Bob Khathing Museum of Valour: বব খাতিং হাঁটা দিলেন… ভারতে জুড়ল তাওয়াং
Major Ralengnao Khathing: তাওয়াং যাওয়ার জন্য তখন সরাসরি কোনও রাস্তা ছিল না। জানুয়ারি মাসে বরফে ঢাকা পাহাড় আর দুর্গম জঙ্গল। প্রবল প্রতিকূলতার মধ্যে যেটুকু সম্ভব গাড়িতে, বাকিটা পায়ে হেঁটে নিজের বাহিনীকে নিয়ে রওনা দেন মেজর খাতিং। পথেই ২৬শে জানুয়ারি তাঁরা জাতীয় পতাকা তোলেন। ভারতের অংশ হলেও যেসব জায়গায় আগে কখনও জাতীয় পতাকা ওড়েনি। ১৪ হাজার ফুট উচ্চতায় সেলায় পৌঁছে বাহিনীর সবাই অসুস্থ হয়ে পড়েন, ছিল না অক্সিজেন...
আপনাদের একটা গল্প শোনাই। ভারতীয় সেনার এক Unsung Hero-র গল্প। দিনকয়েক আগেই তাঁকে নিয়ে আস্ত একটা মিউজিয়ামের উদ্বোধন হয়ে গেল। অসমের তেজপুর সেনাঘাঁটি থেকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং ভার্চুয়ালি সেই মিউজিয়ামের উদ্বোধন করেন। যেটা কিনা তৈরি হয়েছে ভারত-চিন প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার কাছে অরুণাচলের তাওয়াংয়ে। যাঁকে নিয়ে একটা মিউজিয়াম তৈরি হয়ে গেল, তাঁকে বিস্মৃতপ্রায় বলা যায় কিনা এ প্রশ্ন যে কেউ করতেই পারেন। তবে, আর্মড ফোর্স বরাবরই তাঁকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে এলেও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বাইরে বাকি ভারতে সাধারণ মানুষের কতজন তাঁর নাম শুনেছেন, সেটা নিয়ে সন্দেহ আছে। তিনি মেজর রালেংনাও বব খাতিং। রয়্যাল ব্রিটিশ আর্মিতে থাকার সময় মিলিটারি ক্রস পেয়েছিলেন। স্বাধীনতার পর ভারতীয় সেনায় যোগ দেন। সেনাবাহিনী থেকে অবসরের পর ছিলেন নাগাল্যান্ডের মুখ্যসচিব। পরে মায়ানমারে ভারতের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্বও পালন করেন। মেজর বব খাতিং না থাকলে হয়ত আজ তাওয়াং ভারতের থাকতো না। চিনের দখলে চলে যেতো। আর তাওয়াং চিনের দখলে চলে গেলে হয়ত গোটা অরুণাচলই আমরা ধরে রাখতে পারতাম না। সেই গল্পটাই এবার বলব। ১৯৪৯ সালে বিপ্লবের পরই চিন ঘোষণা করে তিব্বত তাদের অংশ। তিব্বতি শরণার্থীরা ভারতে পালিয়ে আসতে শুরু করেন। ভারতের সঙ্গে তিব্বতের সীমারেখা ম্যাকমোহন লাইনের এপারে অরুণাচলের তাওয়াং। তখন অবশ্য অরুণাচল নাম ছিল না, বলা হত নেফা। নর্থ-ইস্ট ফ্রন্টিয়ার এজেন্সি। সেখানে পোস্টেড ছিলেন মেজর বব খাতিং। খাতায়-কলমে তাওয়াং ব্রিটিশ ইন্ডিয়ার অংশ হলেও সেখানে ব্রিটিশ প্রশাসন বলতে কিছু ছিল না। কারণ জায়গাটা এতই দুর্গম যে সেখানে ব্রিটিশের হাত পৌঁছতে