জলপাইগুড়ি: তাঁর মা কোনওদিন স্কুলে যাননি। তাঁর কোনওদিন কলেজের চৌকাঠ পার করা হয়নি। কিন্তু আজ তিনি IAS। কীভাবে তিনি এই অসাধ্য সাধন করলেন আগামীর IAS, IPS-দের স্যানসেটাইজেশন ওয়ার্কশপে গিয়ে নিজের জীবনের কথা অকপটে জানিয়ে গেলেন জলপাইগুড়ির জেলাশাসক সামা পারভিন।
জলপাইগুড়ি জেলা থেকে যারা IAS, IPS হওয়ার জন্য UPSC পরীক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করল জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসন। রাজ্য সরকারের সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর ইন্সটিটিউটের জলপাইগুড়ি শাখা মাধ্যমের দেওয়া হবে এই প্রশিক্ষণ। কীভাবে এই পরীক্ষায় বসতে হবে। পড়াশোনাই বা কীভাবে হবে সেইসমস্ত খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে বুধবার জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি কর্মশালার আয়োজন করা হয় জলপাইগুড়ি গভর্নমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে। শিবিরে এসেছিল জলপাইগুড়ি জেলার বিভিন্ন কলেজের মোট ২৬০ জন পড়ুয়া। তাঁরাই জেলার শীর্ষ আধিকারিকদের মুখ থেকে শুনে গেলেন তাঁদের জীবনের চড়াই উৎরাইয়ের গোপন কাহিনী। স্কিনিং টেস্টে পাশ করা প্রথম ৫০ জনকে এই সুযোগ দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
কর্মশালার উদ্বোধন করেন জলপাইগুড়ি জেলা শাসক সামা পারভিন। নিজের ‘স্ট্রাগল’ সম্পর্কে বলতে গিয়ে নস্ট্যালজিক হয়ে পড়েন তিনি। অত্যন্ত গরিব পরিবারের মেয়ে সামা। অত্যন্ত সাধারণ পরিবার থেকে উঠে এসেছেন তিনি। তাঁর মা কোনওদিন স্কুলে যাননি। তিনি উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার পর পরিবারের প্রয়োজনে রেলে চাকরি করা শুরু করেন। কিন্তু তার মাথায় চেপে বসেছিল উচ্চশিক্ষার ভূত।
চাকরি করতে করতে তিনি ডিসটেন্স কোর্সের মাধ্যমে পড়াশোনা এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন। এরপর তিনি UPSC পরীক্ষা দেন। সেখানেও সহজে সফলতা আসেনি। পরপর কয়েকবার পরীক্ষা দিয়ে তিনি সফল হন।
জয়শ্রী নাগ নামে এক ছাত্রী বলেন, “এই জাতীয় কর্মশালা আমাদের খুব কাজে লাগবে। বিশেষ করে যেইসব পড়ুয়া জেলার প্রত্যন্ত এলাকায় থাকে। আর্থিক অবস্থা খারাপ। মোটা টাকা খরচ করে IAS, IPS পরীক্ষার তালিম নিতে পারে না।”
জেলা শাসক সামা পারভিন বলেন, “গত বছর থেকেই এই ব্যবস্থা করা হচ্ছে সরকারি নির্দেশে। এবছরও বিনামূল্যে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।”
জলপাইগুড়ি গভর্নমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের অধ্যক্ষ অমিতাভ রায় বলেন, “এই স্টাডি সেন্টারের কাদের নেওয়া হবে, তার জন্য রাজ্য সরকারের তরফে আগামী ১১ তারিখ একটি স্কিন টেস্ট রাখা হয়েছে। টেস্টের আগে পড়ুয়াদের মোরাল বুস্টিং ও স্কিনিং টেস্ট এর বিষয়ে অবগত করার জন্য এই ওয়ার্কশপ।”
জেলা পুলিশ সুপার উমেশ খান্ডবাহালে জানান, সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর ইন্সটিটিউটের শাখা আগে কলকাতায় ছিল। এখন সমস্ত জেলাতেই স্টাডি সেন্টার করা হয়েছে। যাঁরা এই পরীক্ষায় বসতে চাইছে, তাদের এই স্টাডি সেন্টারের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এই বিষয়েই একটি ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠান করা হল।