Rohit Sharma: রোহিত শর্মা যেন ‘নিজের’ মতোই ক্যাপ্টেন

অভিষেক সেনগুপ্ত | Edited By: দীপঙ্কর ঘোষাল

Nov 18, 2023 | 2:13 AM

ICC world Cup 2023, IND vs AUS Final: ধোনির পর ভারতের সবচেয়ে বেশি প্রত্যাশা ছিল ক্যাপ্টেন বিরাট কোহলিকে নিয়ে। ধোনির হাত থেকেই ব্যাটন গিয়েছিল কোহলির হাতে। তাঁর মধ্যে সৌরভের আগ্রাসন খুঁজে পেয়েছিলেন অনেকেই। কিছুক্ষেত্রে যেন সৌরভকেও ছাপিয়ে যেতেন আগ্রাসনে। প্রতিপক্ষ শিবির ক্যাপ্টেন কোহলিকে সমঝে চলতেন। সেটা ভয় না শ্রদ্ধা, বোঝার উপায় নেই। ব্যাটার বিরাট কোহলি সকলের শ্রদ্ধার পাত্র, প্রেরণা অবশ্যই।

Rohit Sharma: রোহিত শর্মা যেন নিজের মতোই ক্যাপ্টেন
Image Credit source: PTI

Follow Us

 

অভিষেক সেনগুপ্ত

ভারতীয় ক্রিকেটই শুধু নয়। বিশ্বের অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রেও এমনটা। নতুন কেউ অধিনায়ক হলেই তুলনা শুরু হয়ে যায়। তাঁর মধ্যে অতীতের কোনও ক্যাপ্টেনের ছায়া খোঁজা হয়। এ ওঁর, সে তাঁর মতো, এরকম ব্যাপার। ওয়ান ডে বিশ্বকাপে ভারত দু-বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। ১৯৯৩ সালে কপিল দেব এবং এক যুগ আগে দেশকে দ্বিতীয় বার বিশ্বসেরা করেছেন ‘ক্যাপ্টেন কুল’। রোহিত ঠিক কার মতো? না বলা ভালো, রোহিত নিজের মতোই!

সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় পরবর্তী সময়ে ক্যাপ্টেন হিসেবে আলাদা ট্রেডমার্ক তৈরি করেছিলেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। তাঁকে দেখে বোঝার উপায় নেই, মনের মধ্যে ঠিক কী চলছে। দলের পরিস্থিতি যেমনই হোক। ধোনির অভিব্যক্তি একই। বাড়তি উচ্ছ্বাস নেই, প্রয়োজনের বাইরে মাঠে কোনও কথা বলা নেই। ইশারায় অনেক কাজ হত। ফিল্ড প্লেসমেন্ট হোক বা কোন লাইনে বোলিং করতে হবে, চোখের ভাষাতেই যেন বুঝিয়ে দিতেন। দল হারলেও যে ভাবে মাঠ ছাড়েন, জিতলেও। ঠিক যেন রোবটের মতো। যেটুকু প্রোগ্রাম ইনস্টল করে দেওয়া রয়েছে, যেন সেটুকুই! বাকিরা হয়তো হতাশায় ডুবে আছেন কিংবা বাঁধনহারা উচ্ছ্বাসে। তাঁর পরিস্থিতি, তিনি ছাড়া কারও বোঝার ক্ষমতা নেই। সে কারণেই তো ক্যাপ্টেন কুল!

ধোনির পর ভারতের সবচেয়ে বেশি প্রত্যাশা ছিল ক্যাপ্টেন বিরাট কোহলিকে নিয়ে। ধোনির হাত থেকেই ব্যাটন গিয়েছিল কোহলির হাতে। তাঁর মধ্যে সৌরভের আগ্রাসন খুঁজে পেয়েছিলেন অনেকেই। কিছু ক্ষেত্রে যেন সৌরভকেও ছাপিয়ে যেতেন আগ্রাসনে। প্রতিপক্ষ শিবির ক্যাপ্টেন বিরাট কোহলিকে সমঝে চলতেন। সেটা ভয় না শ্রদ্ধা, বোঝার উপায় নেই। ব্যাটার বিরাট কোহলি সকলের শ্রদ্ধার পাত্র, প্রেরণা অবশ্যই। ক্যাপ্টেন কোহলি পরিচিত তাঁর আগ্রাসনেই। সেটা ধরা পড়ত প্রতি মুহূর্তে। এখনও মাঠে প্রতিপক্ষকে ‘জবাব’ দিতে পিছপা হন না।

