হাওড়া: জেলায় জেলায় সমবায় দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে। এবার হুগলির সিঙ্গুরের গোপালনগরে খাসেরচক-চকগোবিন্দ সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতিতে দুর্নীতির অভিযোগ উঠল। অভিযোগ, এখানে প্রায় ২ কোটি ৩০ লক্ষ টাকার দুর্নীতি হয়েছে। তবে সমবায় মন্ত্রী অরূপ রায় জানান, অভিযোগ পেতেই কড়া পদক্ষেপ করেছে সমবায় দফতর। হুগলির ডেপুটি রেজিস্ট্রার অব কোঅপারেটিভ সোসাইটির অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয়েছে সমবায় সমিতির ম্যানেজার ও হিসাবরক্ষককে। একইসঙ্গে ‘অ্যাটাচ’ করা হয়েছে তাঁদের সম্পত্তি। অর্থাৎ চাইলেও নিজেদের সম্পত্তি বিক্রি করার অধিকার পাবেন না ধৃতরা। ওই সমবায়ের দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে বিশেষ অডিটও চলছে। অরূপ রায় বলেন, “ক্যাশিয়ার, ম্যানেজার ব্যাঙ্কে টাকা জমা দিতে গিয়েছিলেন। এরপর তাঁরা আর ব্যাঙ্কে টাকা জমা দেননি। সে কারণেই এই ঘটনা ঘটেছে। আমরা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিয়েছি। কেউ দুর্নীতি করলে, সে যত বড় ক্ষমতা সম্পন্নই হোক, কাউকে রেয়াত করা হবে না।”
রাজ্যের সমবায় দফতরের আওতায় রয়েছে ৩০ হাজার ৮১১টি সমবায় সমিতি। রয়েছে ৮৩টি সমবায় ব্যাঙ্ক। রাজ্যের বিভিন্ন সমবায় ব্যাঙ্ক থেকে প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছে। এর বাইরেও বিভিন্ন সমবায়ে টাকা জমা রাখেন কোটি কোটি মানুষ। সমবায়কে গ্রামবাংলার অর্থনীতির প্রাণশক্তি বলা হয়। সমবায়ের উপর নির্ভরশীল গ্রামের প্রান্তিক কৃষক থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মানুষ। চিটফান্ড কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে আসার পর বহু মানুষ আরও বেশি করে সমবায়মুখী হন। সেই সমবায়ে এবার একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে।
এ প্রসঙ্গে সমবায় মন্ত্রী অরূপ রায় বলেন, “যা যা ব্যবস্থা নেওয়ার সমবায় দফতর সব ব্যবস্থাই নিয়েছে। এরকম বহু ঘটনা রাজ্যে ঘটেছে অতীতে। বালি কোঅপারেটিভ ব্যাঙ্ক লাটে উঠে গিয়েছিল। দেউলিয়া হওয়ার অবস্থা। সেখান থেকেও ব্যাঙ্ককে ফিরিয়ে এনেছি। আজ ব্যাঙ্ক লাভ করছে। বীরভূমেও হয়েছে। আমরা সবসময় ব্যবস্থা নিই। কারণ, এটা মানুষের টাকা। তাই খুব সতর্কতার সঙ্গে আমরা চলার চেষ্টা করি।”
সমবায় মন্ত্রীর দাবি, সমবায় সমিতিতে ভোটাভুটির মাধ্যমে বডি তৈরি হয়। কোঅপারেটিভ ইন্সপেক্টর বা সিআই আছেন ব্লকে ব্লকে। ৮০০-র কাছাকাছি সিআই আছেন। মন্ত্রীর দাবি, প্রত্যেক কোঅপারেটিভ সোসাইটিতে নজরদারি চালাতে সিআইদের প্রতি ব্লকে আলাদা অফিসের পরামর্শও দেওয়া হয়েছে। কারণ, একটি ব্লকে একাধিক সমিতি থাকে। একইসঙ্গে মন্ত্রীর দাবি, সমবায় সমিতির অডিটের জন্য আলাদা অডিটর আছে এই বিভাগের। স্বচ্ছতা বজায় রেখেই সবসময় কাজে চেষ্টা করা হয় বলে দাবি অরূপ রায়ের।
যদিও কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুভাষ সরকারের বক্তব্য, “সিপিএমের শেষের সময় থেকে শুরু হয়েছিল। সমবায় দুর্নীতির ঐতিহ্যটা তৃণমূল সরকার নিয়ে নিয়েছে।” অন্যদিকে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, “যেমন করে সারদা, নারদ হয়েছে, এবার কোঅপারেটিভ নিয়েও ইডি সিবিআই আসবে। আজও পশ্চিমবঙ্গজুড়ে কোঅপারেটিভ লুঠ হচ্ছে।” যদিও তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষের বক্তব্য, চারপাশে ভাল কাজ হয়েছে। তবে কোথাও কোথাও অভিযোগ এসেছে।