এই প্রথম ‘স্পেস হারিকেন’ পর্যবেক্ষণ করেছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। প্রায় ৬০০ মাইল চওড়া এলাকা (১০০০ কিলোমিটার) জুড়ে এই হারিকেন দেখা গিয়েছে। পৃথিবীর উপরের বায়ুমণ্ডলে এই প্রাকৃতিক ক্রিয়াকলাপ লক্ষ্য করা গিয়েছে। মূলত উত্তর মেরুর চৌম্বকক্ষেত্রের উপরে এই হারিকেন দেখা গিয়েছে। পৃথিবীর উত্তর প্রান্তের উপরের বায়ুমণ্ডলে থাকা প্লাজমার ফলেই এই হারিকেন সৃষ্ট হয়েছে।
জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা জানিয়েছে, ২০১৪ সালের ২০ অগস্ট এই ‘স্পেস হারিকেন’ ঘটনা ঘটেছিল। তবে এই সম্পর্কিত গবেষণাপত্র গত ২২ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত হয়েছে ‘নেচার কমিউনিকেশনস’ জার্নালে। প্রায় ৮ ঘণ্টা ধরে টানা চলেছিল এই হারিকেন। এই ‘স্পেস হারিকেন; নিয়ে গবেষণা শুরু করেছিলেন চিনের শ্যানডং বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। তাঁদের গবেষণাপত্রই প্রকাশ হয়েছে ‘নেচার কমিউনেকশনস’ জার্নালে।
আরও পড়ুন- মঙ্গলের বুকে কেমন আছে নাসার রোভার ‘পারসিভের্যান্স’? দেখুন ভিডিয়ো
মূলত বায়ুমণ্ডলের নিম্ন স্তরেই এই হারিকেন লক্ষ্য করা যায়। তবে এই ‘স্পেস হারিকেন’ একেবারেই অন্যরকম। কারণ এই প্রথমবার বায়ুমণ্ডলের উপরের স্তরে বা আপার অ্যাটমোসফিয়ারে এই হারিকেন লক্ষ্য করা গিয়েছে। উত্তর মেরু বরাবর যে ঘূর্ণন লক্ষ্য করা গিয়েছে তার মধ্যে ছিল বায়ুমণ্ডলে থাকা প্লাজমা। সাধারণত যে হারিকেনের সঙ্গে আমরা পরিচিত তার থেকে এই স্পেস হারিকেন অনেকাংশেই আলাদা।
এই স্পেস হারিকেনের ক্ষেত্রে মূল উপাদান প্লাজমা। গোলাকার রিংয়ের আকারে অর্থাৎ স্পাইরাল আর্মের মতো তীব্র গতিতে ঘুরতে থাকে প্লাজমা। ঘড়ির কাঁটার বিপরীতে চলে ঘূর্ণন। উত্তর মেরুতে যে স্পেস হারিকেন লক্ষ্য করা গিয়েছে, তা টানা ৮ ঘণ্টা তাণ্ডব চালানোর পর ধীরে ধীরে শক্তিক্ষয় করে শান্ত হয়ে গিয়েছে। এই স্পেস হারিকেন এক হাজার কিলোমিটার এলাকা জুড়ে হয়েছিল।
তবে এ ধরনের স্পেস হারিকেন ১১০ কিলোমিটার থেকে ৮৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত এলাকা জুড়ে ঘুরতে পারে। প্লাজমার স্পাইরাল আর্মের ঘূর্ণন চলে অ্যান্টি-ক্লকওয়াইস। ঘূর্ণনের গতি হতে পারে প্রতি সেকেন্ডে ২১০০ মিটার। আর নিম্ন বায়ুমণ্ডল বা লোয়ার অল্টিটিউডে অর্থাৎ পৃথিবীতে যখন হারিকেন হয়, তখন ওই প্রবল শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রস্থল স্থির থাকে। স্পেস হারিকেনের ক্ষেত্রেই একই বৈশিষ্ট্য দেখা যায়।
চিন, আমেরিকা, নরওয়ে এবং ব্রিটেনের একদল বিজ্ঞানী চারটি ভিন্ন Defense Meteorological Satellite Program- এর সাহয্যে স্পেস হারিকেন পর্যবেক্ষণ করেছেন। এর সঙ্গে তাঁরা সাহায্য নিয়েছেন 3D magnetosphere modelling- এর। তারপরই প্রকাসজ করেছেন স্পেস হারিকেনের স্যাটেলাইট ইমেজ। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, গ্রহের জগতে এ ধরনের স্পেস হারিকেন সাধারণ ঘটনা। ঠিক যেমনটা ভূ-পৃষ্ঠেও হয়ে থাকে। তবে পৃথিবীতে হওয়া ঘূর্ণিঝড় হারিকেনের প্রভাবে প্রবল ঝড়বৃষ্টিতে ধ্বংস হয়ে যায় সুবিশাল এলাকা। আর স্পেস হারিকেন বা মহাকাশে হওয়া হারিকেনের ক্ষেত্রে ইলেকট্রনের বৃষ্টি হয়। কারণ সেখানে জলের বদলে প্লাজমা থাকে।