রোহিতকে ঠিক কার সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে? তার চেয়ে বলা যায়, রোহিত শর্মা এক ছক ভাঙা অধিনায়ক। রক্তমাংসে গড়া মানুষ। আর দশজনের মতোই। ঠিক যেন পাড়ার ওই দাদার মতো। যিনি ছোট ছোট ছেলেদের সঙ্গে ক্রিকেটে মেতে ওঠেন। প্রয়োজনে বকাঝকা করেন, সাফল্য পেলে বুকে আগলে নেন, নিরাপত্তা দেন। এমনটাই তো দেখা যায় রোহিতের ক্ষেত্রে! অনেক সময়ই তা নেগেটিভ হেডলাইন তৈরি করে। কেউ ক্যাচ ফেললে বা ফিল্ডিংয়ে মিস করলে, রোহিতের বিরক্তি চাহনি থেকে নিস্তার নেই। আবার কেউ ভালো ইনিংস খেললে, দুরন্ত একটা ক্যাচ কিংবা উইকেট নিলে আনন্দে ভেসে যান। চাপে থাকলে বোঝা যায়, উচ্ছ্বাস-রাগও ধরা পড়ে।

ওয়াংখেড়ের সেমিফাইনাল ম্যাচটির কথাই ধরা যাক! মহম্মদ সামি যখন মিড অনে কিউয়ি অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনের ক্যাচ ফসকালেন, বিরক্ত চাহনি দিয়েছিলেন রোহিত। সেটাই তো স্বাভাবিক। এমন চাপের ম্যাচে একটা ক্যাচ মিস পুরো চিত্রটাই বদলে দিতে পারে। সেই সামিই যখন উইলিয়ামসনকে ফেরালেন, সাত উইকেট নিয়ে দলকে জেতালেন, তাঁকে কোলে তুলে নেন রোহিত।

বিরাট কোহলির যখন সেঞ্চুরির খরা চলছিল, ক্যাপ্টেন রোহিতকেও একের পর এক প্রশ্ন সামলাতে হয়েছে। প্রাক্তন ক্রিকেটাররাও বলছিলেন, বিরাটকে বসিয়ে নতুনদের সুযোগ দেওয়া হোক। ভরা সাংবাদিক সম্মেলনে এই প্রশ্নও করা হয় যে, বিশেজ্ঞরা বলছেন, বিরাটের পরিবর্তে নতুনদের সুযোগ দিতে, বিশ্বকাপের আগে তাঁদের তৈরি করতে। রোহিত রাখঢাক না করেই জবাব দিয়েছিলেন, ‘এই বিশেষজ্ঞ কারা? তাঁদের বিশেষজ্ঞ কারাই বা বানিয়েছেন? বিরাটের সঙ্গে এত বছর খেলছি, আমরা জানি ও কেমন প্লেয়ার। দলের অন্দরে কেউ ওর সেঞ্চুরি না পাওয়া নিয়ে চিন্তিত নয়। সেঞ্চুরি শুধুই সময়ের অপেক্ষা।’

রোহিত তাঁর দীর্ঘদিনের সতীর্থের ওপর ভরসা রেখেছিলেন। এর জন্য় লড়াইয়ের ময়দানে নামতেও দ্বিধা করেননি। এই নিরাপত্তাটুকুই তো ক্যাপ্টেনের কাছে চেয়ে থাকেন সতীর্থরা! সেই বিরাট কোহলি একের পর এক সেঞ্চুরি করছেন। ওডিআইতে ৫০টি সেঞ্চুরি করে ছাপিয়ে গিয়েছেন ক্রিকেট ঈশ্বরকেও। এ বারের বিশ্বকাপেও সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া যাকে বলে, সেটাই করে দেখিয়েছেন রোহিত। নিজে রান করেছেন। দলকে এমন একটা স্টার্ট দেওয়ার চেষ্টা করেছেন যাতে পরবর্তী ব্যাটারকে বাড়তি চাপ নিয়ে না খেলতে হয়। বিশ্বকাপের ট্রফিটা যেন তাঁর হাতেই মানানসই হবে। যে ক্যাপ্টেন পুরোপুরি নিজের মতো। রোহিত কারও মতো নন, সেটাই যেন সাফল্যের ইউএসপি।

Next Article