রক্তিম ঘোষ
কলকাতাঃ তখনও বিশ্ব করোনার কবলে পড়েনি। করোনার ঠিক কয়েকদিন আগের ঘটনা। ভারোত্তলনের বড় আসর কলকাতার ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্রে বসেছিল। যার সব লাইমলাইটটাই শুষে নিয়েছিলেন টোকিও অলিম্পিকে রুপোর পদকজয়ী মীরাবাঈ চানু। শুধু অনুশীলন, ম্যাচ বা হোটেলে বিশ্রাম নেওয়াই নয়, গতবছর কলকাতায় এসে কল্লোলিনী তিলোত্তামাকে নিজের মত করে চিনতে চেয়েছিলেন মীরাবাঈ।
২০২০ সালে ফেব্রুয়ারি মাস।শীত তখন যাই যাই করছে। কলকাতায় বসেছে ভারোত্তলনের জাতীয় আসর। হাজির মীরাবাঈ চানু। ততদিনে রিও অলিম্পিকের ব্যর্থতা ভুলে সাফল্যের উড়োজাহাজে চেপে এদেশ থেকে ওদেশে গিয়েছেন। আর জিতছেন একের পর এক পদক। কলকাতায় যখন গত বছর ফেব্রুয়ারিতে এসেছিলেন, তখন তিনি ভারতীয় ভারত্তোলনে সুপারস্টার। তবুও তার যে একেবারেই সেই তারকাসুলভ ব্যপারই চিল না। বাংলার ভারোত্তলনের যিনি সভাপতি সেই চন্দন রায়চৌধুরি আবার বঙ্গ রোয়িংয়েরও কর্তা। তার সঙ্গে ফেব্রুয়ারির এক বিকেলে সটান হাজির ক্যালকাটা রোয়িং ক্লাবে। চোখের সামনে রবীন্দ্র সরোবর। চারদিকে সবুজ। চানু তো অবাক! কলকাতায় এমন প্রাকৃতিক মনোরম দৃশ্য় আছে। ক্রীড়াকর্তা চন্দন রায়চৌধুরি চানুকে শুধালেন, করবে নাকি একবার রোয়িং? এক কথায় রাজি অলিম্পিকে রুপোজয়ী।
ছবিও তুললেন রোয়িং করার সময়। মীরাবাঈ চানু তখন যেন একেবারে শিশুর মত। আনন্দে দেখছেন চারদিক। বিকেলের রোয়িং ক্লাবে তার জন্য ব্যবস্থা ছিল, ফিসফ্রাই আর ফ্রেস লাইম সোডা। ভেটকি মাছের ফিসফ্রাই। জিভের লোভ সামলানো যে বড় কঠিন। কঠোর ট্রেনিংয়ে থাকলেও সেদিন অবশ্য চানু চেখেই দেখে ফেললেন সেই ফিসফ্রাই। আর শুরু করলেন দেদার গল্প। গল্পের বেশিরভাগ জুড়েই তখন বলিউড। তিনি বলিউড ফিল্মের পোকা। আর সলমন খানের অন্ধভক্ত। ভারোত্তলনের প্রতিযোগীতা বা অনুশীলন না থাকলেই, সলমনে ফিল্মে ডুবে যান মীরাবাঈ। জানিয়েছিলেন সে কথা।
সেদিনের কথা উঠতেই চন্দন রায়চৌধুরি ওল্টাচ্ছিলেন স্মৃতির পাতা। ” ওঁর সঙ্গে সেদিন কথা বলেই বুঝেছিলাম ও খুব সৎ ও সরল। আর ওর জীবনদর্শন তুলনাহীন। ও বলেছিল মেয়ে আর ছেলেদের মধ্যে পার্থক্য নেই। পুরুষদের থকেও তো বেশি কর্মঠ মহিলা। তাঁরা সন্তানের জন্ম দেন। সেটা কম লড়াই!” এক নিঃশ্বাসে চন্দনবাবু বলছিলেন সেদিনের কথা। বঙ্গের পরিচিত এই ক্রীড়া কর্তা বলছিলেন, “সেদিন ওর কথা শুনে আর খেলা নিয়ে ওর ফোকাস দেখেই মনে হয়েছিল, চানু অলিম্পিকে পদক পাবেই। আমি যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী ছিলাম।”
শুধু চন্দনবাবুই নন, তাঁর মেয়ের সঙ্গেও চুটিয়ে গল্প করেছিলেন অলিম্পিকে রুপোজয়ী। চন্দনবাবুর মেয়ে চান্দ্রেয়ীকে তো জিজ্ঞাসাই করে ফেললেন চানু, “তুমিও তো খেলাধূলায় থাকতে পারো?”
চানুকে অলিম্পিক পদক পড়তে দেখে আবেগে ভাসছিলেন চন্দন রায়চৌধুরি। বললেন, “আবার কলকাতায় আসুক চানু। ও যা খেতে চায়, খাওয়াবো। যেখানে যেতে চাইবে, নিয়ে যাব।”
অলিম্পিকে আরও খবরের জন্য ক্লিক করুন: টোকিও অলিম্পিক ২০২০