নোনা জলে ডুবেছে জমি, ধান চাষে ভরসা সেই ‘গোসাবা প্রজাতি’

সৈকত দাস |

Jun 02, 2021 | 11:21 PM

লবণাক্ত জমিতে জারাভা, লুনা সম্পদ, লুনাশ্রী, দুধেশ্বর প্রজাতির ধান চাষ হত। এখনও অনেকে এই প্রজাতির ধান চাষ করেন। তবে গোসাবা প্রজাতির ধানের ফলন অনেক বেশি। প্রতি হেক্টরে পাঁচ টন মতো ধান উৎপাদন হয়।

নোনা জলে ডুবেছে জমি, ধান চাষে ভরসা সেই গোসাবা প্রজাতি
নিজস্ব চিত্র

Follow Us

পশ্চিমবঙ্গ: ২০২০ সালে মে মাসের পর ২০২১ সালের মে। ঘূর্ণিঝড় আমফানের পর ইয়াস। ফি বছর যেন নিয়ম করে ঘূর্ণিঝড়ের মুখে পড়তে হচ্ছে। যার ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে সমুদ্র উপকূলবর্তী জেলাগুলিকে। সমুদ্রের নোনা জল ঢুকে বিঘার পর বিঘা কৃষি জমি নষ্ট করে দিচ্ছে। অথচ সুন্দরবন এলাকার মূল জীবিকাই হল কৃষি। আর খেতের ফসল বলতে বোঝায় ধান। এবার ইয়াসের প্রভাবে বহু জমিতে নোনা জল ঢুকেছে। নষ্ট হয়েছে জমি। নোনা জল জমে থাকায় বর্ষার ধান চাষ নিয়ে চিন্তায় পড়েছে চাষীরা। এই রকম পরিস্থিতিতে কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়েছে রাজ্য সরকারের কৃষি দফতর। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলেছেন, ইয়াস বিধ্বস্ত যে চাষের জমিতে নোনা জল ঢুকেছে, সেখানকার চাষীরা যাতে চাষবাস করতে পারেন তা দেখতে হবে।

গত তিন চার বছর ধরে এই সমস্যাই দূর করার চেষ্টায় গবেষণা চলছে চুঁচুড়ার ধান্য গবেষণা কেন্দ্রে। সাধারণ প্রজাতির ধান নোনা জলে চাষ হবে না। তাই নোনা জলের জন্য উন্নত প্রজাতির ধান আবিষ্কার করেছেন কৃষি বিজ্ঞানীরা। যে প্রজাতির নাম দেওয়া হয়েছে সুন্দবনের বন্য়া বিধ্বস্ত একটি ব্লকের নামে- গোসাবা। গোসাবা-৫ গোসাবা-৬ হল এমনই দুটি প্রজাতির ধান। সুন্দরবনের গোসাবা উপগবেষণা কেন্দ্রে এর পরীক্ষামূলক চাষ হয়েছে।

চুঁচুড়া ধান্য গবেষণা কেন্দ্রের যুগ্ম কৃষি অধিকর্তা পার্থ রায় চৌধুরী বলেন, “প্রত্যেক বছর মে মাসে ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হই আমরা। সুন্দরবন এলাকায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়। যেখানে মূল চাষ হল ধান। সেই কারণে লবণাক্ত জমিতে চাষের গবেষণায় দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। অতি লবণাক্ত জমিতে ভালো ফলন দেয় এরকম ধান গবেষণা করে বের করা হয়েছে। যার নাম দেওয়া হয়েছিল চুঁচুড়া নোনা-১ চুঁচুড়া নোনা-২। পরবর্তী কালে গোসাবা উপকেন্দ্র থেকে এই ধান গোসাবা -৫ গোসাবা-৬ নামে পরিচিত হয়। যে প্রজাতির ধান সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে ছাড়পত্র পায়।”

এর আগে লবণাক্ত জমিতে জারাভা, লুনা সম্পদ, লুনাশ্রী, দুধেশ্বর প্রজাতির ধান চাষ হত। এখনও অনেকে এই প্রজাতির ধান চাষ করেন। তবে গোসাবা প্রজাতির ধানের ফলন অনেক বেশি। প্রতি হেক্টরে পাঁচ টন মতো ধান উৎপাদন হয়।

যদিও গোসাবা প্রজাতির ধান চাষের ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম মানতে হবে চাষীদের। পার্থ বাবুর কথায়, প্রথম কাজ হবে লবন জল জমি থেকে বের করা। দ্বিতীয়ত জৈব সার প্রয়োগ করা, মাটি পরীক্ষা করা এবং বেশি বয়সের চারা রোপন করা। সরকারী কৃষি খামারে গোসাবার বীজ তৈরী হচ্ছে।

আরও পড়ুন: টানা ১০ দিন ভেন্টিলেশনে, করোনাকে হারিয়ে দিল ১৮ দিনের শিশু!

তবে তার পরিমান যথেষ্ট নয়। কিছু প্রোগ্রেসিভ ফার্মারকে দিয়েও বীজ করানো হচ্ছে। চলতি বছরে না হলেও আগামী বোরো ধানের মরসুমে কৃষকদের মধ্যে এই প্রজাতির চারা বিলি করা যাবে বলে মনে করছে কৃষি দফতর।

Next Article