Election: ১৯৫২ থেকে ২০২৪, গণতন্ত্রের নানা চড়াই-উতরাই, নির্বাচনের নানা অজানা গল্প
১৯৫২ থেকে ২০২৪। সাত শতক পেরিয়ে গেল ভারতের গণতন্ত্র। গণতন্ত্রের নানা চড়াই-উতরাই নির্বাচনের নানা অজানা গল্প। স্বাধীন দেশে নির্বাচনী গণতন্ত্রের পথ চলা নেহরুর হাত ধরে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে দেড় দশকের বেশি ১৯৬৪ সালে নেহরুর মৃত্যুর পর প্রশ্ন উঠল যে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী কে? উঠে এল দুটো নাম মোরারজি দেশাই আর লালবাহাদুর শাস্ত্রী।
স্বাধীনতার পর দেশভাগের কাঁটা-তার, খাদ্যসঙ্কট আর বিপুল দারিদ্রকে সঙ্গী করে শুরু হয়েছিল ভারতীয় গণতন্ত্রের পথ চলা। বি আর অম্বেদকর থেকে শুরু করে অনেকেই সংশয় প্রকাশ করেছিলেন এই গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ এবং নিরক্ষর মানুষের সার্বিক ভোটাধিকার নিয়ে। কিন্তু অটল ছিলেন জওহরলাল নেহেরু। ১৯৫২ সালে দেশের প্রথম নির্বাচন কমিশনার সুকুমার সেনের তত্ত্বাবধানে শুরু হল ভারতের প্রথম নির্বাচন। বিপুল ভাবে জয়ী কংগ্রেস। ১৯৫৭ আর ৬২-তেও তাই। পরপর তিনবার প্রধানমন্ত্রী অপ্রতিদ্বন্দী নেহেরু।
কিন্তু ইতিমধ্যেই কংগ্রেসের ভীত নড়তে শুরু করেছিল। ক্ষমতা বাড়াচ্ছিল কমিউনিস্ট পার্টি বা জনসংঘের মত দলগুলো। এর ভিতরেই চীনের সঙ্গে যুদ্ধে পর্যুদস্তু হল ভারত। তারপর ১৯৬৪ সালে প্রায়ত হলেন নেহেরু। বিরাট প্রশ্নের সামনে দেশ এবং কংগ্রেস। নেহেরুর পরে কে?
মোরারজি দেশাই। গুজরাতি এই নেতা প্রধানমন্ত্রী হতে খুবই আগ্রহী ছিলেন। প্রকাশ্যে জানিয়েওছিলেন সেই কথা। কিন্তু কড়া মেজাজের মোরারজিকে কংগ্রেসের শীর্ষস্থানীয় নেতারা বিশেষ পছন্দ করতেন না। স্বাভাবিকভাবেই পাল্লা ভারি হল শাস্ত্রীর দিকে।
দৌড় থেকে সরে দাঁড়ালেন মোরারজি এবং ভারত পেল তার দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রীকে। কাশ্মীর। ভূস্বর্গ। কিন্তু এই একটুকরো বেহেস্ত নিয়েই জাহান্নমের আগুন জ্বলে উঠেছে বারবার। ১৯৬২ সালে চিনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে হিমালয়ের ভিজে, পিছল খাড়াই-উতরাইতে পর্যুদস্ত হয়েছিল ভারতীয় সেনা। ১৯৬৫। কাশ্মীর ইস্যুতে শুরু হল ভারত-পাক যুদ্ধ। পাকিস্তান গোড়াতে এই যুদ্ধকে একটু হালকা ভাবে নিয়েছিল, কিন্তু সেই ভুল ভাঙতে সময় লাগলো না। আগুন দিয়েই আগুনের জবাব দিল ভারত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে বড় ট্যাঙ্ক যুদ্ধ ঘটলো এখানেই।
যুদ্ধ জয়ের পরে ধুতি পরা, ছোটোখাটো চেহারার শাস্ত্রী দখল করা পাক ট্যাঙ্কের ওপরে চড়ে ছবি তুললেন সানন্দে। দু’বছরের মাথায় আরও এক বার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের কঠিন পরীক্ষার সামনে দাঁড়াল কংগ্রেস। এ বার আর মোরারজি দেশাইকে বুঝিয়েসুঝিয়ে নিরস্ত করা গেল না। উল্টোদিকে কংগ্রেস সভাপতি কামরাজ ও তাঁর সঙ্গী নেতারা মোরারজিকে প্রধানমন্ত্রী পদে বসাতে নারাজ। তাঁরা তুরুপের তাস করলেন ইন্দিরা গান্ধীকে।
১৯৬৭। আবার একটা সাধারণ নির্বাচন। লোকসভা ও বিধানসভার ভোট হল একইসঙ্গে। গোটা রাজ্যে তখন সরাসরি সংঘর্ষের মুখোমুখি কংগ্রেস ও বামপন্থীরা। সেই সঙ্গে চলছে পুলিশি দমননীতি। বামপন্থীদের খুঁজে বার করে গ্রেপ্তার করছে পুলিশ। এরই মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্লচন্দ্র সেনের সঙ্গে মতবিরোধের জেরে দল ছাড়লেন অজয় মুখোপাধ্যায়। তৈরি করলেন বাংলা কংগ্রেস।
অজয় মুখোপাধ্যায়ের বাংলা কংগ্রেস হাত মেলাল সিপিএমের সঙ্গে। গঠিত হল যুক্তফ্রন্ট। ৪৩টি আসন পাওয়া সিপিএম এবং ৩৪টি আসন পাওয়া বাংলা কংগ্রেস অন্যান্য দল ও নির্দলদের সমর্থন নিয়ে টায়েটুয়ে সরকার গড়ে ফেলল। তৈরি হল বাংলার প্রথম অকংগ্রেসী সরকার। মুখ্যমন্ত্রী হলেন অজয় মুখোপাধ্যায়, উপমুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু।
২৫ মে, ১৯৬৭। ইন্দিরা প্রশাসনের গোড়াতেই আছড়ে পড়ল ঝড়। নকশালবাড়ি আন্দোলনে গুলি চালাল, বাংলার প্রথম অকংগ্রেসী সরকার। আগুন ছড়িয়ে পড়ছিল। শহরে-গ্রামে হিংসার খোলা হাট। নকশাল নিধনের নামে শুরু হল পুলিশি অত্যাচার, কংগ্রেসি গুন্ডা এবং পুলিশের হাতে খুন বহু নকশাল কর্মী। ৭০-এর দশকের গোড়ায় ১৯৭১ সালে ১২-১৩ অগস্ট এরকমই একটি রক্তমাখা দিনের সাক্ষী রইল কাশীপুর বরাহনগর। ৬৯-এর জুলাইয়ে ভাঙচুর হল বিধানসভায়। বাংলায় এই টালমাটাল অবস্থার মধ্যেই এসে গেল একাত্তরের সাধারণ নির্বাচন। বহু সিপিএম কর্মী ঘর ছাড়া। এই অবস্থায় কংগ্রেসও খুব সুস্থির অবস্থায় ছিল না। চিড় ধরেছিল তাদের অন্দরমহলেও।
কিন্তু এরপরেই আবার যুদ্ধে মুখোমুখি ভারত-পাকিস্তান। যদিও মেঘ ঘনাচ্ছিল ১৯৭০ থেকেই। আমেরিকার রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে তিনি পূর্ব পাকিস্তানের মুক্তিকামী মানুষের পাশে দাঁড়ালেন। পাক সেনাবাহিনীকে পর্যুদস্তু করলো ভারত। ১৯৭২-এ বিধানসভা ভোট হল পশ্চিমবঙ্গে। ভোট না বলে অবশ্য প্রহসন বলাই ভাল! বেলা দশটার মধ্যেই একের পর এক বুথ চলে গেল কংগ্রেসি গুন্ডাদের দখলে।
অথচ এমন একটা সময় রাজ্যে গায়ের জোরে কংগ্রেস ক্ষমতা দখল করেছিল, যখন বাংলাদেশ যুদ্ধ এবং ভূমি সংস্কারের প্রতিশ্রুতিকে হাতিয়ার করে ইন্দিরার জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। সিদ্ধার্থ শঙ্করের পরিকল্পনা কি কিছুই তিনি জানতেন না। নাকি তাঁর প্রচ্ছন্ন মদত ছিল?