ব্যারাকপুর: সাম্প্রতিক জাতীয় রাজনীতির তোলপাড় করা খবর ‘সংসদ হানা’। এই শব্দবন্ধ রীতিমতো প্রশ্ন তুলে দিয়েছে দেশের অন্যতম সুরক্ষিত স্থানের নিরাপত্তা নিয়েই। সংসদে এহেন হামলার ঘটনায় উদ্বিগ্ন প্রশাসন। চলছে বিস্তর কাটাছেঁড়া। প্রশ্ন উঠেছে একাধিক। শুরু হয়ে গিয়েছে রাজনীতির রং চড়ানোও! কিন্তু এসবের পরও অত্যুৎসাহী মানুষের মনে প্রশ্ন উঠছে, সেদিন ঠিক কী ঘটেছিল সংসদের ভিতর? তার অন্যতম সাক্ষী ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিং। শুধু সাক্ষীই নন, তিনিই সেই ব্যক্তি, যিনি হানাদারদের একজনকে কুপোকাত করেছিলেন অনায়াসেই। যখন স্মোকড বোমায় ঢেকেছিল গোটা সংসদ ভবন, ইতঃস্তত ছোটাছুটি করছিলেন সাংসদরা, তখন আকস্মিকতার ঘোর কাটিয়ে ঠিক কী করেছিলেন ‘দাবাং’ সাংসদ? সেদিনের হাড়হিম ঘটনার বর্ণনা ব্যারাকপুরের বাড়িতে বসে দিলেন অর্জুন সিং।
অর্জুন বললেন, “আমি তো জীবনে ভয় করিনি। আমার কোনও ব্যক্তিকে নিয়ে ভয় নেই। কিছু লোক থাকে, যাঁরা প্রতিনিয়ত মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করি। আমি সঙ্গে সঙ্গে ওকে জাপটে ধরে পিছন থেকে মাটিতে ফেলে দিই।” রাজনীতির পাশাপাশি যে দাবাং সাংসদ প্রতিনিয়ত শরীরচর্চা, আত্মরক্ষার অনুশীলনও করেন, তাও সামনে এল এদিন।
অর্জুন বললেন, “আমিও তো আসলে প্রতিনিয়ত শরীরচর্চা করি, প্রশিক্ষণ নিই। আমাদের বলাই থাকে, যে কেউ তোমার ওপরে হামলা করুক না কেন, প্রথমে তাকে জাপটে ধরে মাটিতে ফেলে দিতে হবে। সেটাই করি। ওকে আগে আমি ধরেই সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে ফেলি। তখনই অর্ধেক কাজ হয়ে গিয়েছে।”
তবে সেদিনের ঘটনা যে অত্যন্ত ভয়াবহ, সেকথা বারবার বলছেন সাংসদ। এদিনও সেকথা বলতে গিয়ে আতঙ্ক ধরা পড়ল তাঁর চোখেমুখে। তাঁর কথায়, “যদি ওটা স্মোকড বোম না থেকে অন্য কিছু হত, তাহলে ১০-১২ জন সাংসদ এমনিতেই মারা যেতেন। ”
সেদিন নিজের নির্দিষ্ট আসনে বসেননি সাংসদ অর্জুন। সংসদে তাঁর সিট নম্বর ৩৪৯। ওই ব্লকের ওপরেই দর্শকদের আসন। কিন্তু সেদিন তিনি অন্য একটি আসনে বসেছিলেন। অর্জুন বলেন, “সেদিন হঠাৎ আমি গেট থেকে ঢুকে ৩৫৩ আসনে বসি। ওটা ব্যাকএন্ড। লোকসভা এবার ৯০০ টা সিট অ্যাডভান্স করে রেখেছেন। তখন খগেন মুর্মু জিরো আওয়ার্সে বলছিলেন। আমি শুনছিলাম মন দিয়ে। তারপর ধম্ করে আওয়াজ। ও হঠ্ করেই লাফ দিয়ে পড়ে যেখানে সাংসদরা বসেন, সেখানে লাফাতে শুরু করল। আমি ওকে ধরতে যাই, কিন্তু দেখলাম আমার আওতার বাইরে চলে গিয়েছে।”
অর্জুন জানান, রাজস্থানের একজন সাংসদ হনুমান বেনিওয়াল এক হানাদারকে জাপটে ধরেছিলেন। তখনই অর্জুন জানান, তাঁর ৩৫৩ সিটের পিছনেও আরেক হানাদার স্লোগান দিচ্ছিল ‘তানাশাহি নেহি চলেগা’। তখনই অর্জুনের ‘অ্যাকশন’ শুরু। তিনি বলেন, “ওকে ধরতে যেতেই স্মোকড বোমাটা ফাটিয়ে দিয়েছে… আমি তারপর ওকে ধরলাম। একটা ভয়ঙ্কর ঘটনা।”
তবে এসবের পরেও সাংসদ এককথায় স্বীকার করেছেন সংসদে ‘নিরাপত্তায় খামতি তো ছিলই’। সাংসদের কথায়, “যেখানে শ্বাসটাকেই আটকে নিয়ে ঢুকতে হয়, সেখানে জুতোর মধ্যে স্মোকড বোমা নিয়ে যাওয়াটা মুখের কথা নয়।” এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই নাম জড়িয়েছে বাংলার। মাস্টারমাইন্ডের সঙ্গে তাপস রায়ের ছবি সামনে আসায় শুরু রাজনৈতিক চর্চাও। তবুও সাংসদ এটাই বললেন, “রাজনীতি জড়িয়ে লাভ নেই। যে কারোর সঙ্গে কারোর ছবি থাকতে পারে। কিন্তু নিরাপত্তার খামতি ছিলই।”