কৌস্তভ গঙ্গোপাধ্যায়
কথা ছিল, আরও একটা বছর খেলবেন রঞ্জি ট্রফি (Ranji Trophy)। বয়স ৩৭ তো কী হয়েছে, নিজেকে প্রমাণ করার তাগিদ তাপ ছড়াচ্ছিল বুকে। তাই গোয়ার পথে পাড়ি দেওয়া। নতুন করে নিজেকে গোছাতে শুরু করে। করোনা থাবা বসিয়েছে ঘরোয়া ক্রিকেটে। অশোক দিন্দার ( Ashok Dinda) স্বপ্নেও। বোর্ড(BCCI) রঞ্জি ট্রফি বাতিল করে দেওয়ায় অবসরই নিয়ে নিলেন।
মঙ্গলবার সিএবিতে বসে ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর সন্ধেয় নস্টালজিক দেখাচ্ছিল বাংলার গত এক দশকের সেরা পেসারকে। তাই বোধহয় ড্রেসিংরুমে ঢুকে পড়লেন তিনি। খেলোয়াড়ি জীবনে যে চেয়ার বরাদ্দ ছিল তাঁর, সেখানে গিয়েই বসলেন সদ্য প্রাক্তন দিন্দা।
দিন্দা মানে, তীব্র গতির বাউন্সার। দিন্দা মানে, বিপক্ষের ত্রাস। দিন্দা মানে, অপ্রত্যাশিত বিতর্কও। মঙ্গল-সন্ধের দিন্দা সেই চেনা দিন্দা থেকে অনেক দূরে। ফেলে আসা কেরিয়ারের সোনালি রংটুকুই যেন লেগে রয়েছে। কেন অবসর? দিন্দা হাসতে হাসতে বলে গেলেন, ‘ফিটনেস নিয়ে সমস্যা হচ্ছিল। সেটা বুঝতে পেরেই সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিলাম।’
দিন্দার কেরিয়ার জুড়ে ছড়িয়ে সাফল্যের পালক। ১১৬টা প্রথম শ্রেণির ম্যাচে ৪২০টা উইকেট। সেরা বোলিং ৮-১২৩। ২৬টা পাঁচ উইকেট নিয়েছেন যেমন ইনিংসে, তেমনই ম্যাচে পাঁচবার রয়েছে ১০ উইকেট। এই গত মুরসুমেও তাঁর সংগ্রহে রাখা পাঁচ উইকেট শিকারের বলগুলোর ছবি তুলে পোস্ট করেছিলেন টুইটারে। দেশের হয়ে ১৩টা ওয়ান ডে খেলতে নেমে ১২টা উইকেট। ৯টা টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ১৭ উইকেট। সঙ্গে ৯১টা লিস্ট এ ম্যাচে ১৫১ উইকেট। কলকাতা, পুনে, বেঙ্গালুরুর হয়ে ৭৮টা আইপিএল ম্যাচে ৬৯ উইকেট। সেরা ৪-১৮।
সব ধরনের ক্রিকেট থেকে বিদায়ের দিনে দিন্দার মুখে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়(Sourav Ganguly)। প্রেস মিটে বলেই দিলেন, ‘দাদার জন্যই আসতে পেরেছি এত দূর। ঘরোয়া টুর্নামেন্ট থেকে আইপিএল, সর্বত্র মিডঅফে দাঁড়িয়ে মোটিভেট করত। যখনই দরকার পড়েছে পাশে এসে দাঁড়িয়েছে।’ কেরিয়ারের সেরা ম্যাচ? দিন্দা বাছলেন, দেশের জার্সিতে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে তাঁর অভিষেক ম্যাচটাকে।
নৈছনপুরের ছেলের উত্থান হয়েছিল স্পিডস্টার হিসেবে। একটি প্রতিযোগিতায় সবচেয়ে জোরে বল করেছিলেন তিনি। বাংলা তখন খুঁজছিল এমন পেসার, যার বলে রয়েছে তীব্র গতি। ২০০৫ সালে বাংলার হয়ে অভিষেক হয় দিন্দার। তার পর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। দিন্দা খুব দ্রুত হয়ে উঠেছিলেন ম্যাচ উইনার। বিপক্ষের উইকেট নেওয়ার জন্য টানা বল করে গিয়েছেন। দুটো আক্ষেপের কথা তুলে ধরলেন বাংলার সর্বকালের অন্যতম সেরা পেসার। ‘বাংলার হয়ে যদি অবসর নিতে পারতাম, ভালো লাগত। আর, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৫০০ উইকেট টার্গেট ছিল আমার। সেটা হল না।’
বাংলার হয়ে, দেশের হয়ে অনেকের সঙ্গী হিসেবে পেয়েছেন অনেককে। তবু সেরা বোলিং পার্টনার হিসেবে বাছলেন রণদেব বসুকে। সেই রণ এখন বাংলার বোলিং কোচ। গত মরসুমে তাঁর সঙ্গেই ঝামেলায় জড়িয়েছিলেন দিন্দা। প্রসঙ্গ উঠতে বললেন, ‘ওর সঙ্গে ৭-৮ বছর খেলেছি। অনেক স্মৃতি। অনেক সাফল্য। ব্যক্তিগত সম্পর্কের সঙ্গে পার্টনার রণদেবকে মেশাব না।’
বাংলার ভবিষ্যত্ প্রজন্মকে তুলে আনতে চান। ট্যালেন্ট কমিটিতে তাঁকে রাখতেও চাইছে সিএবি। এই দিন্দা কিন্তু রাজনীতিতে আসার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না। হাসতে হাসতে বলে দিলেন, ‘খেলা তো ছেড়ে দিলাম। এখন অনেক কিছুই করতে পারি!’