হাওড়া: পরিবারের সঙ্গে পিকনিকে গিয়েছিল ৬ বছরের ছোট্ট ঋষভ। গিয়েছিলেন ৬০ বছরের অচ্যুত সাহাও। গত বৃহস্পতিবারের ঘটনা। রবিবার দেহ ফিরল বাড়িতে। রূপনারায়ণে সলিল সমাধি হয় দু’জনেরই। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পিকনিক করে ফেরার পথে রূপনারায়ণে নৌকাডুবির ঘটনায় প্রায় ৬০ ঘণ্টা পর রবিবার সকালে দেহ দু’টি উদ্ধার হয়।
দুপুর ৩টে নাগাদ কোনা হাইরোডের বিবেকানন্দ পল্লিতে ছোট্ট ঋষভের দেহ বাড়িতে পৌঁছয়। একতলার টালির চালের বাড়ির দরজার সামনে যখন দেহ পৌঁছল, কান্নায় ভেঙে পড়েন মা, বাবা। শুধু তাঁর পরিবারের সদস্যরাই নয়, গোটা গ্রাম কাঁদছে। খুব কম সময় দেহ রাখা হয় বাড়িতে। এরপর সেখান থেকে শেষকৃত্যের জন্য চামরাইলে নিয়ে যাওয়া হয়।
বিশ্বজিৎ পাল ও বর্ষা পালের একমাত্র সন্তান ঋষভ। বুক খালি করে এভাবে সন্তানকে ছেড়ে দিতে হবে ভাবতেই পারেননি। ছোট্ট নিথর মুখটা দেখে বারবার চিৎকার করে বলছিলেন, “আমাদের একমাত্র সন্তানকে তোমরা কেউ ফিরিয়ে দাও।”
ভয়ঙ্কর সেই বিকালের কথা স্পষ্ট মনে আছে বর্ষার। বলেন, বাবার হাতেই ছিল ঋষভ। নৌকাডুবি হচ্ছে বুঝে ছেলেকে প্রাণপণে আগলে রাখার চেষ্টা করেন মা। দু’হাতে জাপটে ধরেন। কিন্তু জলের তোড়ে চিরকালের নাড়ির বন্ধনও ছিন্ন হয়ে যায় মুহূর্তে। মায়ের হাত ছাড়িয়েই মৃত্যু ছিনিয়ে নিয়ে যায় ঋষভকে। শরীরে যেন বর্ষার আর সাড় নেই!
ওদিকে বিকেল পৌনে ৪টে নাগাদ বেলগাছিয়ার লিচুবাগানের বাড়িতে পৌঁছয় অচ্যুত সাহার মৃতদেহ। তাঁর স্ত্রী সঙ্গীতাদেবীও শোকে পাথর। স্বামীর দেহ দেখে দিশাহারা। বলেন, চলতে চলতে হঠাৎই নৌকা যেন নীচের দিকে নেমে গেল। সঙ্গীতাদেবী বলেন, “আমরা ডুবে গেলাম। আমি কোনওক্রমে উঠতে পারলেও দেখলাম ও তলিয়ে গেল। আমার চোখের সামনে সবটা হল।”
প্রসঙ্গত, এই ঘটনায় আগেই বেলগাছিয়ার আরেক বাসিন্দা সুনন্দা ঘোষের মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছিল। তাঁর স্বামী অমর ঘোষের যদিও এখনও খোঁজ নেই। মানকুরের বাসিন্দা ১৭ বছরের প্রীতম মান্নাও নিখোঁজ। এদিনও দিনভর রূপনারায়ণের জলে তল্লাশি চলে।