রোহিত শর্মা যদি শূন্য-র আতঙ্ক থেকে বেরোতে না পারতেন? রিঙ্কু সিং যদি ক্যাপ্টেনের সঙ্গে ১৯০ রানের পার্টনারশিপ না গড়তে পারতেন? এমন অনেক মুহূর্তই ম্যাচের রং বদলে দিয়েছে। দিনের শেষে ভারত জিতেছে। বোর্ডে বড় রান থাকা সত্ত্বেও আফগানিস্তান চ্যালেঞ্জ করেছে। ম্যাচ টাই করার পর সুপার ওভারও টাই! দ্বিতীয় সুপার ওভারে ম্যাচ জেতে ভারত। অথচ এত কিছু হয়তো হতই না। ম্যাচের একটা বড় অংশ জুড়ে ছোট ছোট গুরুত্বপূর্ণ অবদান গুলো যে ভোলার নয়! ক্যাপ্টেন রোহিত শর্মাও ভোলেননি। ম্যাচের সেরার পুরস্কার জিতে ক্যাপ্টেনের মুখে বারবার রিঙ্কুর কথা। বিস্তারিত জেনে নিন TV9Bangla Sports-এর এই প্রতিবেদনে।
টস জিতে ব্যাটিং নিয়েছিলেন রোহিত। প্রথম দু-ম্যাচ রান তাড়া করে জেতায় স্বাদ বদল চেয়েছিলেন। নিজেদের পরীক্ষাও করা যেত। সেটাই বুমেরাং হতে চলেছিল। মাত্র ২২ রানের মধ্যেই প্যাভিলিয়নে যশস্বী জয়সওয়াল, বিরাট কোহলি, শিবম দুবে, সঞ্জু স্যামসনরা। পাওয়ার প্লে-তেই ক্রিজে প্রবেশ রিঙ্কু সিংয়ের। উল্টোদিকে ক্যাপ্টেন রোহিত শর্মা। প্রথমবার ক্যাপ্টেনের সঙ্গে ব্যাট করছেন। এমন মুহূর্তে যে কোনও তরুণ ব্যাটারই স্নায়ুর চাপে ভুগতে পারেন। সাদা বলের ক্রিকেটে অন্যতম সেরা ব্যাটারের সঙ্গে জুটি গড়া স্বপ্ন। রিঙ্কু স্নায়ুর চাপ সামলে সেটাই করলেন। ২২-৪ থেকে ২০ ওভারে ২১২-৪! রোহিতের সঙ্গে অবিচ্ছিন্ন জুটিতে ১৯০ রান যোগ করেন। রোহিত সেঞ্চুরি করেন। রিঙ্কু ৩৯ বলে অপরাজিত ৬৯!
এ তো গেল ব্যাটিং পর্ব। ম্যাচের বাকি অংশ না হয় বাদ দেওয়া হল। সুপার ওভারে! লং বাউন্ডারিতে দলের দুই সেরা ফিল্ডার। একজন অভিজ্ঞ বিরাট কোহলি, অন্যজন জাতীয় দলে ক্রমশ জায়গা পাকা করার চেষ্টায় থাকা রিঙ্কু সিং। ভারতের একাদশে এই দু-জনের চেয়ে সেরা বাউন্ডারি রাইডার আর কে হতে পারেন! বিরাট কোহলি নিশ্চিত ছয় লাফিয়ে আটকে দেন, ৩৮ মিটার দৌড়ে ক্যাচ নিয়ে তাক লাগিয়ে দেন। তেমনই রিঙ্কুও দৌড়ে বাউন্ডারি বাঁচালেন, পিক আপ থ্রোয়ে প্রতিপক্ষকে চাপে রাখলেন।
কেরিয়ারের পঞ্চম আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি সেঞ্চুরিতে ম্যাচের সেরা রোহিত বলছেন, ‘টেস্ট ক্রিকেটেও সাধরণত এমনটা হয় না। মানে তিন বার ব্যাট করতে নামতে হয়েছে! আইপিএলে আমার ক্ষেত্রে একবারই বোধ হয়েছিল।’ বলেই হেসে ফেলেন রোহিত। এরপরই যোগ করেন, ‘পার্টনারশিপ গড়াটা খুবই জরুরি ছিল। রিঙ্কুর সঙ্গে অনবরত কথা বলে গিয়েছি। ও যাতে ধৈর্য না হারায় সেদিকে নজর ছিল। অনেক বড় ম্যাচে এমন পরিস্থিতি আসতেই পারে যেখানে হয়তো আমরা ৩০ রানের মধ্যেই ৪ উইকেট হারালাম! চাপের মুখে পারফর্ম করা, নিজেদের চ্যালেঞ্জ করার জন্য এই ম্যাচটা সেরা সুযোগ ছিল।’
এখানেই শেষ নয়। রিঙ্কুকে নিয়ে বলেই চলেন, ‘প্রয়োজন ছিল ক্রিজে দীর্ঘ সময় টিকে থাকা। একই সঙ্গে মাথায় রাখতে হত, খেলার ধরনের সঙ্গে আপোশ করা যাবে না। গত কয়েকটি সিরিজেই রিঙ্কু খেলেছে। ও কী পারে, সেটা দেখানোর সুযোগ ছিল। ভয়ডরহীন, চাপের মুখেও শান্ত, নিজের পরিকল্পনা সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারনা, নিজের শক্তি সম্পর্কে বিশ্বাস, সবটাই ও খুব ভালো বোঝে। যেটুকু সুযোগ পাচ্ছে, ছাপ ফেলছে। গত ১০টি ইনিংসেই দেশের হয়ে দুর্দান্ত পারফর্ম করেছে। আমরা এমন একজনকেই লোয়ার অর্ডারে চাইছিলাম, যে পরিষ্কার ধারনা নিয়ে খেলতে পারে। আইপিএলে ও এমনটা করে দেখিয়েছে, সেটা আমরা সকলেই দেখেছি। ও কিন্তু জাতীয় দলেও সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে।’
ক্যাপ্টেন রোহিত শর্মার এই কথাগুলিতে কোনও ‘মেদ’ ছিল না। রোহিত সোজাসুজি কথা বলতেই পছন্দ করেন। রিঙ্কুর সম্পর্কেও সোজাসুজি বলেছেন। এ বার আর প্রতিপক্ষ কিংবা টেলিভিশনে নয়, রিঙ্কুর ইনিংস উল্টোদিক থেকে দেখেছেন। বিশ্বকাপের স্কোয়াড বাছাইয়ের সময় ক্যাপ্টেনের পছন্দের তালিকায় রিঙ্কুর নামটা যে থাকবে, এ যেন তারই ইঙ্গিত। রিঙ্কুর দায়িত্ব যেন বাড়ল। আইপিএলে ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। জাতীয় দলে ফিনিশারের ভূমিকা যে তাঁকেই সামলাতে হবে!