Jalpaiguri: লাশের পাহাড়! মর্গে জমে ১৩০ বেওয়ারিশ দেহ, দুর্গন্ধে টিকতে পারছেন না চিকিৎসকই

Nileswar Sanyal | Edited By: Soumya Saha

Jun 26, 2023 | 9:12 PM

Jalpaiguri: মর্গে হিসেব মতো ২৮টি দেহ রাখার জায়গা রয়েছে। আর দেহ জমে রয়েছে প্রায় ১২০-১৩০টি। ভাবুন অবস্থা! মরা-পচা গন্ধ লাশ ঘরের ধারেকাছে ঘেঁষাটাই দুষ্কর হয়ে উঠেছে।

Jalpaiguri: লাশের পাহাড়! মর্গে জমে ১৩০ বেওয়ারিশ দেহ, দুর্গন্ধে টিকতে পারছেন না চিকিৎসকই
প্রতীকী ছবি
Image Credit source: টিভি নাইন বাংলা

Follow Us

জলপাইগুড়ি: জলপাইগুড়ি মেডিক্যাল কলেজ। জেলার সরকারি স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর এক অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। কিন্তু সেখানে মর্গের হাল এমন, যে কোনও সাধারণ মানুষ তো দূরের কথা, চিকিৎসক, ডোম কিংবা অন্য স্বাস্থ্যকর্মীরাও সেখানে ঢুকতে গেলে আতঙ্কে ভোগেন। মর্গে পাঁচটা এসি রয়েছে। কিন্তু জানা যাচ্ছে, সবক’টিই বিকল। আর ভিতরে জমে রয়েছে লাশের পাহাড়। পাহাড়ই বটে। মর্গে হিসেব মতো ২৮টি দেহ রাখার জায়গা রয়েছে। আর দেহ জমে রয়েছে প্রায় ১২০-১৩০টি। ভাবুন অবস্থা! মরা-পচা গন্ধ লাশ ঘরের ধারেকাছে ঘেঁষাটাই দুষ্কর হয়ে উঠেছে। অভিযোগ উঠছে, অন্তত ২০১৮ সাল থেকে বেওয়ারিশ লাশ জমে রয়েছে সেখানে। আর সেই জমে থাকা লাশের পাহাড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে ম্যাগট পোকা।

পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে হাসপাতালের ফরেন্সিক বিভাগের চিকিৎসক নিজেই সেখানে টিকতে পারছেন না। দিনের পর দিন এভাবে সেখানে কাজ করতে হচ্ছে তাঁকে। তাই আজ একপ্রকার বাধ্য হয়েই ময়নাতদন্ত বন্ধ করে দেওয়া হল। চিকিৎসকের বক্তব্য, এমন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কাজ করা সম্ভব হয়ে উঠছে না। এই জলপাইগুড়ি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ফরেন্সিক বিভাগে কর্মরত রয়েছেন চিকিৎসক ভাস্বর ভট্টাচার্য। একে তো দম-বন্ধ হওয়া বিকট গন্ধ, তার উপর পোকায় ভর্তি… পরিস্থিতি এমন যে আজ ময়নাতদন্তই করতে পারলেন না তিনি।

কেন এমন হল, কী সমস্যা… জানতে যোগাযোগ করা হয়েছিল ওই চিকিৎসকের সঙ্গে। তিনিও জানালেন, মর্গে এমন লাশও রয়েছে যেগুলির ২০১৮ সাল থেকে ময়নাতদন্ত হয়ে পড়ে রয়েছে। দেহ নিতে কেউ আসেননি। সেই বেওয়ারিশ লাশের কোনও ব্যবস্থাই এখনও করা হয়নি। চিকিৎসক জানালেন, সাধারণত একটি-দুটি দেহ পড়ে থাকলেই অস্বাস্থ্যকর পরিস্থিতি তৈরি হয়… আর সেখানে ১২০-১৩০টি বেওয়ারিশ লাশ পড়ে রয়েছে। ফলে পরিস্থিতি যে কতটা অস্বাস্থ্যকর, তা আর আলাদা করে বলার প্রয়োজন পড়ে না। এমন অবস্থায় শুধু ডোমরাই নন… মৃতের পরিবারের লোকজন, যাঁরা দেহ শনাক্ত করতে মর্গে ঢোকেন, তাঁদের শরীরেও সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থেকে যায়। বললেন, ‘আমরা ডাক্তাররা তো কাজ করছিই, কিন্তু সবারই তো একটা লিমিট আছে!’

চিকিৎসক ভাস্বর ভট্টাচার্য আশঙ্কার সুরে জানালেন, এই পরিস্থিতি যদি দিনের পর দিন চলতে থাকে, তাহলে চিকিৎসকদেরও সংক্রমিত হয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। আর এই অস্বাস্থ্যকর পরিস্থিতি থেকে নিস্তারের জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে স্থানীয় প্রশাসনকে জানানোও হয়েছিল। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনও সুরাহা হয়নি। এদিকে আজ মর্গের ময়নাতদন্ত বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে বিপাকে পড়েছেন মৃতের পরিজনরাও। মৃত এক ব্যক্তির পরিজন সুরেশ লাকরা জানাচ্ছেন, তাঁরা দেহ নিয়ে যেতে এসেছিলেন। কিন্তু ডাক্তারবাবু ময়নাতদন্ত বন্ধ রাখার ফলে, দেহ পাচ্ছেন না তাঁরা।

শুধু এই হাসপাতালই নয়, মর্গের অদূরেই রয়েছে জলপাইগুড়ির টিবি হাসপাতাল। সেখানেও অনেক রোগী ভর্তি থাকেন। আবার দশতলা জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালেও কয়েক হাজার রোগী প্রায় সর্বক্ষণই থাকেন। এছাড়া বহির্বিভাগের পরিষেবা তো রয়েছেই। সেখানেও কয়েক হাজার রোগীর ভিড়। তাঁদেরও সংক্রমিত হয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকছে। মর্গের থেকে লোকালয় যদিও বেশ কিছুটা দূরে। কিন্তু সেখানকার বাসিন্দারাও একেবারে নিশ্চিন্ত থাকতে পারছেন না।

এদিকে হাসপাতালের মর্গের এই বেহাল দশা নিয়ে যোগাযোগ করা হয়েছিল জলপাইগুড়ির জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসুর সঙ্গে। তিনি অবশ্য আশ্বস্ত করেছেন বিষয়টি নিয়ে পুলিশ ও পুরসভার সঙ্গে যোগাযোগ করছেন তিনি।

Next Article