বাঁকুড়া: কৃতীদের বাহবা তো সকলেই দেয়। নিঃসন্দেহে তা তাদের প্রাপ্য। কিন্তু পরীক্ষায় সাফল্য না এলেও তাতে মুষড়ে পড়ার কিছু নেই, সে বার্তাও দেওয়া দরকার। একটা পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়া কখনও গোটা জীবনের মাপকাঠি হতে পারে না। শনিবার এক অনুষ্ঠান থেকে সে বার্তাই দিলেন কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুভাষ সরকার। বাঁকুডায় মাধ্যমিকে অকৃতকার্য পড়ুয়াদের ডেকে উৎসাহ দেওয়ার পাশাপাশি তিনি তুলে দিলেন বই, পড়ার টেবিল-সহ শিক্ষার বিভিন্ন উপকরণ। কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীর কথায়, দেশে বিদেশে এমন বহু কৃতী আছেন, যাঁদের পুঁথিগত বিদ্যা হয়ত নজরকাড়া নয়। কিন্তু নিজেদের প্রতিভার জোরে তা ঢাকা পড়ে গিয়েছে অনায়াসে। কর্মই জীবনের পরিচিতি তৈরি করে, এ বার্তাই দিলেন তিনি। এদিন প্রত্যেক পড়ুয়ার সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে কথা বলেন তিনি।
জীবনের সফলতার ক্ষেত্রে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফলই একমাত্র মাপকাঠি নয় তা পড়ুয়াদের বোঝানোর চেষ্টা করেন মন্ত্রী সুভাষ সরকার। কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর এমন আয়োজন বেশ অন্যরকম বলেই দাবি সেইসব পড়ুয়াদের। ফল প্রকাশের পর থেকে একটা খারাপ লাগা কাজ করলেও, এদিন মনটা একটু হাল্কা হল। দিব্যেন্দু রুইদাস নামে এক ছাত্র এসেছিল অনুষ্ঠানে। তার কথায়, “পাশ করতে পারিনি। তারপরও এভাবে উৎসাহ দেওয়া, পড়াশোনার আগ্রহটা আরও বেড়ে গেল।”
অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন দিব্যেন্দুর মা কল্পনা রুইদাসও। তিনি বলেন, “আমার ছেলে বাংলায় কম নম্বর পেয়েছে। তারপরও মন্ত্রীর কাছ থেকে ডাক পাব ভাবতেই পারছি না। সফলদের কাছে তো সকলেই যান, কিন্তু পিছিয়ে পড়লেও যে এভাবে টেনে তোলা হয় ভাল লাগছে। খুব ভাল লাগছে। ছেলেটার রেজাল্ট বেরোনোর পর খুব খারাপ লাগছিল। এখানে এসে সেটা ভুলে গেলাম।”
কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুভাষ সরকার বলেন, “রাষ্ট্রীয় শিক্ষানীতি ২০২০-তে স্পষ্ট বলা হয়েছে, শিক্ষাকে সবার কাছে পৌঁছে দিতে হবে। যারা মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিকে ভাল ফলাফল করতে পারল না, তাদেরও সমান গুরুত্ব দিয়েই দেখতে হবে। সবথেকে পিছিয়ে পড়া ছাত্রটিকেও হাত ধরে টেনে তুলতে হবে। আগামিদিনে আমরা চাই ভারতবর্ষজুড়ে এটা একটা নজির তৈরি করুক। ক্লাসে যে ছেলেটি অকৃতকার্য হচ্ছে, তাকে শিক্ষকরাও বলুক আমার প্রিয় বাচ্চা, প্রিয় ছাত্র। সে কারণে আমরা আজকের অনুষ্ঠানের নামও দিয়েছি, আমার প্রিয় ছাত্র।”
যদিও রাজ্যের খাদ্য সরবরাহ দফতরের প্রতিমন্ত্রী জ্যোৎস্না মাণ্ডি এদিন বলেন, “ফুটেজ খাওয়ার জন্য এসব করছেন মন্ত্রী। আমাদের বাঁকুড়া জেলা সবসময়ই রাজ্যের মধ্যে এগিয়ে। প্রায় ৫৭ জন মেধাতালিকায় জায়গা পেয়েছে। তবে এটা বলতে পারি, যারা কৃতকার্য হয়নি, তাদের নিয়ে আমাদের আশা আগামিদিনে ভাল ফলই করবে।”