কলকাতা: দাউদ ইব্রাহিমের (Dawood Ibrahim) অবস্থা কি আশঙ্কাজনক? তেমনই খবর মিলছে পাকিস্তান থেকে (Pakistan)। ভারতের (India) মোস্ট ওয়ান্টেড অপরাধীকে নাকি বিষ প্রয়োগ করা হয়েছে। যদিও সে খবর কতটা সত্যি তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় করাচির হাসপাতালে ভর্তি হওয়া দাউদের মেডিকেল বুলেটিনের দিকে চোখ রেখেছে ভারত সহ অনেক দেশই। ১৯৯৩ সালে মুম্বইয়ের ধারাবাহিক বিস্ফোরণের মূল অপরাধী দাউদ। ড্রাগ পাচার থেকে ক্রিকেট বেটিং, সাবলীল যাতায়াত তার। এই দাউদের সঙ্গে আবার আত্মীক যোগ রয়েছে প্রাক্তন পাকিস্তান ক্রিকেটার জাভেদ মিয়াঁদাদের। তাঁর ছেলে জুনেইদের সঙ্গে বিয়ে হয়েছে দাউদের মেয়ে মাহরুখের। ক্রিকেট যখন দাউদের বেটিং নাগপাশে ক্রমশ জড়িয়ে পড়ছে, তখন এক ভারতীয় ক্রিকেটার রুখে দাঁড়িয়েছিলেন খোদ মোস্ট ওয়ান্টেডের ডনের বিরুদ্ধে। কী নাম ওই ভারতীয় ক্রিকেটারের? সেই গল্প কি জানেন?
এই ঘটনা ১৯৮৬ সালের। দাউদ তখন ক্রিকেট মাঠের বেশ পরিচিত মুখ। সানগ্লাস পরে গ্যালারির সংরক্ষিত আসনে বসত। তাকে ঘিরে থাকত একাধিক লোকজন। শারজা স্টেডিয়ামের এই ছবি আজও মনে থেকে গিয়েছে অনেকেরই। মুম্বইয়ের ডোঙ্গরি থেকে উঠে আসা মামুলি ছেলের ডন হয়ে ওঠা সত্ত্বেও ক্রিকেট প্রেম ছিল অমলিন। দাউদ শুধু ক্রিকেটের নেশায় শারজার মাঠে যেতেন, তা নয়। তার লক্ষ্য ছিল ক্রিকেটারদের বেটিংয়ে জুড়ে ফেলা। আর তাই ক্রিকেটারদের দামি-দামি উপহার দিয়ে হাত করার চেষ্টা করত। ১৯৮৬ সালে ভারতীয় টিমের কাউকে কাউকে যাতে বেটিংয়ে জোড়া যায়, তার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিল দাউদ। কিন্তু কপিল দেবের মতো ক্রিকেটারের জন্য সে লক্ষ্য পূরণ হয়নি। কী ঘটেছিল?
কপিল তখন ভারতীয় টিমের ক্যাপ্টেন। ১৯৮৩ সালে ভারতকে বিশ্বকাপ জিতিয়েছেন। ভারত তো বটেই ক্রিকেট দুনিয়ার সবচেয়ে বড় তারকা হয়ে গিয়েছেন কপিল। সেই তাঁরই মুখে পড়ে গিয়েছিল দাউদ। এই ঘটনা প্রথম প্রকাশ্যে আনেন দিলীপ বেঙ্গসরকর। শারজায় ফাইনাল ম্যাচের আগের দিন প্র্যাক্টিস সেরে ড্রেসিংরুমে ফিরেছিল ভারতীয় টিম। ম্যাচের ঠিক আগের দিন ভারতীয় ড্রেসিংরুমে ঢুকে পড়ে দাউদ। সঙ্গী ছিলেন এক নামী অভিনেতা। তিনি ভারতীয় ক্রিকেটারদের সঙ্গে দাউদের পরিচয় করিয়ে দেন এক ব্যবসায়ী হিসেবে। দাউদ পরিচয় পর্বের পর বলেছিল, ‘যদি ফাইনালে ভারত জেতে, তা হলে ভারতীয় টিমের সব প্লেয়ারকে টয়োটা করোলা দেব।’
দাউদের ঘোষণা রীতিমতো চমকে দিয়েছিল ক্রিকেটারদের। এমন দামি উপহার যে কেউ দিতে পারে, ভাবতেই পারছিলেন না ক্রিকেটাররা। সাংবাদিক সম্মেলন সেরে তখনই ড্রেসিংরুমে ফেরেন অধিনায়ক কপিল। তখনই ভারতীয় সাজঘরের পরিস্থিতি পাল্টে যায়। কপিল ওই অভিনেতাকে ড্রেসিংরুম থেকে বেরিয়ে যেতে অনুরোধ করেন। তার পরই দাউদকে বলেন, ‘এই লোকটা কে? বেরিয়ে যাও এখুনি।’
রাগে অগ্নিশর্মা কপিলকে দেখে আর কথা বাড়ায়নি দাউদ। দ্রুত বেরিয়ে যায় ভারতীয় ড্রেসিংরুম থেকে। ১৯৮৬ সালের ভারতীয় টিমের ক্রিকেটাররা কেউই কিন্তু দাউদকে চিনতেন না। কপিলও চিনতেন না। একমাত্র চিনতেন দিলীপ বেঙ্গসরকর। সেই কারণেই এই ঘটনা তিনিই তুলে ধরেছিলেন পরে। কপিল বিশ্ব ক্রিকেটের সুপারস্টার হওয়ার পাশাপাশি টিমের অভিভাবকও ছিলেন। দাউদকে না চিনলেও উটকো লোক ড্রেসিংরুমে ঢুকুক, তা তিনি চাননি। রাগে ফেটে পড়া কপিলকে দেখে আর খাপ খুলতে পারেনি দাউদ। ৩৭ বছর আগে ডনকে ঘাড়াধাক্কা দিয়ে ড্রেসিংরুম থেকে বের করে দেওয়ার সেই ঘটনা আজও ভালোনি ভারতীয় ক্রিকেট।