Dhupguri By Election: ধূপগুড়িতে তৃণমূলের কেল্লাফতে, কেন হারল বিজেপি?
Dhupguri By Election: রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই জয় তৃণমূলের পায়ের তলার মাটি অনেকটাই শক্ত করল। উত্তরবঙ্গে চা বলয়ের জনতার রায় গেল রাজ্যের শাসকদলের পক্ষেই।

ধূপগুড়ি: বিজেপির ধূপগুড়ি ছিনিয়ে নিল তৃণমূল। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই জয় তৃণমূলের পায়ের তলার মাটি অনেকটাই শক্ত করল। উত্তরবঙ্গে চা বলয়ের জনতার রায় গেল রাজ্যের শাসকদলের পক্ষেই। গতবারের বিজয়ী বিজেপি এবার দ্বিতীয় স্থানে। আর বামেরা সেই তলানিতেই। ধূপগুড়িতে এবার মোট ৪৪২৬ ভোটে জয়ী হয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী নির্মল চন্দ্র রায়। তৃণমূল প্রার্থী নির্মল চন্দ্র রায়ের মোট ভোট ৯৬৯৬১। অন্যদিকে, বিজেপি প্রার্থী তাপসী রায়ের প্রাপ্ত মোট ভোট – ৯২৬৪৮। সিপিএম-কংগ্রেস জোট প্রার্থী ইশ্বর চন্দ্র রায় পেয়েছেন মোট ১৩৬৬৬ ভোট।
টানটান কাউন্টিং
উপনির্বাচনের দিনটা মোটের ওপর শান্তিতেই কাটিয়েছিল ধূপগুড়ি। সে অর্থে কোনও পক্ষই বড় কোনও অভিযোগও করেনি। কাট টু ফল ঘোষণা। সকাল থেকেই একই রকম শান্তি বজায় ছিল। নিজেদের জয়ের ব্যাপারে এক প্রকার নিশ্চিত ছিল বিজেপি। পোস্টাল ব্যালট পেপারের কাউন্টিংয়ে এগিয়ে ছিল বিজেপি। আর সেই জয়ের আভাস পেয়েই ক্যাম্পের বাইরে শুরু হয়ে গিয়েছিল মাংস-ভাত রান্না। কিন্তু তখনই তৃণমূল নেতা গৌতম দেব অবশ্য স্পষ্ট বলেছিলেন, বানারহাটে তারা কিছুটা দুর্বল। গণনা বানারহাট ছাড়িয়ে অন্যত্র গড়াতেই হিসাব মিলতে শুরু করল। ছবি বদলে গেল গণনার চতুর্থ রাউন্ডের পর থেকেই। এর পরের প্রত্যেকটা রাউন্ডই যেন নাটকীয়তায় ভরপুর। প্রত্যেকটি রাউন্ডের শেষেই একজন করে প্রার্থী এগিয়ে যাচ্ছেন তো পরের রাউন্ডে অপর জন টেক্কা দিচ্ছেন। হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলতে লাগল তৃণমূল-বিজেপির। তবে পঞ্চম রাউন্ডেই ক্লাইম্যাক্স! এরপর থেকে আর পিছতে হয়নি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলকে। নিয়ম মাফিক দশম রাউন্ড গণনার শেষে শেষ হাসি হাসল তৃণমূলই।
অগ্নিপরীক্ষায় জয়
পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর এবং লোকসভা নির্বাচনের আগে এই একটা উপনির্বাচনই কার্যত শাসক-বিজেপি উভয়ের কাছেই অগ্নিপরীক্ষার সামিল হয়ে দাঁড়িয়েছিল। দু’পক্ষরই বড় বড় নেতারা প্রচারে এসেছিলেন। তৃণমূলের সর্ব ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় গিয়ে পড়ে থেকেছেন ধূপগুড়িতে। তেমনই মাটি কামড়ে পড়ে থেকেছেন বঙ্গ বিজেপির সভাপতি ডঃ সুকান্ত মজুমদার। চা বলয় চষে বেরিয়েছিলেন রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও। প্রেস্টিজ ফাইট বলে কথা! কিন্তু এরই মধ্যে বিরাট টুইস্ট- একদা তৃণমূল বিধায়ক মিতালি রায় অভিষেকের সভামঞ্চে থেকে নামার ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে হাতে তুলে নিলেন পদ্ম পতাকা। চমক তো বটেই, তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কথায়, এই দলবদল উপ নির্বাচনের আগে খেলা ঘুরিয়ে দেওয়ার মতো যথেষ্ট বড় ফ্যাক্টর! আর তা যে বিজেপির বিরুদ্ধে গিয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ফলাফল দেখে শুনে অনেকেই বলছেন, অনন্ত মহারাজ, মিতালি রায়ের যোগদান বিজেপিকে রাজবংশী ভোটের প্রশ্নে বাড়তি সুবিধা তো দিলই না বরং এক রকম ডুবিয়েই দিল।
গত বিধানসভার নিরিখে…
বিষ্ণুপদ রায়ের মৃত্যুর কারণেই এই উপনির্বাচন। পরিসংখ্যান বলছে, ধূপগুড়ি বিধানসভার ২৬০ টি বুথে মোট ভোট পড়েছে ৭৮.১৯ শতাংশ। ভোটের হারের বিচারে তা ২০১৬ এবং ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনের তুলনায় অনেকটাই কম। ২০১৬ ভোট পড়েছিল ৮৮ শতাংশ। আবার ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৮৭ শতাংশ।
গত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি জয়ী হয়েছিল। ৪৩৫৫ ভোটে জয় পায় বিজেপি। ১ লক্ষ ৩৩৩ ভোট পেয়েছিল তৃণমূল। বিজেপি পেয়েছিল ১,০৪,৬৮৮ ভোট। কিন্তু উপনির্বাচনে আর সেই জয়ের ধারা ধরে রাখতে পারল না বিজেপি।
কেন মাটি হারাল বিজেপি?
