‘খুনী’ বিভাসকে দলে ফেরাল কে? প্রকাশ্যে তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দল
২০১৯-এ ১৫ জুন খানাকুলের হরিশচকে তৃণমূল নেতা ও খানাকুল ২ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য মনোরঞ্জন পাত্র খুন হন। সেই খুনের নেপথ্য মূল অভিযুক্ত ছিলেন তৎকালীন বিজেপি নেতা বিভাস মালিক।
হুগলি: বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই দলবদলের হিড়িক বেড়েছে। যোগদানপর্বে পাল্লা ভারি হয়েছে তৃণমূলের। মঙ্গলবার, খানাকুলে বিজেপি নেতা বিভাস মালিক-সহ একঝাঁক পদ্মকর্মী যোগ দেন তৃণমূলে। এই বিজেপি নেতা বিভাস মালিকের যোগদানকে কেন্দ্র করে প্রকাশ্যে এল তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দল। এদিন , তৃণমূল সাংসদ অপরূপা পোদ্দারের হাত ধরে ঘাসফুলে যোগ দেন বিভাস। আর এতেই ক্ষুব্ধ জেলা নেতৃত্ব। ২০১৯-এ ১৫ জুন খানাকুলের হরিশচকে তৃণমূল নেতা ও খানাকুল ২ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য মনোরঞ্জন পাত্র খুন হন। সেই খুনের নেপথ্য মূল অভিযুক্ত ছিলেন তৎকালীন বিজেপি নেতা বিভাস মালিক। এখন তাঁকেই দলে নেওয়ায় শাসক শিবিরে শুরু অন্তর্দ্বন্দ্ব।
সাংসদ অপরূপা পোদ্দার যদিও অস্বীকার করেছেন এই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথা। তাঁর কথায়, “বিভাস মালিক আগে আমাদের দল করত। ওঁ পুরনো তৃণমূল কর্মী। কিছু ভুল বোঝাবুঝির জন্য বিভাস বিজেপিতে গিয়েছিল। এখন ভুল বুঝতে পেরে আমাদের দলে ফিরে এসেছে।” কিন্তু, তৃণমূল নেতা খুনের অভিযোগে দুষ্ট বিভাস কীভাবে মনোনয়ন পত্র পেলেন সেই প্রশ্ন সম্পূর্ণ এড়িয়ে যান সাংসদ।
অন্যদিকে খানাকুলের দাপুটে তৃণমূল নেতা তথা চিংড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান কার্তিক ঈশর বলেন, “বিভাস মালিক আমাদের দলের একনিষ্ঠ কর্মী মনোরঞ্জন পাত্রকে খুন করে। তাকে কীভাবে দলে নেওয়া হল? কে সেই অনুমোদন দিল? সাংসদ যদি এই অনুমোদন দিয়ে থাকেন তবে সেই ঘটনার তীব্র নিন্দা করছি। দলের বুথস্তরীয় কর্মীরা এটা মেনে নেবে না। আমরা এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ করছি। একইসঙ্গে, বিভাস মালিকের গ্রেফতারির দাবিও জানাচ্ছি। প্রয়োজনে আমরা রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলব।”
মনোরঞ্জন পাত্রের ছেলে সুমন পাত্র বলেন, “বাবাকে খুনের ঘটনায় নয় জনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছিলাম। খুনে অভিযুক্ত ছিল বিভাস মালিক। আজ তাঁকে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান করানো হয়েছে বলে শুনলাম। আমার খুব খারাপ লাগছে। আমরা কি কোন বিচার পাব না ?” অন্যদিকে, হুগলি জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি দিলীপ যাদব এ প্রসঙ্গে বলেন, “তৃণমূলে আসতে হলে সাংগঠনিক পরিকাঠামোর মধ্যে দিয়ে আসতে হবে। আগে ব্লক,তার পরে জেলা ও শেষে রাজ্য কমিটির অনুমোদন চাই। সেক্ষেত্রে কেউ যদি নিজে যোগদান করেন বা করতে ইচ্ছুক হন এবং সাংসদের অনুমোদন থাকে তাহলে ধরে নেব আমি খবর পাইনি। এমন নয়, যে সব খবর আমি আগে পাব। হয়ত কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দল নিশ্চই তা খতিয়ে দেখবে।”
শাসক শিবিরের এই অন্তর্দ্বন্দ্ব নজর এড়ায়নি পদ্ম শিবিরের। আরামবাগ সাংগঠনিক জেলার বিজেপি সভাপতি বিমান ঘোষ বলেন, “বিভাস মালিক তৃণমূল থেকে বিজেপিতে এসেছিলেন। তৃণমূল নেতাকে খুন করার নেপথ্যে মূল অভিযুক্ত ছিলেন বিভাস। নিজের দলের কর্মীকেই খুন করার পর সেই খুনী কর্মীকে যদি তৃণমূল ফিরিয়ে নেয় তবে তো কিছু বলার নেই। বিভাস এই দলে এসেছিলেন, নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করতে। সেই স্বার্থ চরিতার্থ হয়নি তাই পুরনো দলে ফিরে গিয়েছে।”
উল্লেখ্য, ২০১৯-এ খুন হন তৃণমূল নেতা মনোরঞ্জন পাত্র। সেই খুনের ঘটনায় বিভাস মালিক-সহ তিন বিজেপি নেতাকে মূল অভিযুক্ত বলে সাব্যস্ত করে পুলিশ। যদিও, তখন বিভাস মালিক অভিযোগ অস্বীকার করে জানিয়েছিলেন, তাঁকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: ‘বড় পাপ হে!’ ‘প্রায়শ্চিত্ত’ করতে ন্যাড়া হয়ে তৃণমূলে যোগদান একঝাঁক পদ্ম কর্মীর