Dinesh Karthik: একটা দীনেশ কার্তিক হওয়া সহজ নয়…
Dinesh Karthik News: দীনেশ কার্তিক তাঁর প্রায় ১৮ বছরের খেলোয়াড় জীবনে কতটা সফল, বিচার করা কঠিন। খেলার মাঠে কী করলে নায়ক হওয়া যায়, সেটাও বলা মুশকিল। তবে একটা কথা বলাই যায়, এত দুঃখের বোঝা কাঁধে নিয়ে একটা দীনেশ কার্তিক হওয়াও সহজ নয়!
সুপ্রিয় ঘোষ
দিনটা ২০০৪-এর ৫ সেপ্টেম্বর। লর্ডসে চলছে ইংল্যান্ড-ভারত তৃতীয় একদিনের ম্যাচ। ম্যাচে বেশ চাপে ভারত। ৪১তম ওভারের শেষ বলে যখন যুবরাজ সিং আউট, ভারতের স্কোর ৫ উইকেটে ১৭০। ভারতের হয়ে অভিষেক হল এক ১৯ বছরের তরুণের, দীনেশ কার্তিক। না, ব্যাট হাতে খুব বেশি কিছু করতে পারেননি সেই ম্যাচে ১২ বল খেলে করেছিলেন মাত্র ১ রান। কিন্তু উইকেটের পিছনে তাঁর পারফরম্যান্স জানিয়ে দিয়েছিল এক দক্ষ উইকেটরক্ষক পেতে চলেছে ভারত, যাঁর উপর হয়তো চোখ বুঝে ভরসা করতে পারবে ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট। তবে এটা মনে রাখতে হবে, মহেন্দ্র সিং ধোনি নামক খেলোয়াড়কে তখনও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট চেনে না। তাঁর অভিষেক হয় আরও ২ মাস ১৮ দিন পর।
নিজের প্রথম ম্যাচেই উইকেটকিপার হিসেবে জাত চিনিয়েছিলেন ডি-কে। ইংল্যান্ডের ইনিংসের ১৬তম ওভারের পঞ্চম বলে তাঁর দুর্দান্ত রিফ্লেক্সে রান আউট হন পল কলিংউড। সেই শুরু, এর পর ৪৪তম ওভারের শেষ বলে যখন ইংল্যান্ডের স্কোর ১৫৫-৪, হরভজন সিংয়ের বলে মাইকেল ভনকে ফের স্টাম্প করেন ডিকে। এর পর অ্যালেক্স হোয়ার্ফের ক্যাচও নেন।
এর পরের গল্পটা জানা। ধীরে ধীরে ভারতীয় ক্রিকেটের আকাশে উত্থান হয় মহেন্দ্র সিং ধোনি নামক এক নক্ষত্রের। জাতীয় দলের অধিনায়ক হন ধোনি। পরবর্তী প্রায় ১৪টা বছর যে কারণে আর জাতীয় দলে নিয়মিত হয়ে ওঠা হয়নি ডি-কের। কখনও জাতীয় দলের কেউ চোট পেলে তাঁর বদলে সুযোগ পেয়েছেন তিনি। সেই ধারা আজও অক্ষুণ্ণ। এখনও পর্যন্ত কোনও এক বছরে তিন ফর্ম্যাট মিলিয়ে ৩৩টার বেশি ম্যাচ কখনও খেলেননি কার্তিক। তাঁর কেরিয়ারের এই টালমাটাল সময়ের মধ্যে উথালপাতাল হয়েছে তাঁর ব্যক্তিগত জীবনেও। ২০১২ সালে বিবাহ বিচ্ছেদ হয় কার্তিকের।
এরই মধ্যে ২০১৮ সালে কলকাতা নাইট রাইডার্সের অধিনায়ক করা হয় দীনেশ কার্তিককে। অন্য ফ্র্যাঞ্চাইজির অধিনায়কদের থেকে জৌলুসে অনেক পিছিয়ে থাকা ডিকেও পাল্লা দিয়ে লড়েছেন বাকিদের সঙ্গে। তাঁর অধিনায়ক হওয়া নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠেছিল ক্রীড়া বিশেষজ্ঞদের তরফেই। তাঁকে নিয়ে ট্রোলের মাত্রাও ছাড়িয়েছে বহুবার। তবুও তিনি লড়ে গিয়েছেন। বিতর্ক থেকে দূরে থাকতে ২০২০-এর আইপিএলের মাঝেই ছেড়ে দেন অধিনায়কত্ব। ক্রিকেটের প্রতি তাঁর প্যাশন, ভালবাসা পিছনে ফেলে দেয় বাকি সব কিছুকেই।
সেই কার্তিক ফেলে আসা দিনগুলো হঠাৎই পাল্টে দেবেন। শ্রীলঙ্কায় নিদাহাস ট্রফি খেলতে গিয়ে। ওই টুর্নামেন্টের ফাইনালে শেষ বলে সৌম্য সরকারকে কভারের উপর দিয়ে ছয় মেরে জেতাবেন প্রায় হেরে যাওয়া একটা ম্যাচ। সেই ম্যাচে ১৯তম ওভারে রুবেল হোসেনকে পিটিয়ে তোলেন ২২ রান। আর ২০২২ সালের আইপিএল? এ বারে আর কলকাতা নয়, রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের হয়ে ১৪ ইনিংসে ৫৭.৪ গড়ে ২৮৪ রান করেন তিনি। সানরাইজার্স হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে ম্যাচে ৮ বলে করেন ৩০ রান। এর পরই তাঁকে একজন ফিনিশার হিসাবে ভাবতে শুরু করে ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট।
কার্তিকের এই উত্থান-পতনের জীবনে টি২০ বিশ্বকাপে ডাক পাওয়ার পরই ভাইরাল হয় ধারাভাষ্যকার হিসেবে প্রকাশিত হওয়া একটি ছবি। ২০২১ সালে ইংল্যান্ড-শ্রীলঙ্কা টি২০ ও একদিনের সিরিজে স্কাই স্পোর্টসের ধারাভাষ্যকার হিসাবে কাজ করেছিলেন তিনি। আবারও যে ২২ গজে ফিরবেন তিনি, সেদিন সে কথা প্রত্যাশাও করেনি কেউ।
দীনেশ কার্তিক তাঁর প্রায় ১৮ বছরের খেলোয়াড় জীবনে কতটা সফল, বিচার করা কঠিন। খেলার মাঠে কী করলে নায়ক হওয়া যায়, সেটাও বলা মুশকিল। তবে একটা কথা বলাই যায়, এত দুঃখের বোঝা কাঁধে নিয়ে একটা দীনেশ কার্তিক হওয়াও সহজ নয়! ক্রিকেটার অনেকেই হন, দীনেশ কার্তিক কেউ কেউ!