জলপাইগুড়ি: নকশাল করলে জল পাবে না, এই জাতীয় উল্টোপাল্টা কথা আর যেনো না শুনি। কানু সান্যালের গ্রামের জল প্রকল্প রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদার নারায়ণ ঘোষকে ডেকে সতর্ক করলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি আরও বলেন, কে বিজেপি কে নকশাল আমি তা বুঝি না। আমি বুঝি আমরা সবাই এই রাষ্ট্রের মানুষ। তাই সবার সমান অধিকার আছে। এরপরই নির্দেশের সুরে বলেন, জানুয়ারি মাসে প্রকল্প শেষ হওয়ার পরেও যদি নকশালবাড়ির সেবদুল্লা গ্রামের বাড়িগুলিতে পানীয় জল না পৌঁছয় তাহলে কত কড়া পদক্ষেপ হবে তা আপনারা ভাবতেও পারছেন না। এ ভাষাতেই এদিন জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর সহ সরকারি আধিকারিকদের সতর্ক করলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। আগামী ফেব্রুয়ারিতে মামলার ফের শুনানি রয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।
সোজা কথায়, টানা তিনদিন হাইকোর্টে শুনানির পর অবশেষে স্বস্তি পেতে চলেছেন কানু সান্যালের গ্রামের বাসিন্দারা। এদিন মামলার শুনানিতে আদালতে উপস্থিত হয়েছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চের অ্যাডিশনাল অ্য়াডভোকেট জেনারেল জয়জিৎ চৌধুরী। সূত্রের খবর, বুধবার শুনানি চলাকালীন তিনি বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে আশ্বস্ত করেন। জানান আগামী জানুয়ারি মাসের মধ্যে ওই এলাকায় পানীয় জলের সমস্যা মিটিয়ে দেওয়া হবে। সেই লক্ষে ওই এলাকায় দ্রুত কাজ চলছে।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সাল থেকে শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের নকশালবাড়ি ব্লকের হাতিঘিষা গ্রাম পঞ্চায়েতের সেবদুল্লা গ্রামে জলকষ্ট চলছিল। সমস্যা মেটাতে কেন্দ্রীয় সরকারের জল জীবন প্রকল্পে গ্রামে কাজ শুরু হয়। অভিযোগ প্রকল্প চালু হলেও সেবদুল্লা গ্রামের ১০৭ টি পরিবার জল পাচ্ছেন না। সমস্যা মেটাতে গ্রামের বাসিন্দা তথা বিশিষ্ট নকশাল নেতা দিপু হালদার, শান্তি নাগাসিয়া, ছোটন মুন্ডা সহ সেবদুল্লা গ্রামের ১০ জন বাসিন্দা কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। প্রসঙ্গত, বিশিষ্ট নকশাল নেতা কানু সান্যালের নামেই পরিচিতি রয়েছে এই গ্রামের।
সোমবার মামলাটি উঠেছিল কলকাতা হাইকোর্টের জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে। মঙ্গলবার চলে শুনানি। শুনানি চলাকালীন সময়ে বিচারপতি শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের AEO, PHE ইঞ্জিনিয়ার, জল প্রকল্প মেইনটেনেন্স ঠিকাদার নারায়ণ ঘোষকে তলব করেন তিনি। বুধবার আসতে বলা হয় আদালতে। নির্দেশ মেনে সকলেই এদিন এসেছিলেন বলে জানা যাচ্ছে। আগেরদিনের মতো এদিনও আধিকারিদের চেয়ারে বসেই মামলা শুনতে দেখা যায় বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়কে। সবপক্ষের বক্তব্য শোনার পর দেন বড় নির্দেশ।
অভিযোগকারীদের আইনজীবী সন্দীপ মণ্ডল বলেন, হতদরিদ্র মানুষগুলো এতদিন পরিষেবা পায়নি বলেই আদালতে এসেছে। আগামী বছরের জানুয়ারির মধ্যে কাজ শেষ হবে বলে জানতে পারছি। ফের ফেব্রুয়ারিতে মামলার শুনানি রয়েছে। অ্যাডিশনাল অ্যাডভোকেট জেনারেল জয়জিৎ চৌধুরী বলেন, ওই গ্রামের প্রতিটি মানুষকে পানীয় জল দিতে আমরা দায়বদ্ধ। সেইজন্য ওই গ্রামে দ্রুত কাজ চলছে। আমরা আদালকে আজ সেই কথা জানিয়েছি। আমরা জানুয়ারী মাসের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করব।