বালুরঘাট: কেউ বলছেন, ‘আমাদের প্রাপ্ত নম্বর দেওয়া হয়নি। উল্টে রেজাল্টে লেখা আনসাকসেস ফুল।’ কেউ আবার বলছেন, ‘আমরা এতদিন যে পড়াশোনা করেছিলাম তা কি বৃথা গেল?’ কারোর-কারোর মত, ‘এই রেজাল্ট আমরা মেনে নিতে পারি না।’ ঠিক এমনটাই অবস্থা এখন দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাটে। শুধু দক্ষিণ দিনাজপুর নয়, জেলায়-জেলায় উচ্চ-মাধ্যমিকে অকৃতকার্য পড়ুয়ারা এখন নেমেছেন পথে। তাঁদের একটাই দাবি, ‘পাশ করাতে হবে’।
মঙ্গলবার সকাল থেকেই দক্ষিণ দিনাজপুরে ডিএম অফিসের সামনে ভিড় লক্ষ করা যায় পড়ুয়াদের। তাঁদের দাবি, যোগ্যতা থাকার পরেও তাঁদের যথাযথ নম্বর আসেনি। অন্য বিষয়ে, ভালো নম্বর এলেও ইংরেজিতে বেশিরভাগ ছেলে-মেয়ে ফেল করেছে। এক-দু’জন নয় একাধিক স্কুলে বহু ছাত্র-ছাত্রী ফেল করেছে। যেটা কখনোই সম্ভব নয়। সেই জায়গা থেকে তাঁদের দাবি অবিলম্বে তাঁদের পাস করাতে হবে। কারণ রিভিউ করলে পরেও তাঁর ফলাফল প্রায় তিন মাস পর আসে। সেই সময় তাদের রেজাল্ট ভাল হলে পরেও সেই রেজাল্ট তাঁদের কোনও কাজ লাগবে না। কারণ কলেজে ভর্তি হতে পারবেন না তাঁরা। সেই জায়গা থেকেই স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীরা বিক্ষোভ দেখালেন বালুরঘাটে। এমনকী, এ নিয়ে জেলা শাসকের কাছে লিখিতভাবে ও বিষয়টি জানিয়েছেন। পুরো বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে আনবেন বলে জানিয়েছেন জেলা শাসক বিজিন কৃষ্ণা।
ছাত্র ছাত্রীদের দাবি, তাঁদের ইচ্ছাকৃতভাবে ফেল করানো হয়েছে। কারণ একটা স্কুলের অর্ধেক ছেলে-মেয়ে কখনো ফেল করতে পারে না। শুধু একটা স্কুল নয় পতিরামের তিনটি স্কুল, বালুরঘাট শহরেরও বেশ কয়েকটি স্কুল রয়েছে। যেখানে সব মিলিয়ে কয়েকশো অকৃতকার্য উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী রয়েছেন। পাস করার দাবিতে গতকাল পতিরাম ও গঙ্গারামপুরে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন বেশকিছু অকৃতকার্য উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা। তারপর আজ পাশ করানোর দাবিতে বালুরঘাটে জেলা প্রশাসন ভবন চত্বরে বিক্ষোভ দেখান তাঁরা।
এক পরীক্ষার্থী জানালেন, ‘কোভিডের কারণে সারা বছর অনলাইনে ক্লাস হয়। তখন বেশিরভাগ ক্লাসেই উপস্থিত থাকা তাঁদের সম্ভব হয়নি।’ এর পাশাপাশি তিনি বলেন, ‘ এই আনসাকসেস ফুলের মানেটা কী? তাহলে আমরা এতদিন যে পড়াশোনা করেছিলাম তা কি বৃথা গেল? স্যাররা কী বলতে চাইছেন ? আমরা কি পড়াশোনা করিনি? প্রথমত, স্যাররা বলেছিলেন টেস্টের নম্বর ফাইনাল হবে। সেই মতো আমরা ভালমতো পড়াশোনা করেছিলাম। সেই সময় টেস্টের নম্বর বলা হয়নি। কারণ এই নম্বর ফাইনালে যাবে। তারপর পরীক্ষার একমাস আগে জানতে পারলাম ফাইনাল পরীক্ষা হবে। এত পড়াশোনার পর কীভাবে আনসাকসেসফুল আসে? আমরা তা কীভাবে মেনে নেব? খাতা রিভিউ হবে ঠিক আছে। কিন্তু তিনমাস পর রিভিউর রেজাল্টে আমরা পাশও করব। তবে সেই রেজাল্ট তো আমাদের কাজে লাগবে না। বুঝতেই পারছি না কিসে ফেল করলাম।’
আরও এক পড়ুয়া বলেন, ‘অর্ধেকের বেশি পড়ুয়াদের আনসাকসেসফুল। এত পড়াশোনা করেও কীভাবে আনসাকসেসফুল আসে? এটা আমরা মেনে নিতে পারি না। তাই ডিএম-এর সঙ্গে দেখা করতে এসেছি। কারণ মার্কশিট হাতে না পেলে আমরা বুঝতে পারছি না কিসে ফেল করেছি।’