পারেনি। স্বাধীন ভারতের প্রশাসনেরও ছিল প্রায় একই অবস্থা। চিন তিব্বতকে নিজেদের অংশ বলে ঘোষণা করার পরই বোঝা যায় এবার তারা তাওয়াংয়ের দিকে নজর দেবে। এরপর ১৯৫১. চিনের বিপদ আরও বাড়ছে। নেহরুর সঙ্গে কথা বলে সেই সময়ে অসমের গভর্নর জয়রামদাস দৌলতরাম, মেজর খাতিংকে বলেন আপনি ফোর্স নিয়ে এগোন এবং যেকোনও মূল্যে তাওয়াংয়ে স্থায়ী ঘাঁটি তৈরি করুন, না হলে চিন যে কোনও দিন তাওয়াং দখল করে নেবে। শুরু হয় সেনা অভিযান।
তাওয়াং যাওয়ার জন্য তখন সরাসরি কোনও রাস্তা ছিল না। জানুয়ারি মাসে বরফে ঢাকা পাহাড় আর দুর্গম জঙ্গল। প্রবল প্রতিকূলতার মধ্যে যেটুকু সম্ভব গাড়িতে, বাকিটা পায়ে হেঁটে নিজের বাহিনীকে নিয়ে রওনা দেন মেজর খাতিং। পথেই ২৬শে জানুয়ারি তাঁরা জাতীয় পতাকা তোলেন। ভারতের অংশ হলেও যেসব জায়গায় আগে কখনও জাতীয় পতাকা ওড়েনি। ১৪ হাজার ফুট উচ্চতায় সেলায় পৌঁছে বাহিনীর সবাই অসুস্থ হয়ে পড়েন, ছিল না অক্সিজেন। জওয়ানরা একটানা একশো মিটারের বেশি হাঁটতেও পারছিলেন না। এইভাবে ২ মাস পাহাড়ি রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে ফেব্রুয়ারির শেষ নাগাদ তাঁরা পৌঁছন জং নামে একটা গ্রামে। যে গ্রামটা ছিল তাওয়াংয়ের এন্ট্রি পয়েন্ট। গ্রামে পৌঁছেই গ্রামের বয়স্ক মানুষদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন মেজর খাতিং। তাঁদের বোঝান, আমরা ইন্ডিয়ান আর্মি এসেছি, আপনাদের ভালোর জন্য। আমরা এখানে থাকব। চিন যদি ঢোকার চেষ্টা করে, তাহলে আটকাবো। আপনারা আমাদের সাহায্য করুন। গ্রামবাসীদের মন জয় করতে জওয়ানরা তাঁদের হাতে তুলে দেন নুন, চিনি, সিগারেট। গ্রামবাসীদের বোঝানো হয় যে তাঁরা ম্যাকমোহন লাইনের এপারে ভারতের বাসিন্দা। তাঁরা যেন তিব্বতের লাসা থেকে আসা কোনও অর্ডার অ্যাকসেপ্ট না করেন। বোঝান হয় ভারতীয় সেনা তাওয়াংবাসীর ধর্ম, সংস্কৃতি, ঐতিহ্যে কোনও হাত দেবে না। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই কাজ হয়। ভারতীয় সেনাকে সাদরে বরণ করে নেয় তাওয়াং। সেখানে তৈরি হয় ইন্ডিয়ান আর্মির স্থায়ী অফিস। ফরওয়ার্ড এরিয়ায় বসানো হয় স্থায়ী সেনা চৌকি। বলতে পারেন, ১৯৪৭-এর ১৫ই অগাস্ট ভারত স্বাধীন হলেও একান্নর ফেব্রুয়ারিতে প্রথম তাওয়াং ভারতের দখলে আসে। অনেকটা যেভাবে দেশীয় রাজ্যগুলো স্বাধীনতার পর আস্তে আস্তে ভারতের অংশ হয়েছিলো। মেজর খাতিং ও তাঁর বাহিনী সেদিন এই জরুরি কাজটা করতে না পারলে হয়ত আজ তাওয়াংয়ের ওপর আমাদের নিয়ন্ত্রণ থাকতো না।