AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

Shri Hangseshwari Temple: বদলে বদলে যায় মায়ের রূপ! এই মন্দিরে একবার ঢুকলে বেরনো মুশকিল

হংসেশ্বরী মন্দিরকে তান্ত্রিক গোলকধাঁধা বললে ভুল বলা হবে না। কারণ তন্ত্রমতে মানবদেহে ৫টি নাড়ির মতো এই মন্দিরে বিভিন্ন স্থান দিয়ে পাঁচটি মূল সিঁড়ি উঠে গিয়েছে। মন্দিরের গর্ভগৃহে পাথরের এক বেদী। তার উপর দেবী এখানে চর্তুভুজা।

Shri Hangseshwari Temple: বদলে বদলে যায় মায়ের রূপ! এই মন্দিরে একবার ঢুকলে বেরনো মুশকিল
বদলে বদলে যায় মায়ের রূপ! এই মন্দিরে একবার ঢুকলে বেরনো মুশকিল
| Updated on: Aug 31, 2025 | 12:37 PM
Share

একবার ঢুরলে বেরনো কিন্তু বেশ মুশকিল! সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠলেই বিচিত্র গোলকধাঁধা। কোনও পথপ্রদর্শক ছাড়া একা একা বের হতে পারবেন বলে তো মনে হয় না! বয়স দুশোরও বেশি। এই মন্দিরে একসময় আসতেন স্বয়ং রামকৃষ্ণদেব। এমনকী এই মন্দির তৈরির পথটাও খুব একটা সুগম ছিল না। পদে পদে বাধা। বাংলা নয়, মন্দির তৈরির জন্য কারিগররা এসেছিলেন রাজস্থানের জয়পুর থেকে। পাথর এসেছিল উত্তরপ্রদেশের চুনার থেকে। নিশ্চয়ই আপনাদের মনেও এতক্ষণে ঘনাচ্ছে রহস্যের মেঘ। নিশ্চয়ই ভাবছেন কোন মন্দিরের কথা বলছি! বেশি দূরে নয়, আপনার বাড়ির কাছেই রয়েছে এই রহস্যময় মন্দির! আজ সেই গল্পই চলুন জেনে নেওয়া যাক।

কথা হচ্ছে বাঁশবেড়িয়ার হংসেশ্বরী মন্দির নিয়ে। আজ বাংলার এই ঐতিহাসিক মন্দিরের রহস্যময় গল্প নিয়েই চলুন নতুন কিছু জেনে নিই। আসলে কী জানেন, হংসেশ্বরী মন্দিরকে তান্ত্রিক গোলকধাঁধা বললে ভুল বলা হবে না। কারণ তন্ত্রমতে মানবদেহে ৫টি নাড়ির মতো এই মন্দিরে বিভিন্ন স্থান দিয়ে পাঁচটি মূল সিঁড়ি উঠে গিয়েছে। মন্দিরের গর্ভগৃহে পাথরের এক বেদী। তার উপর দেবী এখানে চর্তুভুজা। এক পা ভাঁজ করে, মা অধিষ্ঠান করছেন পদ্মাসনে। আর অপর পা, মহাদেবের বুক পর্যন্ত ঝুলছে।

এই মন্দিরের পরতে পরতে রয়েছে তন্ত্র সাধনার যোগ। সময়টা ১৭৯২ থেকে ১৭৯৪। রাজা নৃসিংহদেব তখন রয়েছেন বেনারসে। শোনা যায়, সেই বেনারসে তাঁর তন্ত্র চর্চায় হাতেখড়ি। বিশেষ করে মানবতন্ত্রের ‘কুণ্ডলিনী’ ও ‘ছয় চক্রীয় কেন্দ্র’ নিয়েই তাঁর চর্চা ছিল। তন্ত্রসাধনা শেষে বাঁশবেড়িয়ায় ফেরেন। জমিজমা ও বৈষয়িক কাজে তাঁর মন ছিল না। ঠিক তখনই নৃসিংহদেবের মাথায় আসে রাজপ্রাসাদের কাছে এক মন্দির তৈরির পরিকল্পনা। যার মূল আধার হবে তন্ত্র। যেমন ভাবা, তেমন কাজ। ‘কুণ্ডলিনী ও ছয় চক্রীয় কেন্দ্র’-র উপর ভিত্তি করে বাঁশবেড়িয়ায়, যার আগের নাম ছিল বংশবাটী, সেখানে শুরু হয় মন্দির নির্মাণ।

তন্ত্র-মন্ত্রে ঘেরা এক আজানা কাহিনী

আমাদের দেহে সুষুম্নাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে রয়েছে ইরা, পিঙ্গলা, বজ্রাক্ষ, সুষুম্না এবং চিত্রিণী নামে মোট পাঁচটি নাড়ি। আর সুষুম্নাকাণ্ড বরাবর রয়েছে ৬টি চক্র বা ষড়চক্র। সবচেয়ে নীচে যে চক্রটি রয়েছে তার নাম মূলাধার চক্র। এই মূলাধার চক্রেই থাকে সাপের মতো গুটিয়ে থাকে কুলকুণ্ডলিনী। রাজা নৃসিংহদেব এই কুলকুণ্ডলিনী তত্ত্বকেই হংসেশ্বরী মন্দিরের স্থাপত্যে ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু নিয়তির খেলা! মন্দির তৈরির কাজ শুরু করলেও, শেষ করে যেতে পারেননি ধর্মপ্রাণ রাজা নৃসিংহদেব। এরপর স্বামীর স্বপ্নপূরণে কোমর বাঁধলেন স্ত্রী, রানি শঙ্করী। তাঁর হাতেই পূর্ণ রূপ পায় হংসেশ্বরী মন্দির।

