Climate Change: নেই শীত, নেই গ্রীষ্ম, বর্ষা এক দুনিয়া—এক ঋতুই ভরসা!
Global Warming Effects: মোদ্দা কথায়, একমাত্র গরমকাল এবং বর্ষাকাল ছাড়া আর কোনও ঋতুকেই আলাদা করা যাবে না। মরুভূমিতে সবুজের কথা বললাম। সেটাও কিন্তু শুরু হয়ে গেছে। কবি যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত লিখেছিলেন, চেরাপুঞ্জির থেকে একখানি মেঘ ধার দিতে পারো গোবি-সাহারার বুকে। কবির আশা পূরণ হয়েছে বলতেই পারি। সত্যিই সাহারাতে শিহরণ লেগেছে। অতিবৃষ্টিতে মরুভূমিতে নেমে এসেছে বন্যা।
ঘুর্ণিঝড় দানা আজ দিনটা ভাসিয়ে দিয়েছে। তবে এই যে বারবার সাইক্লোন, অসময়ে ঝড়-বৃষ্টি, এসব শুধু আমাদের ভারতীয়দের সমস্যা নয়। দুনিয়ার সব প্রান্তেই একই অবস্থা। গত ৫ বছরে আমেরিকার বিভিন্ন প্রদেশে একশোর বেশি ঝড় আছড়ে পড়েছে। লক্ষ লক্ষ মানুষ আশ্রয় হারিয়েছেন। ঠিক আমাদের উপকূল এলাকায় যেমন হয়, তেমনই। বন্যায় ডুবেছে ইংল্যান্ড। আফ্রিকার খরাপ্রবণ এলাকায় প্রবল বৃষ্টি ডেকে এনেছে ধস। এই সমস্ত নিয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট প্রকাশ করেছে ইউএন কমিশন অফ ক্লাইমেট চেঞ্জ। রিপোর্টের খুব গুরুত্বপূর্ণ চারটে পয়েন্ট: এক, ২০৩০ সালের মধ্যে ভারতের তাপমাত্রা দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে যাবে। দুই, গরম ডেকে আনবে হার্ট অ্যাটাকের মতো একগুচ্ছ বিপদ। তিন, ভারতের নানা শহর ক্রমশ জলশূন্য হয়ে পড়বে। আর চার, আমাদের চেনা আবহাওয়া, পরিবেশটা ক্রমশ বদলে যাবে। যেমন ধরুন, বর্ষা আসতে দেরি হবে। অসময়ে বৃষ্টি আসবে। যেখানে বরফ পড়ার কথাই নয়, সেখানেও বরফ পড়বে। মরুভূমিতে সবুজ জন্মাবে। ইত্যাদি ইত্যাদি। এই সবের কিছু কিছু আমরা এখনই দেখতে পাচ্ছি। বর্ষাকালের কথাই ভাবুন না। জুনের বদলে গত কয়েকবছর ধরেই বর্ষা আসতে দেরি হচ্ছে। রিপোর্টে যা ইঙ্গিত, আরও কয়েকবছর পরে ডিসেম্বরে বর্ষা হলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই।
মোদ্দা কথায়, একমাত্র গরমকাল এবং বর্ষাকাল ছাড়া আর কোনও ঋতুকেই আলাদা করা যাবে না। মরুভূমিতে সবুজের কথা বললাম। সেটাও কিন্তু শুরু হয়ে গেছে। কবি যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত লিখেছিলেন, চেরাপুঞ্জির থেকে একখানি মেঘ ধার দিতে পারো গোবি-সাহারার বুকে। কবির আশা পূরণ হয়েছে বলতেই পারি। সত্যিই সাহারাতে শিহরণ লেগেছে। অতিবৃষ্টিতে মরুভূমিতে নেমে এসেছে বন্যা। মরক্কোর রুক্ষ মরুভূমিতে জলে ডুবে গেছে পাম গাছ। জল জমেছে বালিয়াড়িতে। মরুদেশে সম্প্রতি এমন বন্যা হয়েছে যে জলে ভেসে গিয়ে প্রায় কুড়ি জন মারা গেছেন। মরক্কোর ইরিকি হ্রদ জলের অভাবে প্রায় ৫০ বছর ধরে শুকনো ছিল। সেখানে এখন জল টলটল করছে। আসলে গোটা সাহারা মরুভূমির জলবায়ুটাই বদলে যাচ্ছে। আর আপনাদের বলি শুধুই কি সাহারা। পশ্চিমী ঝঞ্ঝার দাপট বাড়াতে আমাদের থর মরুভূমিতেও বৃষ্টিপাত আগের চেয়ে অনেকগুণ বেড়ে গেছে। রাজস্থানে জয়সলমের, বারমের, বিকানির, যোধপুর জেলায় প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে আছে থর মরুভূমি। সবচেয়ে বেশি ৩২ শতাংশ মরু এলাকা রয়েছে জয়সলমেরে। এবারের বর্ষায় জয়সলমেরে স্বাভাবিকের চেয়ে ১৩৪ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়েছে। আর গোটা মরুভূমিতে গড়ে বৃষ্টি হয়েছে প্রায় ৮০ শতাংশ বেশি। গত ৩ বছর ধরেই আবহাওয়ার এই পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। পশ্চিমী ঝঞ্ঝা ছাড়াও সাগরে তৈরি হওয়া নিম্নচাপগুলোরও এখন পশ্চিম রাজস্থানের দিকে সরে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। ফলে, বৃষ্টিতে ভিজছে মরুদেশ। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, থর থেকে সাহারা। এমন বৃষ্টি চলতে থাকলে আগামী দিনে সবুজে ঢেকে গিয়ে বদলে যেতে পারে মরুভূমির চরিত্র।