Bengali Mountaineers: বাড়িতে অসুস্থ মা, ছেলে গড়লেন ইতিহাস
ছোট থেকে জীবনে বহু ঘাত প্রতিঘাত পেরিয়ে আজ সর্বোচ্চ শৃঙ্গে পৌঁছেছে দেবাশীষ।ব্রহ্মা পর্বত দুর্গম পর্বতগুলির মধ্য অন্যতম।প্রথম ১৯৭৩ সালে ইংল্যান্ডের একজন পর্বত আরোহী এই শৃঙ্গ জয় করেন।
২০০০ সালে বাবা মারা যাওয়ার পর মামা রতন কুমার সাহার কাছে মানুষ হয়েছে বাঙালি এই পর্বত আরোহী দেবাশীষ। শুধু তাই নয় শারীরিকভাবে মা রিনা মজুমদারও অসুস্থ্য, একবার হার্ট অ্যাটাকও হয়েছে। বিছানায় শয্যাশায়ী মাকে রেখে গত ৩০ জুন বাড়ি থেকে ব্রহ্মা ১ পর্বত জয়ের স্বপ্ন নিয়ে বের হন চুঁচুড়া পিপুলপাতির বাসিন্দা দেবাশীষ মজুমদার ও তার সঙ্গীরা। বাবার মৃত্যুর পর ছোট থেকে মামাই তাকে মানুষ করেছে। বৈদ্যবাটি কলেজে স্নাতকের জন্য ভর্তি হয়েও সংসারের হাল ধরতে তাকে পড়াশোনায় ইতি টানতে হয়েছিল। তবুও শৃঙ্গ জয় এর স্বপ্ন তাকে হাতছানি দিয়েছে বারবার। মামার একটি সামান্য একটি বিস্কুটের কারখানা চালিয়ে স্বপ্ন দেখত শৃঙ্গজয়ের। পর্বত আরোহনের পাশাপাশি অ্যাথলেটিক্সেও সুনাম রয়েছে তার। চুঁচুড়া মাঠের ধারে একটি ক্লাবে বেশ কয়েকজনকে সাঁতার শেখায়।ছোট থেকে জীবনে বহু ঘাত প্রতিঘাত পেরিয়ে আজ সর্বোচ্চ শৃঙ্গে পৌঁছেছে দেবাশীষ।ব্রহ্মা পর্বত দুর্গম পর্বতগুলির মধ্য অন্যতম।প্রথম ১৯৭৩ সালে ইংল্যান্ডের একজন পর্বত আরোহী এই শৃঙ্গ জয় করেন।তার শেষ বারের মত ১৯৭৯ সালে এক দল পর্বত আরোহী এই শৃঙ্গ জয়ের পর আর কেউ এই পর্বতের শৃঙ্গে পৌছতে পারেনি। দীর্ঘ ৪৪ বছরের খরা কাটিয়ে অবশেষে গত মঙ্গলবার সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ জয় করেন ব্রহ্মা ১ পর্বত শৃঙ্গ। যার উচ্চতা ৬৪১৬ মিটার । খারাপ আবহাওয়ার কারণে প্রথমে শৃঙ্গ জয়ের চেষ্টা করেও সফল হয়নি দেবাশীষ ও তার সঙ্গীরা। শৃঙ্গ খুঁজে না পেয়ে ১৩৬ মিটার দূর থেকে ফিরতে হয়েছিল তাদের। আবহাওয়া অনুকূল না থাকায় গত রবিবার দুর্ঘটনারও কবলে পড়তে হয়েছিল তাদের। পরদিন অর্থাৎ সোমবার ফের শুরু হয় যাত্রা। তিনজন বেস ক্যাম্পে থাকলেও পাঁচ জন শেরপাকে নিয়ে বাকি ৯ জন শৃঙ্গে পৌঁছয় ।শেষমেষ সেই খরা কাটিয়ে শীর্ষে পৌঁছন দেবাশীষ ও তার সঙ্গীরা। এর আগে ২০২২ সালে দেবাশীষ ও তার দলের সদস্য আরো দুটি ছ’হাজারী শৃঙ্গ জয় করে।দেও টিব্বা ও ইন্দ্রাসন দুটি পর্বত শৃঙ্গ জয় করে। সোনারপুরের পর্বত আরোহীর দলের ১২ জন সদস্য মিলে ব্রহ্মা ১ শৃঙ্গ জয়ের লক্ষ্যে বের হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে ছিলেন দুজন এভারেস্ট জয়ী সত্যরূপ সিদ্ধান্ত ও রুদ্রপ্রসাদ। আজ তাদের এই শৃঙ্গজয়ে সকলেই উচ্ছ্বসিত। শয্যায় শুয়েই ছেলের সাফল্যে খুশি দেবাশীষের মা।
দেবাশীষের মামা বলেন, পর্বত তার কাছে খুব প্রিয়। যখনই সময় পায় শৃঙ্গ জয় এর লক্ষ্যে বেরিয়ে পড়ে। প্রচন্ড দুশ্চিন্তায় মধ্যে ছিলাম ,এমন কি রাতের ঘুম হয়নি। যখন শুনতে পাই ১৩৬ মিটার দূর থেকে তাদের ফিরতে হয়েছে এমন কি এক শেরপাও উপর থেকে পড়ে গিয়েছে । তবুও তাদের প্রত্যেকের জেদের কাছে হার মানতে হয়েছে। শেষমেষ শৃঙ্গ জয় করতে পেরেছে। তবে দেবাশীষের ইচ্ছা এভারেস্ট জয় করবে,যদিও তার জন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন।