জলপাইগুড়ি: চক্ষু বিশেষজ্ঞের চেয়ারে বসে রোগী দেখছেন স্বাস্থ্যকর্মী! অবাক করা চিত্র জলপাইগুড়ি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের উত্তরবঙ্গ সফরের মাঝেই এই দৃশ্য ধরা পাড়ায় বিতর্ক দানা বেঁঁধেছে। জলপাইগুড়ি মেডিক্যাল কলেজের চক্ষু বহির্বিভাগে অন্যান্য দিনের মতোই ভিড় ছিল বৃহস্পতিবার সকালে। সপ্তাহs ৬ দিন এখান থেকে পরিষেবা পান সাধারণ মানুষ। ৩ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক গঙ্গোত্রী বাড়ুই, তপন অধিকারী এবং শিশির মণ্ডল। সপ্তাহে দু’দিন রোটেশন করে এই বিভাগ সামলান।
মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার চিকিৎসক গঙ্গোত্রী বাড়ুইয়ের ডিউটি ছিল। তিনি অসুস্থ থাকায়, এদিন অনুপস্থিত ছিলেন। এদিকে , সকাল থেকেই উপচে পড়েছিল রোগীর ভিড়। দেখা যায়, যিনি এই চক্ষু বহির্বিভাগের স্বাস্থ্য কর্মী, তিনিই রোগীকে পরিষেবা দিচ্ছেন। চোখের পাওয়ার দেখছেন। আজ তিনিই একবার তাঁর নিজের ঘর সামলাচ্ছেন। আবার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের চেয়ারে বসে চিকিৎসকের দায়িত্বও সামলাচ্ছেন। পাশাপাশি ওষুধ লিখে দিচ্ছেন পরিষেবা দিতে আসা রোগীদের।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় বৃহস্পতিবার অনেকেই দূরদুরান্ত থেকে এসেও ফিরে গিয়েছেন। অনেকে সব জেনে শুনেও একপ্রকার বাধ্য হয়ে পরিষেবা নিয়ে গিয়েছেন। স্বাস্থ্যকর্মীকে দিয়েই চোখ দেখিয়ে নিয়েছেন।
চোখ দেখাতে প্রায় ৫০ কিলোমিটার পথ উজিয়ে ধূপগুড়ি নাথুয়া থেকে জলপাইগুড়ি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়েছিলেন মুজিবুর রহমান। তিনি অবশ্য স্বাস্থ্য কর্মীকে দিয়ে চোখ দেখাতে বিশেষ ভরসা করলেন না। তিনি বলেন, “এখানে আজ ডাক্তার নেই। যিনি স্বাস্থ্য কর্মী তিনিই আজ ডাক্তার। এভাবে চোখ দেখালে আমরা অন্ধ হয়ে যেতে পারি। তাই আজ ফিরে যাচ্ছি।”
ছানি অপারেশনের পর চেকাপে গিয়েছিলেন পেশায় দিনমজুর সমিজুদ্দিন মহম্মদ। তিনিও এমনিই ফিরে গেলেন। বললেন, “আজ ডাক্তার নেই। তাই চেকাপ করাতে পারলাম না। আমি দিনমজুর। কাজ ফেলে এসেছিলাম। লস হয়ে গেল।”
সঞ্জয় রায় নামে এক রোগী জানালেন, “বাধ্য হয়ে যিনি চোখের পাওয়ার দেন তাকেই দেখিয়ে বাড়ি ফিরছি। ওঁ ওষুধ লিখে দিয়েছেন। এখন সেগুলো কিনে নেব।”
এই বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হয়েছিল জলপাইগুড়ি মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডাক্তার প্রবীর কুমার দেবের সঙ্গে। তিনি জানিয়েছেন, এই বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। বিষয়টি নিয়ে খোঁজ নিচ্ছেন।
জলপাইগুড়ি মেডিক্যাল কলেজের এমএসভিপি কল্যাণ খান বলেন, “আমাদের রোগীর তুলনায় পর্যাপ্ত চিকিৎসক নেই। বিভাগে সিনিয়র রেসিডেন্ট, হাউসস্টাফ ছাড়া ছ’জন প্রফেসর, অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর, অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর পদমর্যাদার চিকিৎসক থাকার কথা। সেই জায়গায় চারজন চিকিৎসক রয়েছেন। তার মধ্যে দু’জন চোখের আলোর অস্ত্রোপচারে ছিলেন। একজন মালবাজারে ডিপ্লয়মেন্টে রয়েছেন। তাই অসুস্থ চিকিৎসকের পরিবর্তে অন্য কোনও চিকিৎসককে ওপিডিতে পাঠানো সম্ভব হয়নি।”