Plant’s Ultrasonic Sounds: আঘাতে আর অবহেলায় গাছও কাঁদে হাউ-হাউ করে! কানে যায় না আপনার: সমীক্ষা

Dec 07, 2023 | 1:28 PM

Science News Today: কখনও কি গাছ কাটার আগে, পাতা ছিঁড়ে নেওয়ার আগে ভেবেছেন, গাছেরও যে প্রাণ আছে। প্রাণ যদি থাকে, তাহলে এই আঘাত, অত্যাচারে কোনও সাড়াশব্দ করে না কেন?

Plants Ultrasonic Sounds: আঘাতে আর অবহেলায় গাছও কাঁদে হাউ-হাউ করে! কানে যায় না আপনার: সমীক্ষা

Follow Us

অন্বেষা বিশ্বাস

ছোটো থেকে শুনে এসেছেন যে, গাছেরও প্রাণ আছে কিংবা সন্ধে হলে গাছের পাতা ছিঁড়তে নেই- এমন আরও কত কী! আপনার সাধের বাগানেও রয়েছে অনেক রকম গাছ। সময়ে-সময়ে তাদের জল দেন, সার দেন। কিন্তু একদিনও যদি যত্ন নিতে ভুলে যান, তারা শুকিয়ে যায়। এছাড়াও চতুর্দিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে অজস্র গাছপালা। তারা যত্ন পায় না আপনার বাগানের গাছগুলোর মতো। কখনও পাতা ছিঁড়ে নেওয়া হয়, কখনও ফুল অথবা ফল। তীব্র রোদে জল দেওয়ার মতো কেউ থাকে না। অথচ দিনের পর দিন ছায়া হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে মানুষের মাথার উপর। কখনও কি গাছ কাটার আগে, পাতা ছিঁড়ে নেওয়ার আগে ভেবেছেন যে, গাছেরও প্রাণ আছে। প্রাণ যদি থাকে, তাহলে এই আঘাত, অত্যাচারে কোনও সাড়াশব্দ করে না কেন? আপনার এই ভাবনার উত্তর দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তারা গাছের প্রাণ নিয়ে নতুন করে গবেষণা করেছেন। আর গবেষণার যে ফলাফল উঠে এসেছে, তা শুনলে আপনার গাছের পাতা ছেঁড়ার আগে হাত কাঁপবে। সম্প্রতি বিজ্ঞান জার্নাল ‘Cell’-এ প্রকাশিত এক গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, গাছেরা অযত্ন পেলে বা আঘাত পেলে চিৎকার করে ওঠে।

তবে কি গাছ কথা বলে?

যদিও এতদিন গাছপালাকে নীরব মনে করা হত। কিন্তু বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, গাছপালা নীরব নয়। ‘Sound emitted by plants under stress’ শীর্ষক ওই গবেষণায় বলা হয়েছে যে, সমস্ত গাছপালা বিভিন্ন ধরনের শব্দ করে। আর সেই শব্দ দিয়ে তারা বোঝাতে চায় যে, তারা কী-কী অবস্থায় রয়েছে।

কীভাবে করা হল এমন গবেষণা?

গবেষণার জন্য বিজ্ঞানীরা গ্রিনহাউসে অনেক টমেটো এবং তামাক গাছ লাগিয়ে ছিলেন। কোনও গাছের বেশি যত্ন নেওয়া হয়েছিল, আবার কোনও গাছের কম। আবার কোনও গাছকে একটুও জল দেওয়া হয়নি। কিছু গাছের পাতাও ছিঁড়ে নেওয়া হয়েছিল। এই সব কিছুর পরে একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা Artificial Intelligence-এর সাহায্যে বিজ্ঞানীরা শব্দ শোনার চেষ্ঠা করেছিলেন। তারা প্রথমবার শব্দ শুনতেই অবাক হয়েছিলেন। আর দ্বিতীয়বার পরীক্ষা করার সময় মাটিরও পরীক্ষা করেছিলেন। সেই পরীক্ষা করার পরে নিশ্চিত হয়েছিলেন যে, মাটিতে এমন কোনও পোকা নেই যারা শব্দ করছে। অর্থাৎ সব শব্দ গাছেদের থেকেই উৎপন্ন হচ্ছে।

এই সময় বিজ্ঞানীরা দেখেছেন যে, বিভিন্ন পরিস্থিতিতে গাছপালা বিভিন্ন শব্দ করে। অর্থাৎ যত্নের পর এক ধরনের আওয়াজ উৎপন্ন হয়। আর আঘাত বা অযত্নের পরে আর একরকম আওয়াজ। একটি সাধারণ উদ্ভিদ ঘন্টায় একবার একবার করে শব্দ করে। আঘাত করার পর উদ্ভিদ 13 থেকে 40 বার চিৎকার করে। এমনকী অযত্নে থাকার দু’দিনের মধ্যেই তারা সাহায্যের জন্য ডাকতে শুরু করে।

কারা শুনতে পায় এই চিৎকার? কারাই বা এগিয়ে আসে সাহায্য়ের জন্য়?

এই প্রসঙ্গে গবেষণার প্রধান লেখক লিলাচ হাদানি জানিয়েছেন, কোনও শান্ত ফসলের মাঠে গেলেও এই ধরনের শব্দ শুনতে পাওয়া যায়।ওই শব্দেই লুকিয়ে থাকে অনেক তথ্য। সেই উচ্চ কম্পাঙ্কের শব্দ শোনার ক্ষমতা মানুষের না-থাকলেও, বেশ কিছু কীটপতঙ্গ ও প্রাণীরা গাছের চিৎকার শুনতে পায়। যেমন কাঠবিড়ালি, বাদুড় বা ইঁদুরের মতো প্রাণীরা শুনতে পায়। বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, উদ্ভিদে বেড়ে ওঠা অনেক প্রজাতি তাদের সাহায্য করার চেষ্টা করে। তবে কীভাবে সাহায্য় করে তা এখনও বিজ্ঞানীদের কাছেও স্পষ্ট নয়।

আপনি কেন শুনতে পান না গাছের কান্না?

এর কারণও ব্যাখ্যা করেছেন বিজ্ঞানীরা। তারা জানাচ্ছেন, মানুষ সর্বোচ্চ 20 KHz শব্দ শুনতে পায়। এই ফ্রিকোয়েন্সি শৈশবকালে থাকে। কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হ্রাস পায়। আর উদ্ভিদ 40 থেকে 80 KHz শব্দ নির্গমন করে। যা মানুষের কাছে খুব উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সিসম্পন্ন। তাই মানুষ গাছের চিৎকার শুনতে পায় না।

গাছের প্রাণ আছে, তা প্রমাণ করেন বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসু । যদিও গাছের প্রাণ তো আগে থেকেই ছিল, তিনি পরীক্ষা করে তা প্রমাণ করেছিলেন। গাছও মানুষের মতো জীবন্ত, তারও অনুভূতি আছে। মানুষ ও উদ্ভিদ, দুইয়ের ক্ষেত্রেই কিছু সাদৃশ্যপূর্ণ বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যারা ব্যথার মতো অনুভূতিতে সাড়া দিতে সাহায্য করে। সৃষ্টির আদিকাল থেকে যে ব্যথা অপ্রকাশিত ছিল, যে কান্নার শব্দ মানুষের কানে আসে না, বিজ্ঞানের হাত ধরে সেটাও সামনে এল। যা এতকাল আমাদের কাছে অধরা ছিল।

Next Article