বিজেপির পরিষদীয় দলের সূত্র বলছে, বানারহাটকে টার্গেট করেছিল বিজেপি। মনোজ টিগ্গাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি সঙ্গে নেন নগরাকাটার বিধায়ক পুনা ভেংরাকে। দু’জনে মিলে চা বলয় চষে ফেলেন। সংগঠনও মজবুত করেন। এদিন গণনার প্রথম কয়েক রাউন্ডে তার প্রভাবও প্রতিফলিত হয়েছে। কিন্তু বানারহাট থেকে বেরোতেই খেলা ঘুরতে শুরু করেছে। বিজেপি সদ্য প্রয়াত বিধায়কের আবেগ, সহানুভূতি কোনওটাই কাজে আসেনি এই ভোটে। তবে বিশ্লেষকরাই বলছেন, ক্লিন বোল্ড কিংবা মসৃণ জয় পেয়েছে তৃণমূল, তেমনটাও কিন্তু বলা যাবে না। কাঁটায় কাঁটায় লড়াই চলেছে। এদিকে, পরাজিত বিজেপি প্রার্থী তাপসী রায় বলেছেন, “মানুষের রায় মেনে নিতেই হবে। ”
‘ইন্ডিয়া জোটের বড় জয়’
দলীয় প্রার্থী নির্মলচন্দ্র রায় জয়ী হতেই ধূপগুড়িতে সবুজ আবিরের ঝড়। চলছে মিষ্টি বিতরণ। দলের সেকেন্ড-ইন-কম্যান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় টুইট করে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, “‘ঘৃণা এবং ধর্মান্ধতার রাজনীতির বদলে উন্নয়নের রাজনীতি গ্রহণ করেছেন ধূপগুড়ির মানুষ। তার জন্য ধন্যবাদ।”
Thank you #Dhupguri, for embracing the politics of development over hatred and bigotry. Saluting every AITC worker for their tireless efforts in connecting with the people. We’re committed to leaving no stone unturned in ensuring Dhupguri’s all-round development. 🙏🏻
জয় বাংলা 💪🏻
— Abhishek Banerjee (@abhishekaitc) September 8, 2023
জনসংযোগের জন্য তৃণমূল কর্মীদের স্যালুট জানান তিনি। দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ” আমি ধূপগুড়ির মানুষকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। চা বাগান থেকে রাজবংশী, সবাই যেভাবে তৃণমূলকে সমর্থন করেছেন, তার জন্য ধন্যবাদ। বিজেপির একটা শক্ত ঘাঁটি। বিজেপির মন্ত্রীরা সব ওখানে পড়েছিলেন। উত্তরবঙ্গের বড় জয়। সারা ভারতে নির্বাচন হয়েছে। উত্তর প্রদেশের মত জায়গাতে বিজেপি হেরেছে। ত্রিপুরায় কাউকে লড়তে দেয়নি। ইন্ডিয়া জোটের বড় জয়।”
তৃণমূলের সাকসেসমন্ত্র
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আসলে বিজেপির ‘বঙ্গ ভঙ্গ’ ইস্যুই ব্যুমেরাং হয়েছে। এই বিষয়টিকেও কাজে লাগাতে পেরেছে তৃণমূল। এলাকার উন্নয়নের পাশাপাশি আবেগকেও কাজে লাগাতে পেরেছে।
উল্লেখ্য, একুশের বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে একটি উপনির্বাচনেও জয় পায়নি বিজেপি। বিধানসভা ভোটে জেতা দিনহাটা আর শান্তিপুরে উপনির্বাচনে হার হয়। ধূপগুড়িতেও মুখ রক্ষা হল না।
