নবাব আলিবর্দি খানের নাতনী ছিলেন সুদর্শনা। সমস্যা হল অন্য জায়গায়, মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের সুদর্শনকে পুত্রকে প্রথম দেখাতেই প্রেম পড়ে ফেলেন তিনি। সোজা আবদার দাদুর কাছে, যদি বিয়ে কাউকে করতেই হয় তবে একমাত্র সেই ছেলেকেই করবেন।
নাতনীর কথা ফেরাতে পারলেন না নবাব। ডেকে পাঠালেন রাজা কৃষ্ণচন্দ্রকে। বিয়ের প্রস্তাব শুনে তো মাথায় হাত তাঁর। মুসলমান ঘরের কন্যা হবেন তাঁর বংশের পুত্রবধু! এমন হলে যে রাজা হয়েও সমাজে এক ঘরে হতে হবে তাঁকে।
অগত্যা দারস্থ হলেন মেড়তলার তন্ত্রসাধক কালীশঙ্করের। তান্ত্রিক হিসাবে বেশ নাম ডাক রয়েছে তাঁর। যেমন তাঁকে সবাই সম্মান করেন, তেমনই ভয়ও পান। তিনিই নাকি তন্ত্র শক্তির বলে অসুস্থ করে দেন নবাবের নাতনী এবং রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের নাতিকে। পিছিয়ে যায় বিয়ে। পরে কৃষ্ণচন্দ্রের নাতি সুস্থ হয়ে উঠলেও নাকি মারা যান নবাবের নাতনী। কল্প -কাহিনী হলেও মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র ছিলেন শাক্ত।
মেড়তলার তান্ত্রিক কালীশঙ্করকে নিয়ে রয়েছে প্রচুর গল্পকথা। কিন্তু কে এই কালীশঙ্কর? আর মেড়তলাই বা কোথায়?
গঙ্গার পশ্চিম কুলে মেড়তলা গ্রাম। নবদ্বীপ শহরের অদূরেই মেড়তলা একদা ছিল এক জমজমাট গ্রাম। শোনা যায় সন্ন্যাস গ্রহণের আগে মহাপ্রভু নবদ্বীপ থেকে কাটোয়া এই মেড়তলা হয়ে যেতেন। একদা গৌড় বঙ্গ, ওড়িশি বা কাশীধাম থেকে বিভিন্ন বিদ্যার্থী নবদ্বীপে আসতেন বিদ্যা লাভের জন্য।
সংস্কৃতে বুৎপত্তি লাভের জন্য সে রকম নবদ্বীপে এসেছিলেন রাজারাম তর্কবাগীশ। কথিত, সংস্কৃত শিক্ষালাভ হয়ে গেলে রাজারাম দেশ- দেশান্তরে ঘুরে বেড়ানোর সময় এক সিদ্ধপুরুষের দেখা পান। সেই সিদ্ধপুরুষের কাছ থেকেই তিনি তিনি যদুয়া মাতাকে লাভ করেছিলেন।
ক্রমে যদুয়া মাতাই হয়ে উঠেছিলেন রাজারামের আরাধ্য। তিনিই যদুয়া মাতাকে নবদ্বীপের অদূরে এই মেড়তলায় প্রতিষ্ঠা করলেন।অত্যন্ত গোপন ছিল এই সাধনা এবং পুজোপাঠ।
ক্রমে ক্রমে শক্তি চর্চায় এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান হয়ে উঠল প্রাচীন জনপদ এই মেড়তলা। মেড়তলা ছিল বাংলায় শাক্ত এবং তন্ত্রচর্চায় একবারে শুরুর দিকের পীঠস্থান। এই রাজারামের পুত্র ছিলেন কালীশঙ্কর। সংস্কৃতে শাস্ত্রে অগাধ পাণ্ডিত্য ছিল তাঁরও।
আগমবাগীশের তন্ত্রশাস্ত্রে বুৎপত্তি লাভ করেন কালীশঙ্কর। তিনিও আগমপদ্ধিতেই তন্ত্রসাধনায় রত ছিলেন। ক্রমেই তন্ত্রশাস্ত্রের আখড়া হয়ে উঠল মেড়তলা। দিনে বিভিন্ন টোলে পড়াশোনা আর নিশীথ রাতে জগদম্বা যাদুয়া মাতার বিশেষ পুজো। এত গোপনীয় ছিল সে পুজো যে, সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষেধ ছিল। এই স্থানেই চরম সাধনায় সিদ্ধিলাভ করেছিলেন কালীশঙ্কর।