রক্তিম ঘোষ
কলকাতা: আগে কোনও আন্তর্জাতিক ম্যাচ হলে কলকাতায় টিকিট কালোবাজারি হওয়ার ঘটনা নতুন কিছু ছিল না। তবে খুল্লামখুল্লা ছিল না তা। গোষ্ঠপাল সরণীর আনাচে কানাচে টিকিট কালোবাজারিদের ভিড় থাকত। চাপা গলায় ক্রেতাদের ডাকত তারা। সাড়া পেলে কোনও বড় গাছের পেছনে বা কোনও ক্লাব টেন্টের পেছনে হাতে হাতে টাকা আর টিকিট হত লেনদেন। এ ছবি চেনা। পরিচিত। এতদিনের ইডেনে (Eden Gardens)। পুলিশের নজরে পড়লে দে দৌড়। কখনও কখনও ঘোড়সওয়ারি পুলিশের নজরেও পড়েছেন এই কালোবাজারিরা। ঘোড়া ছুটিয়ে তাঁদের ধাওয়াও করেছে পুলিশ। কেউ ধরা পড়েছে। কেউ পগারপাড়। যাই হত, তা লুকিয়ে চুরিয়ে। এবার একেবারে খুল্লামখুল্লা টিকিট কালোবাজারি চলল। একেবারে পুলিশের নাকের ডগাতেই। সরেজমিনে দেখল টিভি নাইন বাংলা ডিজিটাল।
দুপুর ১২টা থেকেই ধর্মতলায় যেখানে দূরপাল্লার বাসের গুমটি, তার ঠিক সামনেই সারি সারি দোকান। ফুটপাথের ধার বেয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে হলুদ ট্যাক্সি। হাওড়া ও বাবুঘাটমুখী বাস থামছে তার সামনেই। মেট্রো চ্যানেলে তখন যথেষ্ট পুলিশ। ঠিক ভবানীপুর ক্লাবের আগে ট্রাম লাইনের ধার বেয়ে দাঁড়িয়ে জনা পাঁচেক লোক। হাতে তাড়া তাড়া টিকিট। পথ চলতি মানুষের কাছে সরাসরি আবেদন, টিকিট লাগবে? কোনও চাপা গলায় নয়। হাত দশেক দূরে থাকলেও শোনা যাচ্ছে তাঁদের আবেদন। কেউ কেউ দাঁড়িয়ে পড়লেন। ক্রেতারা জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কত করে?’ উত্তর- ‘৮০০র টিকিট ১২০০!’ ক্রেতার আবার প্রশ্ন, ‘কম দামের টিকিট নেই? ‘ব্ল্যাকারদের উত্তর, ‘না’। এটা দুপুর ১২.৩০ নাগাদ ছবি।
দুপুর ১টা থেকে সোয়া ১টা। একই জায়গা একেবারে মেট্রো চ্যানেলের সামনেই। ব্ল্যাকারদের প্রশ্ন, ‘টিকিট লাগবে?’ ক্রেতা জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কত করে?’ উত্তর- ‘৮০০র টিকিট ১০০০!’ অর্থাৎ ম্যাচ শুরুর সময় আধ ঘন্টা এগোতেই টিকিটের দাম কমল ২০০ টাকা। কেউ কিনলেন, কেউ বললেন এক উত্তর, ‘বড্ড দাম!’
দুপুর দেড়টা গড়িয়ে যখন ঘড়ির কাঁটা পৌনে দুটোর দিকে, তখন গলার জোর বাড়াল টিকিটের কালোবাজারিরা। যে উচ্চগ্রামে ফুটপাতের বিক্রেতারা বলেন, ‘হরেক মাল ১০ টাকা, হরেক মাল ১০টাকা!’-একেবারে সেই গলায় ‘টিকিট লাগবে, টিকিট! একেবারে দামের দামে’। এগিয়ে জিজ্ঞাসা করতেই এক ব্ল্যাকার বলল, ‘দাদা, ৮০০র টিকিট একেবারে ৮০০তে।’ খবর নিয়ে জানা গেল, হাতে থাকা টিকিটের বেশিরভাগটাই তাঁরা পয়সা খরচ করে কেনেননি। পেয়েছেন।
মঙ্গলবার বাংলাদেশ-পাকিস্তান ম্যাচের অনেক টিকিটই অবিক্রিত ছিল। তাহলে কি সেই টিকিটই এসে পৌঁছেছে কালোবাজারিদের হাতে? কে দিল তাঁদের হাতে সেই টিকিটগুলো? প্রশ্ন উঠতে বাধ্য। ঠিক যেমন প্রশ্ন উঠতে বাধ্য, প্রকাশ্যে টিকিট কালোবাজারি করার সাহস পেল কোথা থেকে? তাও আবার ধর্মতলার মত জমজমাট জায়গায়। যেখানে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে দাঁড়িয়ে আছে পুলিশ, ট্রাফিক পুলিশ! কালোবাজারিদের এমন দাপট, যে আমাদের চিত্রসাংবাদিক সেই ছবি তুলতে গেলে তেড়ে যায় তাঁর দিকে। ছবি তুলতে নিষেধ করে তাঁরা। একেবারে উঁচু গলায়। ঠিক যে স্বরে তাঁরা প্রকাশ্যে টিকিট কালোবাজারি করছিল!
পুলিশের কাছেও খবর রয়েছে টিকিট কালাবাজারির। ২৫০০ টাকার টিকিট বিক্রি হচ্ছে ১১ হাজার টাকায়! সূত্র মারফৎ খবর পেয়ে অঙ্কিত আগরওয়াল নামে এক ব্যক্তিকে হাতেনাতে ধরেছে পুলিশ। তাঁর কাছ থেকে ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচের ২০টি টিকিট পাওয়া গিয়েছে বলে পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে।