বনগাঁ: বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অন্যতম জনপ্রিয় উপন্যাস ‘ইছামতী’। সেই উপন্যাসে নদীর যে বর্ণনা ছিল, যে স্রোতের কথা বিভূতিভূষণ বলেছিলেন, তা এখন কোথায়! ইছামতি দেখলে চেনাই দায়। স্রোত তো দূরের কথা, জলপ্রবাহই আটকে যায় কচুরীপানায়।
নদী নাকি সবুজ মাঠ, দেখে চেনা মুস্কিল। দীর্ঘদিন ধরে সেই কচুরিপানা সংস্কার না হওয়ার কারণে কবি বিভাষ রায় চৌধুরীর বক্রোক্তি করে বলছেন, হাইওয়ে হয়ে গেলে সুবিধা হয়। শুধু বদ্ধ জলই নয়, নদীর যে ঘাটগুলোর সিঁড়ি বাঁধানো, সেই ঘাটে মদের আসর বসছে প্রতিদিন সন্ধ্যায়। আর নদীর ভিতরে ঢুকে যাচ্ছে বড় বড় বাড়ি।
২০০০ সালের বন্যায় গোটা বনগাঁ শহর জলের তলায় চলে যাওয়ার ফলে দীনবন্ধু নগরের এই চত্বরে বাঁধ দিয়েছিল তৎকালীন পুরসভা। তাতে দীনবন্ধু নগরে জল ওঠা বন্ধ হলে আর বেশি করে নদী মজে যেতে শুরু করে। মশা, মাছি, সাপের উপদ্রব বাড়তেই থাকে নদীতে। নদীতে স্নান করার কথা ভাবাই যায় না, সাঁতার কাটা তো দূরের কথা! নৌকা চলাচলে উপায় নেই, ফলে নদীর ওপারে কলেজে যাওয়ার জন্য নৌকা পারাপার বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আর যেভাবে প্রতিনিয়ত মদের আসর বসছে তাতে যে কোনও দিন বিপদ ঘটতে পারে।
এলাকার সাধারণ মানুষজন আতঙ্কিত। যদিও বনগাঁ পুরসভার পুরপ্রধান গোপাল শেঠ জানিয়েছেন, তাঁদেরও নজরে এসেছে বিষয়টি। তিনি জানান, ওখানে কিছু বাইরের লোক সন্ধ্যার পরে যায় ও মদ্যপ অবস্থায় দেখা যায় তাঁদের। বনগাঁ থানাকে তিনি নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে প্রতিদিন ‘রেড’ চালানো হয়। কিন্তু ইছামতী নদী সংস্কারের দায় কেন্দ্রের উপরে চাপিয়েছেন তিনি।
বনগাঁর সাধারণ মানুষ বলছেন, কেন্দ্র-রাজ্য তরজা, ভোট রাজনীতিকে দূরে সরিয়ে রেখে আগামী প্রজন্মের স্বার্থে নদীকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে।