ব্যান্ডেল: খেলতে খেলতেই হাত লেগে যায় ছোট্ট একটা পাথরে। প্রথমটায় বুঝতে না পারলেও, হাতে ধরে তারা দেখে সেটি আসলে একটি মূর্তি। একটু অবাক হয় দুই ছাত্রী। সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষিকাদের দেখাতে ছোটে তারা। খবর যায় পুরাতত্ত্ব বিভাগে। ঐতিহাসিক গুরুত্ব বুঝতে পুরাতত্ত্ববিদরাও হাজির হন স্কুলে। হুগলির ব্যান্ডেলের বিক্রমনগর হরনাথ নীরদা সুন্দরী ঘোষ উচ্চ বিদ্যালয়ের ঘটনা।
গত ১৭ জানুয়ারি স্কুলের ভিতর সাইকেল স্ট্যান্ড বানানোর জন্য মাটি খোঁড়া হয়। সেই মাটি স্কুলের মাঠের কোনে জড় করা ছিল। ক্লাস নাইনের দুই ছাত্রী জ্যোতি মণ্ডল ও মোহিনী সরকার খেলার সময় ওই মূর্তিটি দেখতে পায়।
স্কুলের ভূগোলের শিক্ষিকা সঙ্ঘমিত্রা পালিত ও ইংরেজি শিক্ষিকা বরুণা চট্টোপাধ্যায়ের কাছে মূর্তিটি নিয়ে যায়। শিক্ষিকারা বুঝতে পারেন এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব অপরিসীম। স্কুলের প্রধান শিক্ষক সৈকত দাস বলেন, “এটি একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন। আমাদের স্কুল থেকে উদ্ধার হয়েছে।”
স্কুলের ইতিহাসের শিক্ষক বিশ্বরূপ দে পুরাতত্ত্ব নিয়ে চর্চা করেন। তিনি গুগল ঘেঁটে যা তথ্য পান, তাতে দেখা যায় এই মূর্তি গুপ্ত যুগের হতে পারে। তাঁর কথা মতো পুরাতত্ত্ব বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। মূর্তির ছবিও পাঠানো হয়। পুরাতত্ত্ব বিভাগও জানিয়েছে, ওই মূর্তির ঐতিহাসিক মূল্য অনেক। খুব গোপনীয়তার সঙ্গে একে রক্ষা করতে হবে বলেও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
স্কুল কর্তৃপক্ষ মূর্তিটি স্কুলে রাখার ঝুঁকি নিতে পারেনি। এর আগে দুবার চুরি হয়েছে এই স্কুলে। তাই মূর্তিটি আপাতত সেফ ভল্টে রাখা হয়েছে।
পুরাতত্ত্ব বিভাগের কলকাতা দফতর থেকে অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপারিনটেনডেন্ট আর্কিওলজিস্ট (কলকাতা সার্কেল) ডঃ সঞ্জয় পন্ডা ও টেকনিসিয়ান প্রদীপ কর হরনাথ স্কুলে যান। তাঁরা মূর্তিটি খুঁটিয়ে পরীক্ষা করেন। যে জায়গা থেকে মূর্তি উদ্ধার হয়েছে সেই জায়গা ঘুরে দেখেন তাঁরা।
আর্কিওলজিস্ট জানিয়েছেন, এটি প্রায় এক হাজার বছর আগের মূর্তি হতে পারে। দাঁড়িয়ে থাকা একটি বিষ্ণুর মূর্তি এটি। চুঁচুড়া এলাকায় গঙ্গার গতিপথ এই এলাকার খুব কাছ দিয়ে ছিল বলে জানা যায়। তাঁরা আরও জানান, এরকম অনেক মূর্তি দুই ২৪ পরগনায় বিভিন্ন সময় পাওয়া গিয়েছে। সেগুলির সঙ্গে এই মূর্তি মিলিয়ে দেখা হবে, গবেষণা করা হবে। তারপর মূর্তির সময়কাল জানা যাবে। বেলে পাথরের বিষ্ণু মূর্তি বহুমূল্যের বলে জানিয়েছেন আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার আধিকারিক। স্কুলের ভিতর থেকে এই ধরনের একটি ঐতিহাসিক নির্দশন উদ্ধারে উচ্ছসিত পড়ুয়া থেকে শিক্ষক শিক্ষিকারা।