৭০ ফুট উচু হংসেশ্বরী মন্দিরটি দক্ষিণমুখী। তার চারিদিকে বারান্দা ও সামনে উন্মুক্ত ইট বাঁধানো উঠোন। তন্ত্র মতে তৈরি এই পাঁচতলা মন্দিরটির আটটি কোণে ৮টি, মধ্যস্থলে ৪টি ও কেন্দ্রস্থলে ১টি মিলে মোট ১৩টি মিনার বা চূড়া রয়েছে। আর প্রতিটি চূড়ার উপরের অংশ মোচাকৃতি পদ্মকোরকের আদলে তৈরি। এই মধ্যস্থলের মিনারটির নীচে একটি সাদা শিবলিঙ্গও রয়েছে। এই মন্দিরের গঠন বাংলার আর পাঁচটা কালী মন্দিরের থেকে অনেকটাই আলাদা।

কুলকুণ্ডলিনী তত্ত্বকে কাজে লাগিয়ে মন্দির তৈরি সহজ কাজ ছিল না। রহস্যে মোড়া মন্দিরের গর্ভগৃহকে ধরা হয় মূলাধার। সেখানে পাথরের বেদীতে খোদাই করে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে অষ্টদল পদ্ম। তার উপরে শায়িত মহাদেব। ১২টি পাপড়ি বিশিষ্ট রক্ত লাল পদ্মে অধিষ্ঠান করছেন মা হংসেশ্বরী। মন্দিরের পুরোহিতের কথায়, স্বপ্নাদেশ পেয়ে রাজা নৃসিংহদেব এই হংসেশ্বরী মন্দির বানিয়েছিলেন। এখানে দেবী মূর্তি নিমকাঠের। শুধু তাই নয়, এই নিমকাঠ নাকি জলে ভেসে এসেছিল। বেদী ও মহাদেবের মূর্তি পাথরের। দেবী হংসেশ্বরী নীল বর্ণের। তাঁর বাম হাতে খড়গ ও নরমুন্ড। ডানহাতে অভয়মুদ্রা ও শঙ্খ।

বদলে যায় মায়ের রূপ

১৮১৪ সালে সকলের জন্য এই মন্দিরের মূল দ্বার খুলে দেওয়া হয়। হংসেশ্বরী মন্দিরের আর এক বিশেষত্ব মায়ের পুজোতে। বছরের ৩৬৪ দিন মা শান্তরূপে পূজিত হন। আর একটা দিন হয় সবচেয়ে আলাদা। সেদিন বদলে যায় মায়ের রূপ। যা সকলকে অবাক করে দেয়। প্রতি বছর কালীপুজোর দিন সন্ধেতে আরতির পর কয়েকটা ঘণ্টার জন্য মা হংসেশ্বরী রাজবেশ ধারন করেন। ফুল, মালা ও গয়না দিয়ে সাজানো হয় মাকে। সন্ধ্যারতির পর মায়ের মুখে পরিয়ে দেওয়া হয় রুপোর মুখোশ এবং সোনার জিভ। দেবী এদিন তন্ত্রমতে পূজিত হন। ভোরে আবার মায়ের পুরনো রূপ ফিরিয়ে আনা হয়।

হংসেশ্বরী মন্দিরে দেবীর নিত্যপুজো ও অন্নভোগের ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতি ১২ বছর অন্তর বা এক যুগ অন্তর দেবীর অঙ্গরাগ করা হয়। ১৮২০ সালে একবার দেবীর অলঙ্কার চুরি হয়েছিল। পরবর্তীকালে মন্দিরটি আর্কিওলজিকাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার তত্ত্বাবধানে চলে আসে। তারপরও দেবীমুর্তি, অলঙ্কার ও মন্দিরের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব এখনও পাশের রাজবাড়ির সদস্যদের হাতেই রয়েছে।

রোজ হত পশুবলি

এক সময় এই মন্দিরে নিয়মিত পশুবলি হত। কিন্তু ২০২৩ সাল থেকে তা বন্ধ হয়ে যায়। মন্দিরের পুরোহিতের কথায়, মা এখানে বিপত্তারিণী। তাই পশুবলি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ভক্তরা মায়ের কাছে নানা মনস্কামনা নিয়ে দূর দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন। একদিন সময় বের করে আপনারাও ঘুরে আসতে পারেন বাংলার বুকে থাকা এই তন্ত্র রহস্যে ঘেরা মন্দিরে। হংসেশ্বরী মন্দিরের চারিদিক সবুজে ঘেরা। যা দেখে চোখ জুড়োবে। আর মায়ের মন্দিরে পুজো দিয়ে জুড়োবে মন।