জলপাইগুড়ি: নাহ! শেষরক্ষা হল না। স্ত্রীকে বাঁচাতে পারলেন না প্রবীর। সুন্দরবনে বাঘের ভয়। পাছে বাঘের আক্রমণে প্রাণ চলে যায় সেই কারণে পরিবার সমেত সুন্দরবন ছেড়ে জলপাইগুড়ি তিস্তা পাড়ে এসেছিলেন প্রবীর মণ্ডল ও তাঁর স্ত্রী সন্ধ্যা মণ্ডল। এখানে এসে বাদাম তোলার কাজ করতেন। কিন্তু এখানে এসেও শেষ রক্ষা হল না। হাতির হামলায় মৃত্যু হল প্রবীরের স্ত্রী সন্ধ্যারানির। জানা গিয়েছে, সন্ধ্যা ও প্রবীর উত্তর ২৪ পরগনার হিঙ্গলগঞ্জের বাসিন্দা।
গত দু’দিন আগে সুন্দরবন থেকে স্বামীর সঙ্গে বাদাম তোলার কাজে করতে জলপাইগুড়ি পাতকাটা গ্রামপঞ্চায়েতের ঠেঙ্গি পাড়ায় এসেছিলেন সন্ধ্যা দেবী। সঙ্গে ছিল তাঁদের সন্তানরাও। শুধু এই পরিবার নয়। হিঙ্গলগঞ্জ থেকে এসেছিলেন মোট ১২ জন। এরা সবাই মিলে তিস্তাপাড়ে একটি ঘরে থেকে বাদাম তোলার কাজ করছিলেন।
জানা গিয়েছে, শুক্রবার সন্ধ্যায় বৈকন্ঠপুরের জঙ্গল থেকে বেরিয়ে তিস্তা নদীর চরে এক দল হাতি হামলা চালায়। বেশ কয়েকটি বাড়ি ভাঙচুর চালায় তারা। গ্রামবাসীদের সঙ্গে মিলে প্রথম দফায় তারা হাতির দলকে তাড়িয়েও দেন। কিন্তু এরপর রাত দেড়টা নাগাদ ফের একটি মস্ত বড় দলছুট বুনো দাঁতাল আসে। ওই ঘরে হামলা চালায়।
গভীর রাতে সেই সময় সকলে ঘুমিয়ে ছিলেন। ঘর ভাঙার শব্দে যে যার মতো প্রাণ বাঁচাতে এদিক ওদিক ছুটে যান। কিন্তু পালাতে পারেননি সন্ধ্যাদেবী। হাতি তাঁকে শুঁড়ে পেঁচিয়ে আছাড় মারে। পরে তাঁকে উদ্ধার করে জলপাইগুড়ি মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে এলে সেখানে চিকিৎসকেরা মৃত বলে ঘোষণা করে।
মৃতার স্বামী প্রবীর মণ্ডল বলেন, “আমরা সুন্দরবন এলাকার বাসিন্দা। ওখানে প্রচণ্ড বাঘের হানা হয়। তাই আমার ভাইপোর কথা মতো আমরা রুজিরোজগার করতে গত দু দিন আগে জলপাইগুড়ি এসেছি। এখানে তিস্তা নদীর পারে বাদাম তোলার কাজ করছিলাম। কিন্তু গতকাল রাতে হাতি এসে হামলা চালালো আমাদের ঘরে। প্রাণ বাঁচাতে এদিক ওদিক ছুটে বেরিয়ে গেলাম। কিন্তু আমার স্ত্রী হাতির সামনে পড়ে যায়। এরপর হাতিটি আমার স্ত্রীকে শুঁড়ে পেঁচিয়ে আছাড় মারে।”
পঙ্গজ জোয়ারদার নামে অপর এক ব্যাক্তি বলেন,”আমরা হিঙ্গলগঞ্জ থেকে মোট ১২ জন এসেছি। কিন্তু এমন ঘটনা ঘটবে তা কখোনও ভাবিনি।”
ডিএফ ও বিকাশ বিজয় টেলিফোনে জানিয়েছেন,”মর্মান্তিক ঘটনা। বনদফতর এই পরিবারের পাশে অবশ্যই দাঁড়াবে। ওই মহিলা উত্তর ২৪ পরগনা থেকে জলপাইগুড়ি এসেছিলেন। হাতির হানায় মৃত্যু হয়েছে তাঁর। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী এই পরিবার ৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ সহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা পাবেন। ওনাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট সহ প্রয়োজনীয় নথি বনদফতরে জমা করতে বলা হয়েছে।”