দোহা: “হারলে আর কেউ তোমায় মনে রাখবে না।” ফিফা বিশ্বকাপ ২০২২-এর ফাইনালের আগে মেসি-আলভারেজদের উদ্দেশে এমনই বার্তা দিলেন আর্জেন্টিনার কিংবদন্তি ফুটবলার মারিও কেম্পেস। ১৯৭৮ সালের বিশ্বকাপের ফাইনালে নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে দুটি গোল করে আর্জেন্টিনাকে প্রথম বিশ্বকাপের স্বাদ দিয়েছিলেন কেম্পেস। তিনি সাফ জানিয়েছেন, তাঁর অভিধানে রানার্স শব্দটার কোনও অস্তিত্ব নেই। তবে, আলভারেজরা এ বার জিতবেন বলেই আশাবাদী তিনি। কারণ একটাই, “বদলে যাওয়া মেসি।” কী বললেন আর্জেন্টিনার প্রথম জাতীয় নায়ক? তুলে ধরল TV9 Bangla।
২০০৬ থেকে২০১৮ – চার-চারটি বিশ্বকাপ খেলা হয়ে গিয়েছে। কিন্তু, কাপ আসেনি মেসির হাতে। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, দেশের জার্সিতে খেলার সময় যেন পুরো হৃদয় দিয়ে খেলেন না তিনি। কেম্পেস বলেছেন, “বার্সেলোনার হয়ে ও জিনিয়াস ছিল। কিন্তু, আর্জেন্টিনার হয়ে খেলার সময় ও প্রত্যাশাপূরণ করতে পারত না। এমনটা নয় যে ও পারফর্ম করতে পারত না, কিন্তু, দল ওকে অনেক বেশি দায়িত্ব দিত। ওকে পেনাল্টি নিতে হবে। মাঝমাঠে অনেকটা নেমে এসে বল নিতে হবে, কর্নার নিতে হবে, হেডে জিততে হবে। ওকে সব কিছু করতে হবে। একজন খেলোয়াড়ের পক্ষে এত কিছু করা সম্ভব নয়। বিশ্বের সেরা খেলোয়াড় মেসির পক্ষেও নয়।”
২০২১ সালে ব্রাজিলে কোপা আমেরিকা কাপ জয়, ছবিটা বদলে দিয়েছে বলে মনে করছেন কেম্পেস। তিনি বলেছেন, “এই দলটার খেলোয়াড়দের মানসিকতাটাই আলাদা। ভাব অন্যরকম। চরিত্র, ব্যক্তিত্ব আলাদা। অর্থাৎ, মেসিকে সব দায়িত্ব নিতে হবে না। মেসির উপর এখন শুধু আক্রমণের দায়িত্ব। ফলে, ও শারীরিক ভাবে অনেক তাজা থাকছে, ভাবনাচিন্তায় স্পষ্টতা থাকছে। এটাই এখন মাঠে দেখা যাচ্ছে। এখনও দলকে মেসিই টেনে নিয়ে যাচ্ছে। তবে এখন ওর উপর ভার অনেক কম। খুশি মনে খেলতে পারছে।” কেম্পেসের দাবি, বার্সা ছেড়ে পারিস সাজাঁতে যাওয়াটা মেসির পক্ষে শাপে বর হয়েছে। ব্যক্তিগত দিক থেকে এটা মেসির জন্য এক কদম পিছিয়ে যাওয়া বলেই মনে করেন আর্জেন্টেনিয়ান কিংবদন্তি। কিন্তু, প্যারিস সাজাঁতে খেলার ফলেই মেসি অনেক তাজা অবস্থায় বিশ্বকপ খেলতে এসেছেন বলে জানিয়েছেন কেম্পেস।
কেম্পেসের মতে একইসঙ্গে মেসি এখন দলের নেতৃত্বও অনেক বেশি উপভোগ করছেন। নেদারল্যান্ডস ম্যাচের উদাহরণ দিয়েছেন তিনি। পেনাল্টি শুটআউটের পর যখন মাঠে ঝামেলা হচ্ছিল, সেই সময়ও মেসি দলের সবার আগে দাঁড়িয়েছিলেন। ১৯৭৮ সালের বিশ্বকাপের নায়কের দাবি, আগে থেকেই জাতীয় দলের নেতৃত্বের দায়িত্ব থাকলেও, বর্তমানে মেসি দলের স্পষ্ট নেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছেন। তিনি বলেছেন, “হয়তো ও আগেও এরকম ছিল, কিন্তু বাইরে দেখাত না। কারণ ওর চরিত্রের এই দিকটা দেখানোর কোনও দরকার ছিল না। কিন্তু, এখন সতীর্থদের হয়ে লড়াই করতে দেখা যাচ্ছে ওকে। অন্যায় মনে করলেই তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াচ্ছে।”
কেম্পেস আরও বলেছেন, “ফুটবলার মেসির জাদু এখনও অটুট রয়েছে। কিন্তু, আমরা ওর চরিত্রের অন্য দিকটা সম্পর্কে জানতামই না। আমরা এখন সেটা জানতে পারছি, এটা মোটেই খারাপ নয়। কারণ, ওই এখন বস। লিও মেসির জন্য়ই মানুষ চাইছে যে আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ জিতুক। এর আগে মারাদোনার জন্য জিততে চেয়েছিল। দিয়েগো প্রত্যাশা পূরণ করেছিল। এর জন্য মানুষ এখনও ওকে ভালবাসে। কিন্তু, আজ সবটাই মেসির জন্য। লোকে, মেসির নেতৃত্বে আর্জেন্টিনা জাতীয় দলকে পছন্দ করছে।”