Jamaica Football: পোলট্রি ফার্মে কাজ করেন মা, বাবা বানান জুতো; সেই খাদিজা বানি শ জামাইকাকে বিশ্বজয়ের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন
FIFA Women's World Cup: খাদিজা বানি শ-য়ের জামাইকা ব্রাজিলকে হারিয়ে এ বারের বিশ্বকাপের শেষ-১৬তে উঠেছে। এ বার নক আউটে জামাইকার সামনে রয়েছে কলম্বিয়া। এই টিমটাকে হারাতে পারলে শেষ আটে পৌঁছে যাবে জামাইকা। যে দুরন্ত ছন্দে এ বারের মেয়েদের বিশ্বকাপে রয়েছে জামাইকা, তাতে খাদিজাদের আটকানো সহজ হবে না।
নয়াদিল্লি: ‘আমি যদি এই মুহূর্তে জামাইকায় (Jamaica) থাকতাম, ফুটবল খেলার চেষ্টা করে আমার সময় নষ্ট করতাম না। কারণ ওখানে কিছুই হচ্ছে না।’ কথা গুলো বলেছেন জামাইকা মহিলা ফুটবল টিমের এক গুরুত্বপূর্ণ সদস্য, খাদিজা বানি শ (Khadija “Bunny” Shaw)। সেই তিনিই আবার এ বারের মেয়েদের বিশ্বকাপে (FIFA Women’s World Cup) জামাইকাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার অন্যতম কাণ্ডারি। মাত্র ১০ বছর বয়সে ফুটবলে হাতেখড়ি খাদিজা বানি শ-য়ের। দাদা কেনটার্ডোর হাত ধরে ফুটবল জগতে প্রবেশ খাদিজার। ১৩ বছর বয়সে জামাইকার অনূর্ধ্ব-১৫ টিমে ডাক পান খাদিজা। পরবর্তীতে জামাইকার হয়ে অনূর্ধ্ব-১৫ ছাড়াও অনূর্ধ্ব-১৭ এবং অনূর্ধ্ব-২০ দলের হয়েও খেলেছেন খাদিজা। জামাইকা টিমে তাঁর ডেবিউ হয়েছিল ১৪ বছর বয়সে। তাঁকে জামাইকা মহিলা ফুটবল টিমের গোলমেশিন বলা হয়। এ বারের বিশ্বকাপে জামাইকাকে তোলার পিছনে বড় অবদান রয়েছে খাদিজার। কিন্তু তাঁর উত্থানের পথ এতটাও মসৃণ ছিল না। TV9Bagla Sports এর এই প্রতিবেদনে জেনে নিন জামাইকার সিংহী খাদিজা বানি শ-য়ের লড়াইয়ের কাহিনি।
জামাইকার স্প্যানিশ টাউনে জন্ম খাদিজা বানি শ-র। তাঁর বাবা জর্জ শ জুতো তৈরি করেন। মা মনিকা কাজ করেন পোলট্রি ফার্মে। ১৩ জন ভাই-বোনের মধ্যে খাদিজা সবচেয়ে ছোট। লড়াকু খাদিজা জামাইকা মহিলা টিমকে এ বারের বিশ্বকাপে জেতানোর দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। একইসঙ্গে তিনি এও বলতে পিছপা হননি যে, ‘জামাইকায় মহিলাদের জন্য খুব বেশি সুযোগ নেই। আমাকে এই বিষয়ে আরও বেশি সোচ্চার হতে হবে। মানুষকে জানাতে হবে কী ঘটছে, আর কী ঘটা দরকার।’ আসলে খানিক হতাশা ও দায়িত্ববোধ থেকেই এই কথাগুলো বলেছেন খাদিজা। কারণ, জামাইকান ফুটবল ফেডারেশ এক সময় হাত তুলে নিয়েছিল মহিলা ফুটবল টিম থেকে। ফান্ড রাইজিং করে, অনেক বাধা পেরিয়ে বিশ্বমঞ্চে নিজেদের ছাপ রাখা শুরু করেছে জামাইকার মেয়েদের ফুটবল টিম।
বাস্তব যে বড়ই কঠিন, তা ২৬ বছরের খাদিজা বেশ টের পেয়েছেন। মাঠের লড়াইয়ে খাদিজা যতটা আগ্রাসী, ঠিক ততটাই মাঠের বাইরের লড়াইয়ে তিনি শক্তিশালী। তিন দাদাকে দলগত সহিংসতায় হারিয়েছিলেন খাদিজা বানি। আর এক দাদার প্রাণ কেড়ে নেয় একটি গাড়ি দুর্ঘটনা। এক সময় তাঁর মা বলেছিলেন, ‘তুমি সময় নষ্ট করছ। মেয়েদের ফুটবলের (জামাইকায়) উন্নতি তো চোখেই পড়ছে না।’ সেই শুরু। হার মানেননি খাদিজা। এরপর খাদিজা যুব দলের হয়ে খেলার সময় এক বিদেশি স্কাউকের নজরে পড়েন। তারপর বদলে যায় তাঁর ফুটবল কেরিয়ার।
২০১০ সালে জামাইকান মহিলা টিম ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। এরপর ২০১৪ সালে কিংবদন্তি গায়ক বব মার্লির মেয়ে সেডেলা মার্লির হস্তক্ষেপে আবার গড়ে ওঠে জামাইকান মহিলা ফুটবল টিম। যে টিমটার প্রতি কোনও স্পনসরের নজর পড়ত না, সেই টিমকে স্পনসর এনে দেন সেডেলা মার্লি। সঙ্গে চলতে থাকে ফান্ড রাইজিং। ধীরে ধীরে ফের মাথা তোলে জামাইকার মেয়েদের ফুটবল টিম। যার জন্য সেডেলাকে তাঁর ও দলের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন খাদিজা বানি শ।
স্প্যানিশ টাউনে বাচ্চা ছেলেদের সঙ্গে রাস্তায় ফুটবল খেলতে খেলতে বড় হয়েছেন খাদিজা। এক সময় ফুটবল খেলার জন্য তাঁর ছিল এক জোড়া হাফপ্যান্ট, এক জোড়া জুতো। খাদিজা জানান, অনেক সময় ফুটবল খেলার জন্য তিনি স্কুলের জুতো ব্যবহার করতেন। আর এখন তিনি ফুটবল বিশ্বে দাপট দেখিয়ে খেলছেন। ক্লাব ফুটবলে ম্যাঞ্চেস্টার সিটির হয়ে খেলেন তিনি। খাদিজা বানি শ-য়ের জামাইকা ব্রাজিলকে হারিয়ে এ বারের বিশ্বকাপের শেষ-১৬তে উঠেছে। এ বার নক আউটে জামাইকার সামনে রয়েছে কলম্বিয়া। এই টিমটাকে হারাতে পারলে শেষ আটে পৌঁছে যাবে জামাইকা। যে দুরন্ত ছন্দে এ বারের মেয়েদের বিশ্বকাপে রয়েছে জামাইকা, তাতে খাদিজাদের আটকানো সহজ হবে না।