উলুবেড়িয়া: বউবাজারের সরকারি ছাত্রাবাসে গণপিটুনিতে মৃত্যুর ঘটনা মনে করিয়ে দিচ্ছে এনআরএস হাসপাতালের হস্টেলে সেই ভয়ঙ্কর দিনের কথা। আজ থেকে প্রায় ১০ বছর আগে। ২০১৪ সালের ১৬ নভেম্বর। ঠিক এরকমই চোর সন্দেহে পিটিয়ে খুন করা হয়েছিল কোরপান শাহকে। নীল রতন সরকার মেডিক্যাল কলেজের জুনিয়র ডাক্তারদের হস্টেলে। সেই ঘটনার পর থেকে অনেক মহল থেকে অনেক প্রতিশ্রুতি এসেছিল। কিন্তু জীবনের চলার পথে খুব একটা সুরাহা হয়নি কোরপানের স্ত্রী আর্জিনা বেগমের।
উলুবেড়িয়ার বানিতলায় বাড়িতে এখনও তাড়া করে বেড়ায় এক শূন্যতা। পাঁচ ছেলেমেয়েকে নিয়ে আনাজ বিক্রি করে সংসার চালান কোরপানের স্ত্রী। এককালে ছেলেমেয়েদের মুখে দু’বেলা খাবার তুলে দিতে বাড়ি বাড়ি ঘুরে ভিক্ষা পর্যন্ত করতে হয়েছিল তাঁকে। মাকে সংসার টানতে সাহায্য করতে দুই ছেলে বোতল-শিশি কোড়ায় রাজমিস্ত্রীর জোগাড়ের কাজ করে। বাকিদের মধ্যে এক ছেলে স্কুলে পড়ে ও দুই মেয়েকে মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়েছেন আর্জিনা। গণপিটুনিতে কোরপানের মৃত্যুর পর থেকে এইভাবেই কোনও রকমে জীবন-যুদ্ধের সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁর বাড়ির লোকজন। সরকারি সাহায্যও সেভাবে কিছুই মেলেনি বলে দাবি কোরপানের বড় ছেলের। বুক ভরা শূন্যতা নিয়ে বলছেন, ‘প্রথম দিকে সবাই আসছিল। কিন্তু এক দেড় মাস আসার পর, আর কেউই আসেনি।’
এখন আর কিছু সাহায্য পাওয়ার আশাটুকুও ছেড়ে দিয়েছেন কোরপানের স্ত্রী আর্জিনা বেগম। হতাশা ভরা গলায় বললেন, ‘এখন আর কাকে বলব? নিজের বলতে আর কে আছে? এখানে যে যার নিজেরটাই বোঝে, কেউ কারও কথা বোঝে না।’