পশ্চিমবঙ্গ: করোনা মহামারীর বিধিনিষেধ অনেকাটাই শিথিল হওয়ায় বৃহস্পতিবার থেকে রাজ্য সরকারের নির্দেশমতো বাসের পরিষেবা চালু হওয়ার কথা। সেইমতো রাজ্য়ে সরকারি বাস (Bus) চালু হলেও দেখা মেলেনি বেসরকারি বাসের। জেলায় জেলায় ভোগান্তির শিকার হয়েছেন নিত্যযাত্রীরা। কোথাও ভাড়া বাড়িয়ে চলছে যাতায়াত, কোথাও বা চালুই হল না বাস। বৃহস্পতিবার রাজ্য জুড়েই দেখা গেল এই অনিশ্চয়তার ছবি।
কলকাতা:
গণপরিবহন আংশিক চালু হওয়ার প্রথম দিনেই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার সাক্ষী থাকল শহর। বেপরোয়া মিনিবাসের ধাক্কায় মৃত্যু হল এক বাইক আরোহীর। আহত বাসের একাধিক যাত্রী। অন্তত ১৩ জনকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এসএসকেএমে। তাঁদের মধ্যে ৮জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। মেটিয়াবুরুজ থেকে হাওড়ার দিকে যাচ্ছিল বাসটি। ফোর্ট উইলিয়ামের সামনে ঘটে দুর্ঘটনা। সাউথ গেটের পাঁচিল ভেঙে ঢুকে যায় বাস। বাসের (Bus) সামনে ছিলেন এক বাইক আরোহী। ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি প্রত্যক্ষদর্শীদের। ঘটনাস্থলে পরিদর্শনে যান ডিসি সাউথ ও কলকাতার পুলিশ কমিশনার সৌমেন মিত্র।
শিলিগুড়ি:
বৃহস্পতিবার সকালে কোভিড বিধি শিকেয় তুলে বাস ধরার লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে জনগণ। রাস্তায় সরকারি বাসের দেখা পাওয়া গেলেও কোনও বেসরকারি বাস এদিন পথে নামেনি। বেসরকারি বাস সংগঠনগুলির দাবি, যাত্রী কম থাকায় ভাড়া পোষাবে না। ফলে,উত্তরবঙ্গের অনেকাংশেই দেখা গিয়েছে যাতায়াতে অপ্রতুলতা।
বীরভূম:
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ দেওয়ার পর বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সরকারি বাস চলাচল শুরু হলেও সিউড়িতে বন্ধ থাকল বেসরকারি বাস চলাচল। বেসরকারি বাস মালিকদের বক্তব্য, পেট্রোপণ্য়ের অত্যাধিক মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে, পাশাপাশি ৫০ শতাংশ যাত্রী নিয়ে যাতায়াত করতে হবে বাস গুলিকে। কিন্তু, অপরিবর্তিত ভাড়ায় বাস চালালে কোনও লাভ থাকবে না। ফলে বাস চালানো সম্ভব হচ্ছে না।
ঝাড়গ্রাম:
জেলার অনেক জায়গাতেই এখনও মাইক্রোকনটেইনমেন্ট জো়ন। ফলে যাত্রীর দেখা বিশেষ নেই। এই পরিস্থিতিতে সরকারি বাস চললেও বেসরকারি বাস (Bus) চালানো অসুবিধার বলেই দাবি বেসরকারি বাস মালিকদের। তাঁদের দাবি, এই পরিস্থিতিতে বাস চালালে তেলের দামও উঠবে না।
পশ্চিম মেদিনীপুর:
ঘাটাল মহকুমার ব্যস্ততম রাস্তা ঘাটাল পাঁশকুড়া ও ঘাটাল রোড রাজ্য সড়ক। এদিন সকালে সেখানে দেখা মিলল না যাত্রীবাহী বাসের। ইন্টার অ্যান্ড ইন্টারিজন বাস অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য কমিটির সদস্য প্রভাত পানের দাবি সরকার ৫০ শতাংশ যাত্রী নিয়ে যাত্রীবাহী বাস চালানোর অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু বর্তমানে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির ফলে কম সংখ্যক যাত্রী নিয়ে গাড়ি চালানো সম্ভব নয়। ঘাটাল কেন্দ্রীয় বাস স্ট্যান্ড থেকে ২০০ টি ও বেশি বাস প্রতিনিয়ত চলে। সেখানে ১২ টি বাস মোটে রাস্তায় নামে এদিন।
