সিউড়ি: চুরি তো অনেক রকম হয়। টাকা চুরি, গয়না চুরি- এসব তো শুনেছেন। তবে এ হল আক্ষরিক অর্থেই হৃদয় চুরি। আর সেই চুরি করতে গিয়েই ধরা পড়ে গেলেন যুবক। চুরির কাণ্ড দেখে পুলিশও অবাক। কারণটা জেনে তো চোখ কপালে পুলিশ থেকে রাজনৈতিক নেতাদের। শাস্তি দেওয়া তো দূরের কথা, ‘চোর’কে একগোছা গোলাপ কিনে দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দিল পুলিশ।
সারা বাংলা জুড়ে রাস্তায় ‘লাভ’ চিহ্ন দেওয়া হোর্ডিং চোখে পড়ে। জায়গার নাম দিয়ে লেখা সেই হোর্ডিং-এর সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে পছন্দ করেন অনেকেই। ‘আই লাভ দিঘা’, ‘আই লাভ ডায়মন্ড হারবার’- এমন সব হোর্ডিং চোখে পড়ে আকছার। আর ২৫ ডিসেম্বরের রাতে বীরভূমের সিউড়িতে দেখা গেল, সেরকমই একটি হোর্ডিং থেকে ‘লাভ’ চিহ্নটি উধাও। খোঁজ করে দেখা যায়, ভেঙে পড়ে রয়েছে রাস্তার ধারে।
কে করল এমন কাজ? ধরতে গিয়ে চোখ চড়কগাছ পুলিশের। এমন চোর ধরার অভিজ্ঞতা পুলিশের কমই আছে। বীরভূমের মহম্মদবাজার থেকে বাপন বাদ্যকর নামে এক যুবককে আটক করে পুলিশ। থানায় গিয়ে কোনও টালবাহানা না করেই বাপন জানিয়ে দেন, তিনিই চুরি করেছেন ওই চিহ্ন। কিন্তু কেন করলেন এই কাজ?
বাপনের অকপট স্বীকারোক্তি, স্ত্রীকে উপহার দেবেন বলে ওই হার্ট খুলে নিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সেটা মাঝপথে ভেঙে যায়। ফলে আর উপহার দেওয়া হয়নি বড়দিনের রাতে।
মহম্মদবাজারে থেকে ওই যুবককে আটক করে পুলিশ। জেরায় ওই যুবক স্বীকার করে নেন যে ২৫ ডিসেম্বর অর্থাৎ বড়দিনে স্ত্রীকে ওই লাল রঙের ‘হার্ট’ উপহার দিতে চেয়েছিলেন তিনি। ২৪ ডিসেম্বর রাতেই তিনি ওই ‘লাভ’ চুরি করে নেন। সিউড়ি শহরে সার্কিট হাউস লাগোয়া এলাকায় ছিল ওই ‘আমার ভালোবাসা সিউড়ি’ লেখা এলইডি বোর্ড।
এসব শুনে মন গলে গেল পুলিশেরও। তাঁরা যুবকের হাতে তুলে দিলেন একগুচ্ছ গোলাপ। থানার বাইরে বেরিয়ে স্ত্রীকে সেই গোলাপ দিয়ে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলেন বাপন বাদ্যকর। প্রতিজ্ঞা করলেন আর কোনওদিনও, কোনও কারণেই চুরি করবে না। কাগজে-কলমে সই করিয়ে ছেড়ে দেওয়া হল যুবককে। তাঁকে প্রশ্ন করা হলে বাপন বলেন, ‘ওর জন্য চুরি করেছিলাম। ও আমার জান।’ সিউড়ি পুরসভার চেয়ারম্যান বলেন, রাজনৈতিক জীবনে এমন ছবি তিনি কোনওদিন দেখেননি।