: Lakshmi Puja 2021: পুরোহিত ছাড়াই বাড়িতে কীভাবে কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো করবেন, জেনে নিন…