উত্তর ২৪ পরগনা:
বর্ধিত ভাড়া দিয়েই যাতায়াতে রাজি যাত্রীরা। সাধ্যেক মধ্যে হলে বেশি ভাড়া দিয়েই যাতায়াত করবেন নিত্যযাত্রীরা। বৃহস্পতিবার সকালে উত্তর ২৪ পরগনায় দেখা গেল এমনই ছবি। যাত্রীদের দাবি, কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য অন্যতম পরিবহন বাস। সেক্ষেত্রে নিজেদের তাগিদেই বেশি ভাড়া দিয়ে যেতে হবে। একইসঙ্গে বাসমালিকদের কাছে তাঁরা আবেদন করেছেন, লকডাউনে সকলেরই রোজগার কমেছে। সেক্ষেত্রে, বর্ধিত ভাড়া যেন সাধ্যাতীত না হয়।
দক্ষিণ২৪ পরগনা:
ভোর পাঁচটা থেকে বাসের জন্য অপেক্ষা। লাইনে দাঁড়িয়েও দেখা মিলল না বাসের। বারুইপুরের ফুলতলা সরকারি বাস টার্মিনাসে উঠে এল এমনই এক ছবি। যাত্রীদের অভিযোগ, ভোর থেকে এসে লাইনে দাঁড়িয়েও বাস মেলেনি। বাস টার্মিনালের স্টাফ রুম ও স্টাটার রুমে লাগানো তালা। কেন সরকারি নির্দেশ সত্ত্বেও বাস নেই তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। অন্যদিকে, বারুইপুর ২১৮ বাসস্ট্যান্ড থেকে চালু হয়েছে বেসরকারি বাস। যদিও, যাত্রী না থাকায় মাঝরাস্তা থেকেই ফিরে এসেছে বাসগুলি। বাসকর্মচারীরা জানিয়েছেন, পরবর্তীকালে বাসভাড়া না বাড়ালে পরিবহন বন্ধ করে দেওয়া হবে।
হুগলি:
বাস (Bus) চললেও ভাড়া বাড়ানোর দাবি বাসমালিকদের। একদিকে অগ্নিমূল্য পেট্রোপণ্য়, অন্যদিকে, বাসে যাত্রী সংখ্য়া তলানিতে এসে ঠেকেছে। এই পরিস্থিতিতে ভাড়া না বাড়ালে বাস চালাবো সমস্যা হবে বলে জানিয়েছেন বাস মালিকরা। বৃহস্পতিবার, ৮ ১৭,১৮,২৩ নং রুটের বাস বন্ধ রয়েছে চূচূঁড়াতে। হুগলি বাস শ্রমিক সংগ্রামী মঞ্চের কর্মীদের দাবি, করোনাকালে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত বাস শ্রমিকদের প্রতিমাসে সাত হাজার টাকা করে ভাতা ও মুদিখানা সামগ্রী চালু করতে হবে।
উল্লেখ্য, অল বেঙ্গল বাস মিনিবাস সমন্বয় সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাহুল চট্টোপাধ্যায় বুধবার জানিয়েছিলেন, ক্রমবর্ধমান খরচের জেরে কাউকে জোর করে রাস্তায় বাস নামানোর কথা বলা যাবে না। পুরনো ভাড়ায় কম যাত্রী নিয়ে চলাচল করলে আরও বেশি ক্ষতি হবে। দক্ষিণবঙ্গ পরিবহণ নিগম সূ্ত্রে খবর, দূরপাল্লার সব রুটে প্রায় ৬০০ বাস চালানো হবে। সকাল থেকেই এসপ্ল্যানেড থেকে জেলার একাধিক বাস পাওয়া যাবে। উত্তরবঙ্গ পরিবহন নিগমও রাজ্যের সব রুটে প্রায় ৫৫০ টি বাস চালাবে। করোনা পরিস্থিতি ও পেট্রোপণ্যের মাত্রাতিরিক্ত দাম আদতে পরিবহনে আয়ের পথ দুর্গম করতে পারে বলেই দাবি পরিবহন শিবিরের।
আরও পড়ুন: Han Zeune: চিনা গুপ্তচর হানকে নিজেদের হেফাজতে নিল লখনউ এটিএস, তোলা হবে সিজিএম আদালতে