দক্ষিণ ২৪ পরগনা: ঘূর্ণিঝড় ইয়াস (Yaas) আর পূর্ণিমার ভরা কোটালের জলে বিদ্যা নদীর বাঁধ ভেঙে প্লাবিত সুন্দরবনের গোসাবা ব্লকের রাঙাবেলিয়া উত্তরপাড়া গ্রাম। উত্তরপাড়ার সব বাড়ি এখনও এক হাঁটুজলে বন্দি। তাই গ্রামের সমস্ত মানুষকে রাখা হয়েছে রাঙাবেলিয়া প্রাইমারি ও হাইস্কুলে খোলা ত্রাণ শিবিরে। শুধু ঠাঁই মেলেনি করোনা আক্রান্ত একটি পরিবারের চার শিশু সন্তান সহ ১৩ জন সদস্যের। করোনার ফলে এক ঘরে হয়ে যাওয়া এই একটি পরিবার তাই হাঁটু সমান নিয়ে ঘরবন্দি হয়ে রয়েছেন। এভাবেই তাঁদের থাকতে হচ্ছে দিনের পর দিন।
সুন্দরবনের প্রত্যন্ত ব্লক গোসাবা। আর এই এলাকার রাঙাবেলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের রাঙাবেলিয়া উত্তরপাড়ায় বৃদ্ধা স্ত্রী ইছামতী, তিন ছেলে ও বৌমা এবং চার নাতি-নাতনি নিয়ে দুর্ভোগের মধ্যেই দিন কাটাচ্ছেন রাসবিহারী মণ্ডল।
সামান্য সর্দি-জ্বর হয়েছিল তাঁর বড় ছেলে বিশ্বজিতের। পরীক্ষা করাতে যান গোসাবা ব্লক গ্রামীণ হাসপাতালে।সেখানেই তার করোনা পরীক্ষা হলে রিপোর্ট আসে পজিটিভ। পরিবার সূত্রে খবর, বিশ্বজিৎবাবুর শিশুকন্যারও কারোনা পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে। যদিও সে উপসর্গবিহীন। একই বাড়িতে একান্ত রয়েছেন বিশ্বজিত বাবুরা। এর মধ্যে গত বুধবার সুন্দরবনে পূর্ণিমার কোটালের সঙ্গে ইয়াস ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বিদ্যা নদীর জলস্তর ফুলে-ফেঁপে উঠে ভাসিয়ে দিয়েছে উত্তরপাড়া সহ আশেপাশের সমস্ত গ্রামকে। স্বাভাবিকভাবেই রাঙাবেলিয়া উত্তরপাড়া এলাকা বানভাসির চেহারা নিয়েছে।
প্রতিটি বাড়ির মধ্যে ঢুকে পড়েছে নদীর জল। স্থানীয় মানুষকে তড়িঘড়ি প্রশাসনের তরফে আগেভাগে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে স্থানীয় প্রাইমারি ও হাইস্কুলের বাড়িতে। শুধু কোথাও জায়গা হয়নি এই একটি পরিবারের। যেহেতু মণ্ডল বাড়ির বড় ছেলে বিশ্বজিতের করোনা হয়েছে। তাই ওই পরিবারের ১৩ জন সদস্যদের নিয়ে যেন কারও মাথা ব্যথ্যা নেই। সেই বুধবার থেকেই জলের মধ্যে রয়েছে এই পরিবার। দিনে ও রাতে দু’বার নদীর জল রীতিমতো জোয়ার-ভাটা খেলছে মণ্ডল বাড়ির মধ্যে!
ঘরের মধ্যে ঢুকে যাচ্ছে সাপ ও বিষাক্ত পোকামাকড়। তাদের হাত থেকে নিস্তার পেতে এই পরিবার সদস্যরা খাটের উপরে বাস করছেন। বাচ্চাদের কাপড় দিয়ে দোলনা বানিয়ে রাখতে হচ্ছে ঝুলিয়ে। এলাকা এখনও বিদ্যুৎহীন। অগত্যা হ্যারিকেন জ্বেলে রাতে একজন করে জেগে পাহারা দিচ্ছেন যাতে সাপ ঢুকে না পড়ে বাড়িতে। মিলছেনা ঠিকমত খাবারও। গোটা এলাকা জলমগ্ন। তাই বাজারও বসছে না। এদিকে করোনা সংক্রমিত হওয়ার কারণে এক ঘরে বন্দি গোটা পরিবার। স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত কিংবা প্রশাসনের তরফে কোনও সাহায্য মেলেনি অভিযোগ।
ওই পরিবারের সদস্য মনোজিতের আবেদব, পরিবারকে নিয়ে থাকার জন্য বাড়ির কাছে একটি উঁচু জায়গায় অবস্থিত অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে আপাতত তাঁদের থাকার একটু জায়গা দেওয়া হোক। কিন্তু সেখানেও থাকার অনুমতি মেলেনি। তাই গোটা পরিবারকে নিয়ে কার্যত জলে পড়েছেন মনজিৎ।
যদিও গোসাবার বিডিও সৌরভ মিত্র শুক্রবার রাতে এই ঘটনা টিভি নাইন বাংলার প্রতিনিধির কাছ থেকে জানতে পেরে গোটা পরিবারকে অঙ্গনওয়াড়ি থাকার বন্দোবস্ত করে দিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।