অন্বেষা বিশ্বাস
AI নিয়ে বিগত অনেক দিন ধরেই আলোচনা তুঙ্গে। 2022-এর নভেম্বরে ওপেন এআই (Open AI) চ্যাট জিপিটি (ChatGPT) চালু করে। এই চ্যাটবট আসার পর, অনেক কাজের ধরন বদলেছে। অনেক কাজ AI এর সাহায্যে করা হচ্ছে। এমনকি টেলিভিশন নিউজ চ্যানেলেও এআই অ্যাঙ্কর তৈরি করা হয়েছে। পরবর্তীতে মানুষের চাকরি যে AI কেড়ে নিতে পারে, তা নিয়েও অনেক আলোচনা করা হচ্ছে। যদিও বিশেষজ্ঞরা এমনকী সরকারও এআই নিয়ে চিন্তিত। কারণ কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে এটির অপব্যবহারও হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এআই মানুষের মতো কথা বলে, মানুষের মতোই কাজ করে, এমনকী একেবারে মানুষের মতোই প্রতিদিন নিয়ম করে শরীরের কথা মাথায় রেখে পর্যাপ্ত পরিমাণে জলও খায়। চ্যাট জিপিটি, আপনার করা একটি প্রশ্নের উত্তর দেয়, আর একবার করে জল খায়। শুনেই চমকে উঠলেন তো? ভাবছেন, এমন আবার হয় না কি? একটা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, সেও আবার জল খায়! এমনই একটি তথ্য় উঠে এসেছে, যা শুনলে আপনি চমকে উঠবেন।
দিনে কত লিটার জল খায় চ্যাট জিপিটি?
আপনার প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য চ্যাট জিপিটিকে পর্যাপ্ত পরিমাণে জল খেতে হয়। প্রতি 20 থেকে 50টি প্রশ্নের জন্য প্রায় 500 মিলি (0.5 লিটার) জল পান করে এই জনপ্রিয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাটি। ইউনিভার্সিটি অফ কলোরাডো রিভারসাইড এবং ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাস আর্লিংটনের গবেষকরা প্রকাশ করেছেন, যে AIগুলির সিস্টেমগুলিকে ঠান্ডা রাখতে লক্ষ লক্ষ লিটার জল ঢালতে হয়। গবেষকরা জানিয়েছেন, মাইক্রোসফটের ডেটা সেন্টারে জিপিটি-3 প্রশিক্ষণের জন্য 7,00,000 লিটার বিশুদ্ধ জল প্রয়োজন। এত পরিমাণ জল দিয়ে প্রায় 350টি BMW এবং 320টি টেসলা বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরি করা যায়। গবেষকরা জানান, যদি GPT-3-কে এশিয়ান ডেটা সেন্টারে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, তাহলে এই জলের ব্যবহার তিন গুণ পর্যন্ত বেড়ে যাবে।
কেন এত পরিমাণ জল খাওয়ানো হয়?
কলোরাডো এবং টেক্সাসের গবেষকরা জানাচ্ছেন, ওপেন এআই এর চ্যাট জিপিটি প্রতি 25 থেকে 50টি প্রশ্নের উত্তরে 500 মিলি জল পান করে। এই চ্যাটবটটির একটি লার্নিং মেশিন রয়েছে। যার মধ্যে সমস্ত ডেটা সঞ্চিত থাকে। আর সেই ডেটার উপর ভিত্তি করেই চ্যাট জিপিটি আপনার প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর দেয়। যেটিকে ডেটা সেন্টারও বলা হয়। এই ডেটা সেন্টার প্রতি সেকেন্ডে লক্ষ লক্ষ প্রশ্ন প্রসেস করে। সেজন্য ডাটা সেন্টারের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। ডেটা সেন্টারের তাপমাত্রা কম থাকলে কোনও সমস্যা হয় না। কিন্তু যখনই গরম হয়ে যায় তখন আর চ্যাট জিপিটির কাছে কোনও প্রশ্ন এসে পৌঁছতে পারে না। ফলে সে উত্তরও দিতে পারে না। এজন্য কিছু সময় পরে পরেই ডেটা সেন্টারে জল দিয়ে ঠান্ডা করা হয়।
শুধুই কি চ্যাট জিপিটি জল খায়?
চ্যাট জিপিটিই একমাত্র নয়, যার পিছনে লক্ষ লক্ষ লিটার জল খরচ হয়। ডেটা সেন্টার ঠান্ডা রাখতে গুগলের বার্ডও প্রচুর জল খরচ করে। The Oregonian নামে একটি ওয়েবসাইট প্রকাশ করেছে, Google এর গ্লোবাল ডেটা সেন্টারগুলি 2022 সালে 67,500 কোটি লিটার জল ব্যবহার করেছে। আরও এক তদন্তে দেখা গিয়েছে যে, গুগল শুধুমাত্র 2021 সালে এই অঞ্চলে প্রায় 125 কোটি লিটার জল ব্যবহার করেছে। এক্ষেত্রে পরিবেশের উপর ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন বিজ্ঞানীরা।
পরিবেশের উপর কতটা খারাপ প্রভাব পড়ছে?
জল এবং পরিবেশ বাঁচাতে হলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাগুলির উপরে এভাবে জল খরচ করা যাবে না বলে জানাচ্ছেন গবেষকরা। যে হারে গোটা বিশ্বে জলের সংকট দেখা দিচ্ছে, তাতে এই ধরনের কাজ ভয়াবহ দিন ডেকে আনবে। শুধু ডেকে আনবে বলে ভুল বলা হবে। ইতিমধ্যেই ভয়াবহ জল সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে মানুষ।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তারও প্রয়োজন আর পরিবেশেরও…
পরিবেশকে সুস্থ রেখেই প্রযুক্তিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থার কথাও ভাবছেন বিজ্ঞানীরা। এআই কোম্পানিগুলি একটি শীতল জায়গায় তাদের ডেটা সেন্টার তৈরি করার কথা ভাবছেন। এতে এই বিপুল পরিমাণ জলের প্রয়োজন হবে না লার্নিং মেশিনটি ঠান্ডা রাখার জন্য। এই ব্যবস্থাকে বাস্তবায়িত করার জন্য ইতিমধ্যেই একটি কোম্পানি পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করে দিয়েছে। মাইক্রোসফ্ট বর্তমানে একমাত্র কোম্পানি যারা তাদের ডেটা সেন্টার নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে। ফলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কাজ বাড়বে, তবে তা পরিবেশকে সুস্থ রেখেই।